ঘরে ফেরা শ্রমিকের ১০০ দিনের কাজের ব্যবস্থা রাজ্যের
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণা মতোই লকডাউনে কাজ হারিয়ে রাজ্যে ফেরা কয়েক লাখ শ্রমিককে মহাত্মা গান্ধী জাতীয় কর্মনিশ্চয়তা প্রকল্পে (মনরেগা বা একশো দিনের কাজ) বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা করে দিল পঞ্চায়েত দপ্তর। নবান্নের খবর, মার্চের শেষ সপ্তাহে লকডাউন ঘোষণা থেকে এ পর্যন্ত ২ লক্ষ ৪৩ হাজার পরিবারকে নতুন জবকার্ড দেওয়া হয়েছে। নতুন নাম নথিভুক্ত হয়েছে ৪ লক্ষ ৯৭ হাজার। মে মাসে কাজ পেয়েছে ২৫ লক্ষ পরিবার। শ্রমদিবস সৃষ্টি হয়েছে ৪ লক্ষ ৪০ হাজার। নবান্নের কর্তাদের দাবি, লকডাউনে কাজ হারিয়েমানুষ যখন দিশেহারা, তখন একশো দিনের প্রকল্পেই নতুন আশা দেখাচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার।
পঞ্চায়েত দপ্তরের আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, ভিন রাজ্য থেকে ফেরা এই শ্রমিকদের বিকল্প কর্মসংস্থানে সব জেলাতেই এই প্রকল্পে বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। পুকুর কাটা, জলাশয় সংস্কার, খাল কাটা, বাঁধ মেরামতি ছাড়াও বনসৃজন, গ্রামীণ সড়ক ও গৃহ নির্মাণ, নার্সারি বানানো, চৌবাচ্চায় মাছ চাষ, ফলের বাগান, পান চাষ, বৃষ্টির জল ধরে রাখা-সহ বিভিন্ন বহুমুখী প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। ঘরে ফেরা শ্রমিকদের জরুরি ভিত্তিতে জবকার্ড দিতে জেলায় জেলায় নির্দেশ গিয়েছে। পরিবারের নামে জব কার্ড থাকলে তাতে তাঁদের নাম যুক্ত করতে হবে। সেই মতো রাজ্যের ব্লক অফিসে এই শ্রমিকদের নাম নথিভুক্তকরণের কাজ চলছে। তাঁদের হাতে জবকার্ড তুলে দিতে কোয়ারান্টিন সেন্টারেও পৌঁছে যাচ্ছেন ব্লক আধিকারিকরা। সব মিলিয়ে গত তিন মাসের কঠিন সময়েই একশো দিনের প্রকল্পে রাজ্যে রেকর্ড সংখ্যক মানুষ কাজ পেয়েছেন। শীর্ষে রয়েছে বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, মুর্শিদাবাদ, মালদা, উত্তর দিনাজপুর এবং দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা।
পঞ্চায়েত দপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এপ্রিলে ৭ লক্ষ ১১ হাজার পরিবার কাজ পেয়েছিল। মে মাসে কাজ পেয়েছে ২৫ লক্ষ পরিবার। চলতি বছরে ইতিমধ্যেই ৩০ লক্ষ ৬৫ হাজার পরিবার কাজ পেয়েছে। শ্রমদিবস সৃষ্টি হয়েছে ৬ কোটি ৪০ লক্ষ। এ ছাড়াও সিএডিপি প্রকল্পে (কমপ্রিহেনসিভ এরিয়া ডেভলপমেন্ট প্রোগ্রাম) ৭২০০ পরিবারের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাতেও আনুমানিক ১৪ হাজার মানুষ যুক্ত। এই প্রকল্পে বাড়ির মধ্যেই ভার্টিকাল গার্ডেন তৈরি, চৌবাচ্চায় মাছ চাষ, হাঁস-মুরগি পালন এবং বাড়ির মধ্যে জল ছাড়াই সব্জি চাষের ব্যবস্থা হয়েছে।
পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘একশো দিনের প্রকল্পে বাংলা এখন দেশের রোল মডেল। লকডাউনে কাজ হারানো শ্রমিকদের ভবিষ্যৎ নিয়ে যখন সারা দেশ চিন্তিত, তখন এ রাজ্যে এই প্রকল্পে লক্ষ লক্ষ মানুষ নাম লেখাচ্ছেন। লকডাউনের সময় এই প্রকল্প যে কতটা কার্যকরী হতে পারে, মুখ্যমন্ত্রী সবার আগে উপলব্ধি করেছিলেন। কেন্দ্রীয় সরকারও এখন সেটা মানছে।’