লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধি, কেন্দ্রের উল্টো দাবি সরকারের পরিসংখ্যান বিভাগের রিপোর্টেই!
মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে বারবার সতর্ক করেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। আর প্রত্যেক ক্ষেত্রেই সেই উদ্বেগবার্তাকে গুরুত্ব দেয়নি মোদী সরকার। অথচ এখন দেখা যাচ্ছে, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সেই পূর্বাভাস তথা আশঙ্কাই সত্যি। চরম আকার নিচ্ছে নিত্যপণ্য এবং শিল্প ক্ষেত্রে পাইকারি ও খুচরো মূল্যবৃদ্ধি। বস্তুত ফেব্রুয়ারি মাসে মুদ্রাস্ফীতির হার আকাশ ছুঁয়েছে। শীতকালীন সব্জির অঢেল জোগান বাজার থেকে ধীরে ধীরে কমছে। তার সঙ্গে সঙ্গেই এবার মূল্যবৃদ্ধি ছায়া বিস্তার করছে খাদ্যসামগ্রীতে। ফেব্রুয়ারি মাসের রিপোর্টে পাইকারি মুদ্রাস্ফীতির হার ছাপিয়ে গিয়েছে ১৩ শতাংশ। খুচরো পণ্যের মুদ্রাস্ফীতির হার ছাড়িয়েছে ৬ শতাংশের বিপজ্জনক সীমা। বিরোধীদের দাবি নয়, উদ্বেগের এই ছবি সোমবার প্রকাশিত সরকারের পরিসংখ্যান বিভাগের রিপোর্টই। আর তা প্রমাণ করছে, মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেতা-মন্ত্রীদের দাবি সম্পূর্ণ ভুল।
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের লাগাতার আশঙ্কা, নতুন বছরের প্রথমার্ধে মূল্যবৃদ্ধির গতি যে রোধ করা যাবে না। শুধু উদ্বেগ জানিয়েই কিন্তু থেমে থাকেনি রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। তারা বারংবার বলেছে, খুচরো মূল্যবৃদ্ধির হার যেভাবেই হোক ৫ শতাংশের নীচে রাখতে হবে। চলতি বছরের প্রথমার্ধে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের টার্গেট পূরণ আদৌ কতটা সহায়ক হবে, সে ব্যাপারে সন্দিহান ছিল রিজার্ভ ব্যাঙ্কই। তাই সাম্প্রতিক নীতি নির্ধারণ কমিটির বৈঠকেও সুদের হারে কোনও বদল ঘটানো হয়নি। অথচ, রেপো রেট কমানোর জন্য কর্পোরেট এবং সরকার কিন্তু প্রবল চাপ দিয়েছিল। দীর্ঘ করোনাকালে একবারও রিজার্ভ ব্যাঙ্ক রেপো রেটের পরিবর্তন করেনি। তারা সতর্ক করেছে। অথচ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কিংবা অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বারবার উল্টো বিবৃতি দিয়েছেন। সাধারণ মানুষকে বলা হয়েছে, মূল্যবৃদ্ধির দুর্ভোগ এবং চাপ বাস্তবে নেই। সবটাই বিরোধীদের অবাস্তব অভিযোগ। এমনকী পাইকারি মূল্যবৃদ্ধির হার বৃদ্ধি নিয়ে বিরোধীরা বাজেট আলোচনায় উদ্বেগ প্রকাশ করলে সরকারের জবাবি ভাষণে অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘পাইকারি মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে সাধারণ মানুষ চিন্তিত নয়। আম জনতার চিন্তা খুচরো পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে।’ আর সেই খুচরো পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নাকি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখছে মোদী সরকার। এদিন প্রকাশিত কেন্দ্রীয় রিপোর্ট নস্যাৎ করছে অর্থমন্ত্রীর সেই বিবৃতিকে। শুধু তাই নয়, বাজেট প্রস্তাবে নমিনাল জিডিপি হার ১১ শতাংশ রাখার টার্গেট অর্থমন্ত্রী ঘোষণা করায় প্রশ্ন উঠেছিল, তাহলে কি সরকার মনে করে, মুদ্রাস্ফীতির হার সাড়ে ৩ শতাংশে নেমে আসবে? মূল্যবৃদ্ধির হার ফের ৬ শতাংশের গণ্ডি পেরিয়ে যাওয়াটাও সেই প্রশ্নের উত্তর।
আশঙ্কা আরও আছে—ইউক্রেনের যুদ্ধ, আন্তর্জাতিক বাজারে অশোধিত তেলের দামের যুগ্ম প্রভাবে এরপর মূল্যবৃদ্ধির হার চলে যাবে নিয়ন্ত্রণের সম্পূর্ণ বাইরে। সোমবার প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী উৎপাদন ক্ষেত্র, খনিজ তেল, পেট্রপণ্য তো বটেই, খাদ্যপণ্যেও থাবা বসিয়েছে মূল্যবৃদ্ধির আঁচ। আন্তর্জাতিক বাজারে অশোধিত তেলের দাম বেড়ে চলায় আশঙ্কা করা হচ্ছে, যে কোনও সময় আবার পেট্রল ডিজেলের দাম বাড়ানো হবে। সুতরাং, তারপর জিনিসপত্রের দাম ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাওয়ার আশঙ্কা মোটেও অস্বাভাবিক নয়।