লকডাউনে এলেন পর্যটকঃ উচ্ছ্বাস জলদাপাড়ার পর্যটন ব্যবসায়ীদের

লকডাউনে দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া ডুয়ার্সের পর্যটন মহলে তাই খুশির হাওয়া ছড়িয়েছে।

June 15, 2020 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

 কে বলে বাঙালি ঘরকুনো? থাকুক না লকডাউন, কিংবা করোনা সংক্রমণের ভয়। সুযোগ পেলেই ঘুরতে বেরিয়ে যায় ভ্রমণপিপাসু বাঙালি। রবিবার তার প্রমাণও মিলল। গত ৮ তারিখ রাজ্য সরকার লজ, হোটেল ও রিসর্ট খোলার অনুমতি দিয়েছে। সরকার অনুমতি দিতেই উত্তর ২৪ পরগনার জগদ্দল ও কলকাতা থেকে রবিবার একদল পর্যটক বৃষ্টিভেজা জলদাপাড়ার জঙ্গল দেখতে মাদারিহাটে চলে এসেছেন। সেই অর্থে দীর্ঘদিন পর এদিন থেকেই ডুয়ার্সের জঙ্গলে পর্যটক আসা শুরু হল। লকডাউনে দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া ডুয়ার্সের পর্যটন মহলে তাই খুশির হাওয়া ছড়িয়েছে।

করোনা সংক্রমণের ভ্রূকুটিকে উপেক্ষা করেই এদিন মাদারিহাটে আসেন জগদ্দলের দু’টি পরিবারের ১১ জন সদস্য। তাছাড়াও আসেন কলকাতার গড়িয়ার এক বাসিন্দা। ডুয়ার্সের জঙ্গল ও বন্যপ্রাণী দেখতে তাঁরা সকলেই জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের গা ঘেঁষে থাকা মাদারিহাটের একটি বেসরকারি রিসর্টে উঠেছেন।

কলকাতা থেকে নিজেদের ব্যক্তিগত গাড়িতেই পর্যটকরা এদিন সাতসকালে মাদারিহাটে এসে পৌঁছন। রিসর্টে লাগেজ রেখেই তাঁরা ঝিরঝিরে বৃষ্টির মধ্যেই জলদাপাড়ার জঙ্গল ঘুরতে বেড়িয়ে পড়েন।

জগদ্দলের বাসিন্দা অশোক মৈত্রের মাছের ভেঁড়ি রয়েছে। অশোকবাবু বলেন, দীর্ঘ লকডাউনে হাঁফিয়ে উঠেছিলাম। একটু মুক্ত বাতাসের জন্য মন ছটফট করছিল। তাই ৮ জুন থেকে রিসর্ট, লজ খোলার খবর পেতেই দেরি না করে বুকিং করে ফেলি। পরিবার নিয়ে চলে এলাম। ক’দিন এখানে কাটাব।

জলদাপাড়ার পর্যটক

অশোকবাবুর বন্ধু দেবরাজ সিং পেশায় মুম্বইয়ের একটি হোটেল ম্যানেজারের চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন। তিনি বলেন, আমার ছোটবেলা থেকেই বেড়ানোর অভ্যাস রয়েছে। সময় পেলেই এদিক ওদিক ঘুরতে যাই। টানা প্রায় তিনমাস হতে চলল লকডাউন চলছে। বাড়িতে থাকতে আর ভালো লাগছিল না। লকডাউন শিথিল হতেই যানবাহন চলাচলে ছাড় মেলে। তাই সুযোগ আসতেই বন্ধুর পরিবারের সঙ্গে নিজের পরিবার নিয়ে ডুয়ার্সে চলে এলাম।

দেবরাজ সিংয়ের পুত্রবধূ সুমনা সিং বলেন, আমরা তো কেউ করোনা আক্রান্ত নই। আমরা সকলেই সুস্থ আছি। তাহলে বাড়ির চার দেওয়ালে আটকে থাকব কেন? তাছাড়া করোনা সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচতে সব ধরনের সুরক্ষা ও সাবধানতা নিয়ে চললে বাইরে আসা যেতেই পারে।

জলদাপাড়ার জঙ্গল লাগোয়া ওই রিসর্টের আতিথেয়তা ও করোনার বিরুদ্ধে যাবতীয় স্যানিটাইজিং ব্যবস্থায় খুশি ওই পর্যটকরা। অশোকবাবু বলেন, গুগল সার্চ করে এই রিসর্টের স্যানিটাইজিং ব্যবস্থা দেখে ভালো লেগেছিল। তারপ঩রেই অনলাইনে রুম বুক করি।

এদিন সকালে বেসরকারি ওই রিসর্টে ঢোকার আগে পর্যটকদের রীতিমতো থার্মাল স্ক্রিনিং ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। করোনা আবহে খাবার নিয়ে যাতে বাইরের পর্যটকদের মনে কোনওরকম ভয়-দ্বিধা না থাকে তারজন্য রিসর্টেই রান্নার ব্যাবস্থা করা হয়েছে। তাতে পর্যটকরা আরও খুশি।

এদিন পর্যটকরা আসার পর মাদারিহাটের পর্যটন ব্যবসায়ীরা লকডাউনের পর নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর আশা দেখছেন। লকডাউনের জন্য ডুয়ার্সের পর্যটন অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে। এবার তাঁদের আশা, ধীরে ধীরে তাঁরা স্বাভাবিক পথে এগচ্ছেন। ওই রিসর্টের মালিক বিশ্বজিৎ মাইতি জলদাপাড়া লজ ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদকও। তিনি বলেন, দক্ষিণবঙ্গ থেকে পর্যটকরা আসার পর অক্সিজেন পেলাম। মনে হচ্ছে, এবার আমরা ঘুরে দাঁড়াতে পারব।  

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen