বিরোধী নেতার পদ হারাবে কংগ্রেস, রাজ্যসভায় তৈরি হচ্ছে নতুন ‘ব্লক’
কংগ্রেসকে বাইরে রেখে রাজ্যসভায় নতুন একটি বিরোধী ‘ব্লক’-এর সলতে পাকানোর কাজ শুরু হয়েছে। সংসদীয় সমন্বয়ের প্রশ্নে ব্লকটিতে থাকতে পারে তৃণমূল কংগ্রেস, পঞ্জাবে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জিতে আসা আম আদমি পার্টি ও উত্তরপ্রদেশ বিধানসভায় সংখ্যা বাড়িয়ে নেওয়া এসপি। আগামী তিন-চার মাসের মধ্যে রাজ্যসভায় তৃণমূল, আপ ও এসপি-র মোট সাংসদের সংখ্যা কংগ্রেসের থেকে অনেকটাই বেশি হতে চলেছে। তৃণমূল সূত্রের দাবি, নতুন ব্লক হলে রাজ্যসভার প্রধান বিরোধী দলনেতার পদ হারাবে কংগ্রেস। তৃণমূলের শীর্ষস্থানীয় এক নেতার মতে, রাজ্যসভায় বিরোধী সমন্বয়ের ক্ষেত্রে কংগ্রেসকে গুরুত্ব দেওয়ার প্রশ্ন উঠছে না।
রাজ্যসভার এই নতুন সমীকরণ জাতীয় স্তরের বিরোধী রাজনীতিতে কোনও বার্তা দিচ্ছে কি না, সেই বিষয়টিও বিবেচনার মধ্যে উঠে আসছে। আপের শীর্ষ সূত্রের খবর, তারা পশ্চিমবঙ্গে সংগঠন বাড়ানো কিংবা ভোটে লড়ার মতো পদক্ষেপ করবে না। ফলে আপ ও এসপি-কে সঙ্গে নিয়ে (উভয় দলের নেতৃত্বের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পর্ক ভাল) তৃণমূল একটি জোট তৈরি করার পর— ডিএমকে, টিআরএস, শিবসেনার মতো দলগুলিকেও পাশে নিতে চাইবে। লোকসভা ভোটের দিকে তাকিয়ে জাতীয় স্তরে বিরোধী রাজনীতির কৌশল স্থির করার জন্য বেশ কিছুটা সময় রয়েছে। তবে লোকসভা ভোটের আগে কয়েকটি রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনও রয়েছে। তাই আপাতত রাজ্যসভা-রাজনীতি নিয়েই আলোচনা এগোচ্ছে। আগামিকাল থেকেই এ ব্যাপারে তৃণমূল-আপের প্রাথমিক কথাবার্তা শুরু হতে পারে।
রাজ্যসভার নিয়ম অনুযায়ী, বিরোধী দলনেতার পদের জন্য কোনও দলের সাংসদ সংখ্যা মোট আসনের ১০ শতাংশ হওয়া প্রয়োজন।
রাজ্যসভার মোট সর্বোচ্চ আসন আড়াইশো। অর্থাৎ বিরোধী দলনেতার পদটি পেতে সংশ্লিষ্ট দলটির অন্তত ২৫টি আসন থাকা প্রয়োজন। এই মুহূর্তে রাজ্যসভায় কংগ্রেসের আসন সংখ্যা ৩৪। কিন্তু এপ্রিলে দলের ৬ জন (যার মধ্যে রয়েছেন আনন্দ শর্মা, এ কে অ্যান্টনির মতো নেতা) সাংসদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। জুন-জুলাইয়ের মধ্যে মেয়াদ শেষ হচ্ছে আরও ৮ জনের। যাঁদের মধ্যে রয়েছেন পি চিদম্বরম, কপিল সিব্বল, অম্বিকা সোনি, জয়রাম রমেশের মতো নেতা-নেত্রীরা। ঘটনা হল, এই ১৪টি আসনে কতজনকে আবার ফিরিয়ে আনতে পারবে কংগ্রেস, তা আর তাদের উপর নির্ভর করছে না। গোয়া এবং উত্তরাখণ্ডে কংগ্রেস ভাল ফল করলে পরিস্থিতি ভিন্ন ছিল। তবে নিজেদের দলের নেতাদের জেতাতে কংগ্রেসকে এখন নির্ভর করতে হচ্ছে ডিএমকে, এনসিপি, শিবসেনা, জেএমএম-এর মতো দলগুলির উপর। তারা সমর্থন করলেই এই ১৪ জনের কেউ কেউ হয়তো রাজ্যসভায় ফিরলেও ফিরতে পারেন।
সূত্রের খবর, যেহেতু বিরোধী দলনেতার পদটি আর কংগ্রেসের হাতে থাকবে না, তাই বিরোধীদের মধ্যে সমন্বয় ও বিরোধী রাজনীতিতে নিজেদের কর্তৃত্ব কিছুটা ধরে রাখতে কংগ্রেসের জয়রাম রমেশ নিজে তৃণমূল, আপের মতো দলগুলির কাছে বার্তা পাঠানোর চেষ্টা করছেন। এখনও পর্যন্ত আপের থেকে কোনও সাড়া মেলেনি। তৃণমূলও এমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছে।
রাজ্যসভায় তৃণমূলের সাংসদ সংখ্যা ১৩, আপের ৩ এবং এসপি-র ৫। কিন্তু পঞ্জাবের ভোটের পর পরিস্থিতি বদলে গিয়েছে। জুনের মধ্যে রাজ্যসভায় আপ-এর সাংসদ সংখ্যা বেড়ে ১০-এ পৌঁছনোর কথা। এসপি-র সাংসদ বেড়ে ৮ থেকে ৯ হতে পারে। অর্থাৎ, নতুন ব্লকে (তৃণমূল-আপ-এসপি) রাজ্যসভার আসন দু’মাসের মধ্যে বেড়ে প্রায় ৩০-এ পৌঁছে যেতে পারে। আর কংগ্রেসের সাংসদ সংখ্যা কমে হতে পারে কুড়ি বা তার থেকে সামান্য বেশি।
এই সংখ্যার জোর থেকেই আগামী দিনে রাজ্যসভায় কংগ্রেসকে গুরুত্ব না দিয়ে বিরোধী রাজনীতির কৌশল তৈরির কথা ভাবছে তৃণমূল।