কলকাতা বিভাগে ফিরে যান

ফের অশান্ত যাদবপুর, ২৪ ঘন্টারও বেশি সময় ধরে ঘেরাও উপাচার্য ও সহ রেজিস্ট্রার

March 30, 2022 | 2 min read

অনলাইন পরীক্ষার দাবিতে সহ-উপাচার্য সামন্তক দাস এবং রেজিস্ট্রার স্নেহমঞ্জু বসুকে ২৪ ঘণ্টারও বেশি ঘেরাও করে রাখলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা। সোমবার দুপুরের পর থেকে উপাচার্য সুরঞ্জন দাস, সহ-উপাচার্য সমন্তক দাস, রেজিস্ট্রার স্নেহমঞ্জু বসু সহ কিছু শিক্ষক প্রতিনিধিদের ঘেরাও শুরু করে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র সংগঠন ফেটসু। সোমবার রাত ১২টার পরে উপাচার্য বেরিয়ে গেলেও থেকে যান অন্যান্যরা। রাত পর্যন্ত তাঁরা ক্যাম্পাসেই রয়েছেন।

ফেটসুর সাধারণ সম্পাদক গৌরব দাস জানিয়েছেন, পরীক্ষা এবং কেরিয়ার সম্পর্কিত দাবিদাওয়াগুলি নিয়ে কর্তৃপক্ষ কোনও ইতিবাচক সমাধান দিলেই অবস্থান উঠবে। সংগঠনের বক্তব্য, অনলাইনে পরীক্ষা দেওয়ার দাবি জানানো হচ্ছে শুধুমাত্র ছাত্রছাত্রীরা থাকার জায়গা পাচ্ছেন না বলেই নয়। অনেকে অনলাইন ইন্টার্নশিপ করছেন। এটা তাঁদের চাকরি এবং কেরিয়ারের জন্য আবশ্যিক। অফলাইনে ক্লাস এবং পরীক্ষা হলে সেগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সার্বিকভাবে কেরিয়ারে তার কু-প্রভাব পড়বে। কর্তৃপক্ষ এই সমস্যাগুলির সমাধান দিতে পারছে না।

তবে, শিক্ষকরাও এই ইস্যুতে অনড়। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি বা জুটা সরাসরি হুঁশিয়ারিই দিয়েছে। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায় বলেন, বোর্ড অব স্টাডিজ এবং পরীক্ষা বোর্ডের সিদ্ধান্তকে অগ্রাহ্য করে যদি অনলাইন পরীক্ষা নেওয়া হয় তাহলে তারা গোটা পরীক্ষা পদ্ধতিকেই বয়কট করবেন। অধ্যাপক সংগঠন অ্যাবুটার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় লোকাল চ্যাপ্টার খোদ উপাচার্যকে একটি স্মারকলিপি জমা দিয়েছে। তাতে কর্তৃপক্ষের পাশে দাঁড়িয়ে ছাত্রদের আচরণকে অসঙ্গত এবং অবাঞ্ছিত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সেই সংগঠনও দাবি করেছে, ছাত্রদের চাপের কাছে নতিস্বীকার করে কোনওমতেই পরীক্ষা পদ্ধতিতে বদল করা যাবে না। সাধারণ সম্পাদক গৌতম মাইতিও সরাসরি বলেন, অনলাইন পরীক্ষা হলে শিক্ষকরা সেই প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করবে না। এই দাবি যে সমগ্র ছাত্র সমাজের বক্তব্য নয়, সেটা মনে করিয়ে দিয়েছে সংগঠনটি।

প্রসঙ্গত, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তাব্যক্তিদের মধ্যে রেজিস্ট্রারই একমাত্র মহিলা। তাঁকে ঘেরাও করার ফলে শিক্ষক এবং আধিকারিকদের মধ্যেও বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। এদিকে, আজ, বুধবার হরিচাঁদ গুরুচাঁদ ঠাকুরের জন্মতিথি উপলক্ষে অন্যান্য শিক্ষা সংগঠনের মতো যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়েও ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। শীর্ষ আধিকারিক এবং শিক্ষকদের আশঙ্কা, ছুটির দিনেও তাঁদের ঘেরাও করে রাখা হতে পারে। এই পরিস্থিতি যে আসতে চলেছে, তাঁর অনুমান আগেই করা গিয়েছিল। ছাত্ররা যে অনলাইন পরীক্ষা নিয়ে বড়সড় আন্দোলনে নামতে পারে, তা একাধিকবার লেখা হয়েছিল ‘বর্তমান’-এ। অবশেষে, সেই আশঙ্কাই সত্যি হল।

করোনাকাল কাটিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পরেও ছাত্র-শিক্ষক বিরোধ বেঁধেছিল। ফেটসু অনুগামী ছাত্রদের অভিযোগ ছিল, অফলাইন ক্লাস নিতে আসছেন না শিক্ষকরা। সেই দাবি খারিজ করে শিক্ষকরা পাল্টা বলছিলেন, তাঁরা গিয়েই বরং দেখতে পাচ্ছেন, ক্লাসে পড়ুয়া নেই। এরপরে প্রকাশ্যে আসে প্রকৃত ঘটনা। শেষমেষ অনলাইন ক্লাসের দাবিতেই সরাসরি আসরে নামে ফেটসু। তখনই শিক্ষকরা আন্দাজ করেছিলেন, অনলাইন ক্লাসের দাবিটাই চূড়ান্ত লক্ষ্য নয়। আসল উদ্দেশ্য হল পরীক্ষা ব্যবস্থাকে অনলাইন পদ্ধতিতে এনে ফেলা। তবে, প্রথম থেকেই এর বিপক্ষে ছিলেন শিক্ষকরা। বোর্ড অব স্টাডিজ এবং পরীক্ষা বোর্ডের সিদ্ধান্ততেও সেই মনোভাবের প্রতিফলন ঘটে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#jadavpur university, #students

আরো দেখুন