রাইটিং উইথ ফায়ার, জেনে নিন কাদের গল্প বলল এই তথ্যচিত্রটি
‘মাদার ইন্ডিয়া’, ‘সালাম বম্বে’, ‘লগান’-এর সঙ্গে একই তালিকায় স্থান পেল রাইটিং উইথ ফায়ার; প্রায় দু-দশক ফের কোনও ভারতীয় ছবি অস্কারের শেষ পাঁচে পৌঁছতে পেরেছে। অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডস মঞ্চে পৌঁছেও খালি হাতে ফিরেছে বঙ্গতনয় সুমিত পরিচালিত রাইটিং উইথ ফায়ার। এটিই প্রথম ভারতীয় পূর্ণদৈর্ঘ্যের তথ্যচিত্র, যা অ্যাকাডেমি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিল। প্রসঙ্গত, গত বছর জানুয়ারিতে হওয়া সানডান্স চলচ্চিত্র উৎসবে স্পেশ্যাল জুরি অ্যান্ড অডিয়েন্স অ্যাওয়ার্ড জিতে নিয়েছিল ছবিটি। এখনও পর্যন্ত মোট ২৮টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার জিতেছে ‘রাইটিং উইথ ফায়ার’। বাস্তবচিত্র তুলে ধরে প্রশংসিত হয়েছেন দুই পরিচালক।
কাদের কথা বলল রাইটিং উইথ ফায়ার?
এই ছবি এক অদম্য লড়াইয়ের গল্প বলে। দেশে সাংবাদিকেরা এবং সংবাদমাধ্যমগুলো নিজেদের যথাযথ ভূমিকা পালনে ব্যর্থ, ঠিক সেই সময়তেই লড়ে যাচ্ছেন মীরাদেবীরা। সাংবাদিকতার সংজ্ঞাকে নতুন করে চিনিয়ে দিচ্ছেন তারা। মীরাদেবীর সাংবাদিকতা জীবন উঠে এসেছে সুস্মিত এবং রিন্টুর ছবিতে। এখন সেই ছবিই বিশ্ব বন্দিত। দীর্ঘ দেড় দশক ধরে মুদ্রিত সংবাদপত্র চালিয়েছেন মীরাদেবী, যুগের সঙ্গে পাল্লা দিতে আজ সময়োপযোগী ডিজিটাল মাধ্যমেও তিনি সংবাদ পরিবেশন করে চলেছেন। কিন্তু মীরাদেবী আজও ছুটে চলেছেন, সাম্প্রতি তাঁর মহিলা টিম নিয়ে পুরো উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনের কভার করেছেন তিনি।
সময়টা ২০১৬ সাল। মীরাদেবীর লড়াই সংগ্রামের দিন যাপনের গল্প ক্যামেরাবন্দি করতে উত্তরপ্রদেশে পৌঁছে যান রিন্টু-সুস্মিত। সেখানে মীরাদেবীর পাশাপাশি তাঁর নেতৃত্বে আরও দুই তরুণী শ্যামকলি, সুনীতা কাজ করে চলেছেন। উত্তরপ্রদেশে একটি সংবাদপত্র চালান তারা, সংবাদপত্রের নাম খবর লহরিয়া; তার উপর ভিত্তি করেই তথ্যচিত্রটি নির্মান করেছেন সুস্মিত এবং রিন্টু। প্রসঙ্গত, এটি দলিত মহিলাদের দ্বারা পরিচালিত ভারতের একমাত্র সংবাদপত্র।
উত্তরপ্রদেশের এক প্রত্যন্ত গ্রাম থেকেই এই স্থানীয় সংবাদমাধ্যম পরিচালনা করেন দলিত সাংবাদিক মীরা দেবী সঙ্গে তার দুই সহকারী শ্যামকলি এবং সুনীতা। পরিশ্রম, প্রতিদিনের সংগ্রাম এবং দলিত তকমা নিয়েই লড়াই করে যাচ্ছেন তাঁরা। সম্বল বলতে একটিমাত্র স্মার্টফোন, তার মাধ্যমেই খবর জোগাড় করেন মীরাদেবীরা।
হালের ঝাঁ চকচকে সাংবাদমাধ্যমগুলির উপস্থাপনের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ‘খবর লহেরিয়া’ পারবে কী করে? প্রযুক্তির সঙ্গে কেউ অভ্যস্ত নন, প্রভূত অর্থ নেই! অসম লড়াই, গোদের ওপর বিষফোঁড়া বিদ্বেষ ‘দলিত’ তকমা। খবর জোগাড় করতে গিয়ে রীতিমতো হিমশিমের অবস্থা হত এই দলিত মহিলাদের।
কিন্তু অসাধ্যসাধন করলেন তাঁরা! কীভাবে হল এই অসাধ্যসাধন?
উত্তরণের গল্প বলে ‘রাইটিং উইথ ফায়ার’। মীরাদেবীকে বহু লড়াই সংগ্রামের মধ্যে গড়ে তুলতে হয়েছে খবর লেহেরিয়া’কে, জনসাধারণের কাছে খবর পৌঁছে দিতে হয়েছে। লড়াকু সাংবাদিককের সাহসী সাংবাদিকতার দৃষ্টান্ত ফুটে উঠেছে ‘রাইটিং উইথ ফায়ার’ তথ্যচিত্র।