চেয়েছিলেন কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো, পেলেন গীতা
গড়িয়ার সুতীর্থ দাসের কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো কিনে পড়ার ইচ্ছে হয়েছিল। সেই মতো একটি ই-কমার্স সংস্থাকে অনলাইনে অর্ডারও দিয়েছিলেন তিনি। তার বদলে যে বই তিনি শনিবার হাতে পেলেন, সেই বইয়ের কথা কমিউনিস্টদের ইস্তাহারে বলা কথার একেবারে উল্টো। ভাগবত গীতা! বহু মানুষ যাকে ধর্মগ্রন্থ হিসেবে গণ্য করেন। মহাভারতে কুরুক্ষেত্র যুদ্ধর ঠিক আগে অর্জুনকে কৃষ্ণ যে সব কথা বলেছিলেন, সেই সব বাণীর সঙ্কলনকেই গীতা বলা হয়। আবার কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো ধর্মকে আফিম হিসেবে গণ্য করে, ধর্মকে পুরোপুরি অস্বীকার করে।
অদ্ভুত সমাপতন! এমন কাণ্ড ঠিক তখনই ঘটল, যখন আসামে কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো রাখা আর ‘লাল সেলাম’ বলার কারণে গ্রেপ্তারি পর্যন্ত হয়েছে।
বহু দিন ধরে মার্কসীয় বইপত্র নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করা প্রসেনজিৎ পাল এই ভাবে বই বদলানোর ঘটনা শুনে হাসবেন না কাঁদবেন, তা ঠিক করে উঠতে পারছিলেন না। প্রসেনজিতের কথায়, ‘কার্ল মার্কসের জন্মের পর ২০০ বছর পেরিয়ে গিয়েছে। প্রতিষ্ঠিত বামেরা তো অনেক দিনই মার্কসকে বাদ দিয়েছিলেন। ভুলবশতই হোক বা দুর্ঘটনা, যে কোনও কারণে এ বার কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টোরও এ ভাবে গঙ্গাপ্রাপ্তি হতে পারে!’
বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে ও বই বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যাচ্ছে, অন্য বহু দেশের মতো ভারতেও কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টোর চাহিদা খুবই উঁচুতে। নানা ভাষায় অনূদিত কমিউনিস্ট ইস্তাহারের বিক্রিও যথেষ্ট। ন্যাশনাল বুক এজেন্সির প্রকাশক অনিরুদ্ধ চক্রবর্তী বলেন, ‘সারা বছরই কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টোর বিক্রি সমান তালে হয়, ভালোই হয়।’
আবার গীতার বিক্রিও কম নয়। বরং, দিনকে দিন তা ঊর্ধ্বমুখী। ফলে, সব মিলিয়ে এমন বকচ্ছপ পরিস্থিতিতে অনেকে সুকুমার রায়ের হয়বরল-র কথাই বার বার বলছেন।
বেসরকারি সংস্থার কর্মী সুতীর্থ দাস কিছু দিন আগে কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টোর ইংরেজি সংস্করণের অর্ডার দেন। শনিবার সেই বই পৌঁছবে বলে ই-কমার্স সংস্থাটির তরফে তাঁকে জানানো হয়। স্ত্রীকে ওই পার্সেল রাখার কথা বলে সুতীর্থ অফিস চলে যান। সুতীর্থর কথায়, ‘শনিবার বেলা সাড়ে ১১টা-১২টা নাগাদ আমাকে ওই সংস্থার তরফে এক মহিলা ফোন করে জানান, ভুল করে কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টোর বদলে আমার বাড়িতে গীতা পাঠানো হয়েছে। আমি যেন সেটা গ্রহণ না-করি।’ কিন্তু সুতীর্থ সেই বই গ্রহণ করেছেন। বাড়ি ফিরে তিনি পার্সেল খুলে দেখেন, ভাগবত গীতার একটি ইংরেজি সংস্করণ সেখানে রয়েছে। অথচ বিল-পার্সেল বক্স— সবেতেই কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো-র উল্লেখ। সুতীর্থ বলছেন, ‘দু’টোই তো বই। গীতা থাকুক। কমিউনিস্ট ইস্তাহার না-হয় পরে আনিয়ে নেব।’
সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘কী কারণে বই বদলে গেল, তা তো জানি না।’ তবে তাঁর কথায়, ‘যদি এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়, তা হলে বলতে হবে, অন্য কিছু দেশের মতো কমিউনিজমের ভূত দেখার প্রবণতা ভারতেও শুরু হয়েছে। এটা অবশ্য জানা দরকার, কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো শুধুই কমিউনিস্টদের জন্য প্রয়োজনীয়, তা নয়। সামগ্রিক ভাবে সমাজকে জানা ও চেনার জন্যই এই বই জরুরি।’