করোনায় আর্থিক ক্ষতির দাওয়াই ভরা রাজ্য বাজেটকে স্বাগত শিল্পমহলের
করোনার দাপটে গত দু’বছরে ভীষণভাবে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে রাজ্যের। সেই খরা কাটিয়ে নতুন করে উন্নয়নের পথে হাঁটতে যে সব পদক্ষেপের দরকার ছিল, সেগুলিই করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। আগামী অর্থবর্ষের জন্য শুক্রবার পেশ হওয়া বাজেটকে সেই আর্থিক ক্ষতির মলম হিসেবেই দেখছে বাংলার শিল্পমহল।
বেঙ্গল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির ফিসক্যাল অ্যাফেয়ার্স কমিটির চেয়ারপার্সন বিবেক জালান বলেন, ৩.২১ লক্ষ কোটি টাকার যে বাজেট পেশ হয়েছে, তার সিংহভাগই খরচ হবে শিল্প, পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায় ও সামাজিক খাতে। করোনার ক্ষতি থেকে রাজ্যকে বাঁচানো ও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে এটি অত্যন্ত দৃঢ় পদক্ষেপ। মার্চেন্টস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি ঋষভ কোঠারি বলেন, মুখ্যমন্ত্রী বরাবরই মানুষের হাতে নগদ পয়সা তুলে দেওয়ায় বিশ্বাসী। সামাজিক খাতে ১০.৭ গুণ ও কৃষি সহ অন্যান্য খাতে ১১.৭ গুণ বরাদ্দ বৃদ্ধি তারই প্রতিফলন। পরিকাঠামো খাতে এবার বাজেট বরাদ্দ বেড়েছে ছ’গুণ। মূলত যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরও ভালো করতেই এই টাকা খরচ করা হবে। পরোক্ষে তা শিল্পমহলকে অনেকটাই লাভবান করবে। পাশাপাশি বিনিয়োগ টানতেও কার্যকর হবে এই সিদ্ধান্ত, জানিয়েছেন ঋষভবাবু।
ভারত চেম্বার অব কমার্সের বক্তব্য, করোনার মধ্যেই সরকার এমন কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা ইতিমধ্যেই রাজ্যের শিল্পমহলকে চাঙ্গা করতে অনেকটা সফল হয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম পাওয়ারলুম পলিসি। আগামী অর্থবর্ষের বাজেটেও সেই ধরনের বেশ কিছু পদক্ষেপ আছে। নতুন পার্ক, রাস্তা তৈরির মতো সিদ্ধান্তের পাশাপাশি যেভাবে পরিবেশ-বান্ধব গাড়ি শিল্পের পাশে দাঁড়ানো হয়েছে, তা অত্যন্ত জরুরি পদক্ষেপ। প্যাটন গ্রুপের কর্ণধার সঞ্জয় বুধিয়া বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর মানবিক মুখ বরাবরই সামনে এসেছে। লক্ষ্মীর ভান্ডারের জন্য ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা তারই আরও একটি দৃষ্টান্ত। এই বাজেট কোনও নির্দিষ্ট ক্ষেত্র নয়, সামগ্রিক উন্নয়নের দিকে নজর রেখেই তৈরি হয়েছে। কৃষিক্ষেত্রে যে পদক্ষেপগুলি করা হয়েছে, তা শুধু কৃষকদের আয় বাড়াতেই সাহায্য করবে, তা নয়। কৃষিভিত্তিক শিল্পের অগ্রগতিও সম্ভব হবে।
রাজ্য সরকার চলতি আর্থিক বছরে স্ট্যাম্প ডিউটি ও সার্কেল রেটে যে ছাড় ঘোষণা করেছে, তা আগামী দিনেও বজায় থাকুক, এমনই আর্জি জানিয়েছিল আবাসন নির্মাতাদের সংগঠন ক্রেডাই। সেই আর্জি মেনে সময়সীমা সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ানোয় খুশি তারা। এখানকার পশ্চিমবঙ্গ শাখার সভাপতি সুশীল মোহতা বলেন, করোনায় যেভাবে আবাসন শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, তাতে মলম দিতে রাজ্যের এই পদক্ষেপ সত্যিই প্রশংসনীয়। ক্রেতারা একদিকে যেমন ফ্ল্যাটের জিএসটি দিচ্ছেন, তেমনই কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায়, তার দায়ও নিতে হচ্ছে তাঁদের। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের বাজেট ঘোষণা অনেকটাই রেহাই দেবে ক্রেতাদের, মনে করছেন তিনি।