এবার বাঙালির মাছে কোপ বিজেপির! দিল্লির সি আর পার্কে মাছ বিক্রেতাদের নোটিশ পুরসভার
কথায় বলে মাছে ভাতে তেলে জলে বাঙালির শরীর, কিন্তু এবার বাঙালির মাছ খাওয়ার বিরুদ্ধে রীতিমতো ফতোয়া জারি বিজেপির। দিল্লির মিনি কলকাতা অর্থাৎ চিত্তরঞ্জন পার্কের মাছ বাজারের মাছ বিক্রেতাদের নোটিশ দিল সাউথ দিল্লি মিউনিসিপাল কর্পোরেশন। এই ঘটনায় হঠাৎ করেই চঞ্চল্য ছড়িয়েছে। দোকানগুলোর বৈধ্যতা নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছে। সেই সঙ্গে দোকানগুলোকে বন্ধ করতে বলা হয়েছে। কলোনির অধিবাসীরা সেই মর্মেই অভিযোগ জানিয়েছেন।
এই বাজারের দোকানিরা দীর্ঘদিন ধরেই দোকান চালাচ্ছেন। ৭২ বছর বয়সী নির্মল হাজার, ১৯৬৯ সালে দিল্লি এসেছিলেন। তিনি দুই নম্বর মার্কেটে দোকান শুরু করেন। কিন্তু আজ এতগুলো দশক পরে দুই বাজারের, নির্মল বাবু বা তাদের মতো মাছ বিক্রেতা নোটিশ দিচ্ছে পুরসভা। পরিষ্কার- পরিচ্ছন্নতার প্রশ্নে এবং দোকানের আইনি বৈধ্যতা নিয়ে সওয়াল করা হচ্ছে। কী করে এই বসতি গড়ে উঠল, কলোনি তৈরি হল, তা চোখের সামনে থেকে দেখেছেন নির্মল বাবুরা। কিভাবে আস্তে আস্তে বড় হল সি আর পার্ক তা চোখের সামনে থেকে প্রত্যক্ষ করেছেন তারা। নির্মল হাজরা বলেন, “আমাদের কোন ধারণাই নেই কেন কর্পোরেশনে আমাদের সঙ্গে এমন করছেন।”
২০০৩ সালে দিল্লি ডেভেলপমেন্ট অথরিটির তরফ থেকে ২.২৫ বর্গফুট করে মাছ বিক্রির দোকান করে দেওয়া হয়। ভূমি সংস্কার দপ্তরের তরফ থেকে এই দোকানগুলো বিতরণ করা হয়। তাদের মাধ্যমেই দোকানগুলো দোকানিদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। ইস্ট বেঙ্গল ডিসপ্লেসড পার্সেন’স অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি পি কে পাল জানান, ” এল অ্যান্ড ডিও-এর তালিকা অনুযায়ী দোকানগুলো বিতরণ করা হয়েছে। ২০০৬ সালে আমরা ডিডিএ-এর কাছে আবেদন করেছিলাম। স্টোরেজ, সেড ইত্যাদির জন্য আবেদন করা হয়েছিল। মাছ বিক্রেতারা বাজারের একদম কোনায় দোকান পেয়েছেন। প্রায় ৫০০ টি পরিবার নির্ভর করে ওই দোকানগুলোর উপর। পুরনিগম কর্তৃপক্ষ কোন আলোচনা না করে কী করে এমন করতে পারে।
বাঙালিদের কাছে মাছ নিত্যদিনের খাবারের এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। স্বাদু জলের মাছ এবং সমুদ্রিক মাছ কিনতে স্থানীয় এলাকা থেকে অনেকেই এই বাজারে আসেন। বাইরে থেকেও অনেকেই এইখানে মাছ কিনতে আসেন। দুই নম্বর মার্কেটের দোকানি ৬৪ বছর বয়সী নিরাপদ বিজলী বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছেন, তার কথায়, ” মাছ বিক্রির জায়গাগুলো পুরনিগমের তরফেই তৈরি করে দেওয়া হয়েছিল। এখন হঠাৎ করেই আমাদের বলা হচ্ছে আমরা যেন ব্যবসা বন্ধ করে দিই।” আরেক মাছ বিক্রেতা অরবিন্দ দাস বলেন, ” করোনা অতিমারির কারণে আমরা আক্রান্ত হয়েছি। প্রতিত দোকানের সঙ্গে কয়েকজন করে পরিবার জড়িয়ে রয়েছে। ব্যবসা বন্ধ করে দিলে তাদের কী হবে?”
এক নম্বর মার্কেটের মাছ বিক্রেতা তপন বসুর কথা অনুযায়ী, “১০ ফুট বাই ১০ ফুট দোকানের জন্য অনুমতিপত্রের প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু আমাদের দোকানগুলোর আয়তন অর্ধেক। ২০০৫ সালে তা হাস্তান্তরিত হয়। এসডিএমসি এবং ডিডিএ দুটোই সরকারি সংস্থা। কিন্তু তাও কেন আমাদের নাজহাল করা হচ্ছে?” এসডিএমসি কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছে, যে মাংসের দোকানগুলো আবদ্ধ জায়গায় রয়েছে, পুরনিগম তাদের অনুমোদন করে। কিন্তু যারা প্রকাশ্যে বিক্রি করে তাদের অনুমোদন দেয় না পুরনিগম। যদিও সারা দেশেই খোলা বাজারে মাছ বিক্রি করা হয়।
ডিডিএ-এর এক আধিকারিকের কথায়, “দোকানের মালিকেরা কোনরকম অনুমোদনপত্র বা, তাদের দোকান পাওয়ার কোন চিঠিও দেওয়া হয়নি। আমরা কেবল তাদের দোকানের আইনি বৈধ্যতা নিয়ে প্রশ্ন করেছি। তাদের উত্তরের উপর ভিত্তি আমরা এসডিএমসিকে নীতি পরিবর্তন করতে বলব।” মাছের দোকানিরা বিভিন্ন সরকারি আধিকারিকের কাছে আবেদন করছেন।
জনৈক এক স্থানীয় বাসিন্দা ৫৬ বছর বয়সী অরুন বিশ্বাসের মতে, “কর্পোরশন কী প্রমান করতে চাইছে? মাছ এবং এই মাছ বাজার, আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। আমি প্রতি দু’দিন অন্তর বাজারে মাছ কিনতে আসি। এই মাছ বাজার তুলে দিয়ে কী অর্জন করবে কর্পোরশন। আরেক বাসিন্দা নীরা বসু বলেন, ” মাছ বিক্রেতাদের দ্রুত আইনি সাহায্য নেওয়া উচিত। এই মাছ ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন ধরে এখানে ব্যবসা করছেন। এতদিন পরে কী করে তাদের বৈধ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে।”
আরেক মাছ ক্রেতা, অভিনয় সিংহ বলেন; “বাঙালি মেয়েকে বিয়ে করার কারণে বিভিন্ন রকম মাছের পদ আমার প্রিয় হয়ে উঠেছে। চিত্তরঞ্জন পার্কের মাছের দোকানগুলোকে কেন বন্ধের নোটিশ পাঠানো হল, তা অনুমান করা কঠিন। এটা কি বাঙালিদের হৃদয়ে আঘাত করা নয়?”
বঙ্গ জীবনের অঙ্গ মাছ, সেই মাছের দোকানকে আক্রমণ করে, বাংলা বিরোধী বিজেপি ফের একবার বাঙালির আবেগে আঘাত করল।