বাংলার সরকারের কাছেও এসেছিল পেগাসাস কেনার প্রস্তাব? চাঞ্চল্যকর দাবি মমতার
তিন বছর আগে বাংলার সরকারের কাছেও পেগাসাস কেনার প্রস্তাব এসেছিল। কিন্তু সরাসরি সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। কারণ মানুষের কথা বলার অধিকার তিনি কেড়ে নিতে দেবেন না, চানও না। কিন্তু মানুষের বাকস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করতে তা কিনেছিল বিজেপি শাসিত সরকার। এই তথ্য তুলে ধরে বিধানসভায় পেগাসাস প্রসঙ্গ টেনে বিজেপিকে ফের জোরালো আক্রমণ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (WB CM Mamata Banerjee)। তুললেন চাঞ্চল্যকর অভিযোগ। তখন অবশ্য চারজন বাদে বিজেপি সদস্যরা ওয়াকআউট করে বাইরে। মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন, “কেন্দ্রীয় সরকার ফোন ট্যাপ করে। এমনকী আমার ফোন ট্যাপ করা হয়। কোনও কথা বললে সবকিছু জেনে নেবে ওরা।”
এই প্রেক্ষিতেই বিস্ফোরক মমতা। বুধবার স্বরাষ্ট্র দপ্তরের বাজেটে তিনি এমনও দাবি করেন, “তিন বছর আগে আমার কাছেও পেগাসাস কেনার প্রস্তাব এসেছিল। কিন্তু আমি কিনিনি। কারণ, আমি মানুষের বাকস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করায় বিশ্বাসী নই। তাই পেগাসাস কিনিনি।” কিন্তু বিজেপি-শাসিত রাজ্যে পেগাসাস হয়েছে বলে বিধানসভায় দাবি করেছেন তিনি। উল্লেখ করেছেন চন্দ্রবাবু নায়ডু শাসিত অন্ধ্রের সরকারের কথাও। মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন, “বিজেপি-শাসিত উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, কর্নাটক ইত্যাদি রাজ্যে পেগাসাস কেনা হয়েছে। অন্ধ্রপ্রদেশ সরকার এই পেগাসাস কিনেছিল। সেই সময় চন্দ্রবাবু নায়ডুর সরকার ছিল।” কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “পেগাসাস করতে যাবেন না।”
বস্তুত, পেগাসাস নিয়ে আগেও দেশের বিরোধী দলগুলির মধ্যে প্রথম থেকেই তৃণমূল সরব। মমতা বারবার কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে তুলোধোনা করেছেন। গত বছর ২১ জুলাই শহিদ দিবসের ভার্চুয়াল সভায় পেগাসাস কেলেঙ্কারির প্রতিবাদস্বরূপ নিজের মোবাইল ফোনে লিউকোপ্লাস্ট লাগিয়েছিলেন। এদিন তিনি বলেন, “দিল্লিতে ক্ষমতায় আছে বলে কায়দা করে ফায়দা তুলতে চাইছে। আমরা এখন তো আর কেউ দিল্লির বিরুদ্ধে কিছু বলতে পারি না। বিজেপি সবই বন্ধ করে দিচ্ছে। কথা বলাও বন্ধ করে দিতে চাইছে।”
পেগাসাস অর্থাৎ ফোনে আড়ি পাতার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। পেগাসাসের কার্যকারিতা সম্পর্কে বলতে গিয়ে বুঝিয়েছেন, পেগাসাস কোনও গাড়িতে রেখে যদি ডালহৌসি এলাকায় গাড়িটি নিয়ে যাওয়া হয় তাহলে ওই এলাকায় যত মানুষ ফোনে কথা বলছেন, সেইসব কথাই ট্যাপ হয়ে যাবে। এ ভাবে মানুষের অধিকারে হস্তক্ষেপ করা হয়। এর পরই তীব্র শ্লেষের সুরে তঁার আক্ষেপ, “বিজেপির রাজত্বে এর থেকে ভাল আর থাকব কীভাবে!” সেই সঙ্গে নিজেদের কেন্দ্রের চক্রান্তের থেকে সতর্ক থাকার বার্তা দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমরা যেন জেনেশুনে কোনও ভুল না করি। না জেনে কোনও ভুল করলে সেটা ক্ষমা করা যায়। কিন্তু জেনেশুনে ভুল করলে সেই ভুল ক্ষমা করা যায় না।”
এদিকে, মুখ্যমন্ত্রীর পেগাসাস কেনার প্রস্তাব প্রসঙ্গে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “অধিবেশন থেকে ওয়াকআউট করায় মুখ্যমন্ত্রী এ বিষয়ে কী বলেছেন শুনিনি। তিনি পেগাসাস নিয়ে এমন দাবি করে থাকলে, সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে পেগাসাস নিয়ে যে তদন্ত শুরু হয়েছে, সেই তদন্ত কমিটির উচিত অবিলম্বে মুখ্যমন্ত্রীকে জেরা করা।”