পর্তুগিজদের প্রিয় লুপ্তপ্রায় ‘ব্যান্ডেল চিজ’-কে আজও বাঁচিয়ে রেখেছেন কোতুলপুরের ঘোষ পরিবার
পর্তুগিজদের প্রিয় লুপ্তপ্রায় ‘ব্যান্ডেল চিজ’ কোতুলপুরের চকচাঁদ গ্রামের একটি পরিবার প্রায় ৩০০ বছর ধরে বংশ পরম্পরায় আজও বাঁচিয়ে রেখেছেন। প্রচারের অভাবে সার্বিক বাজার না পেলেও সম্পূর্ণ ঘরোয়া পদ্ধতিতে ঘুঁটের আগুনে পোড়ানো ‘ব্যান্ডেল চিজ’ আজও কলকাতা, দিল্লী, মুম্বই সহ দেশের বিভিন্ন ফাইভস্টার হোটেলে বিশেষ পদ হিসাবে জায়গা করে নিয়েছে। উৎপাদকরা চান কলকাতার রসগোল্লা, জয়নগরের মোয়ার মতো ‘ব্যান্ডেল চিজ’ জিআই স্বীকৃতি পাক। সেই দাবিতেই বৃহস্পতিবার চকচাঁদ গ্রামের বাসিন্দা পলাশ ঘোষ নামে এক উৎপাদক বিষ্ণুপুরের মহকুমা শাসকের দ্বারস্থ হন। তিনি এদিন নিজের তৈরি দুই ধরনের চিজ মহকুমা শাসককে দেখান।
বিষ্ণুপুরের মহকুমা শাসক বলেন, বিভিন্ন তথ্য থেকে জানা গিয়েছে, প্রায় ৪০০ বছর আগে ব্যান্ডেলে পর্তুগিজ কলোনিতে প্রথম ওই চিজ তৈরি হয়। তবে বর্তমানে সেখানে ওই চিজ উৎপাদন হয় না। ওই চিজ কোতুলপুরের চকচাঁদ গ্রামের একটিই পরিবার তৈরি করে। এদিন ঘোষ পরিবারের এক সদস্য পলাশ ঘোষ দুই ধরনের ব্যান্ডেল চিজ নিয়ে আসেন। ওই চিজের প্রচারের জন্য ভাবনাচিন্তা করা হবে।
পলাশবাবু বলেন, আমরা বংশ পরম্পরায় ব্যান্ডেল চিজ বানাই এবং তা কলকাতায় বিক্রি করি। সেখান থেকে নামী দামি হোটেলে যায়। ওই চিজ দিয়ে বিভিন্ন পদ রান্না করা হয়। একটা সময় ব্যান্ডেল চিজের ভালো বাজার ছিল। তবে করোনার পর থেকে চাহিদা কমে গিয়েছে। দামে সস্তা হওয়ায় খুব বেশি লাভ হয় না। তাই পরিবারের অনেকেই ওই পেশা ছেড়ে দিয়েছেন। তাই সরকারি উদ্যোগে ব্যান্ডেল চিজের বিপণনের ব্যবস্থা করা হলে লুপ্তপ্রায় ওই চিজ নতুন করে বাজারে দাঁড়াতে পারবে।
জানা গিয়েছে, পর্তুগিজদের প্রিয় ওই ‘চিজ’ প্রথম হুগলির ব্যান্ডেলে তৈরি হয়। কোতুলপুরের চকচাঁদ গ্রামের ঘোষ পরিবারের এক পূর্বপুরুষ কর্মসূত্রে ব্যান্ডেলে থাকায় তিনি তা আয়ত্ত্ব করে নেন। পরবর্তীকালে তিনি নিজেই বাড়িতে তা তৈরি করেন। তারপর গঙ্গা দিয়ে অনেক জল গড়িয়েছে। পর্তুগিজরাও এদেশ ছেড়েছে। ধীরে ধীরে ব্যান্ডেল চিজ লুপ্তপ্রায় হয়ে যায়। বর্তমানে ঘোষ পরিবারের উত্তরসূরি দুই ভাই সুভাষ ঘোষ ও মনোরঞ্জন ঘোষের পরিবার নিজেদের বাড়িতে একেবারে ঘরোয়া পদ্ধতিতে ঘুঁটের আগুনে ওই চিজ তৈরি করেন। তবে তাঁদের তৈরি চিজ দেশের বিভিন্ন ফাইভ স্টার হোটেলে স্থান পেলেও চকচাঁদ গ্রামের উৎপাদকরা প্রচারের অভাবে দারিদ্রের অন্ধকারে ডুবে রয়েছেন। লুপ্তপ্রায় ব্যান্ডেল চিজ নিয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুড টেকনোলজি বিভাগ রাজ্য সরকারের উৎকর্ষমূলক প্রকল্পের অধীনে গবেষণা চালাচ্ছে বলে সূত্র মারফত জানা গিয়েছে। গবেষকরা চকচাঁদ গ্রাম ঘুরেও গিয়েছেন।
পলাশবাবু বলেন, স্মোক ও প্লেন এই দুই ধরনের ব্যান্ডেল চিজ হয়। গোরুর দুধ থেকে প্রথমে পনির তৈরি করা হয়। তা প্লাস্টিকের কৌটোয় করে ৩০ গ্রাম ওজনের নির্দিষ্ট মাপের চিজ তৈরি করা হয়। তা নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্লেন চিজ হয়। প্লেন চিজের রং সাদা। ওই প্লেন চিজকে উনুনে ঘুঁটের জ্বাল দিয়ে গরম করা হয়। হালকা বাদামি রং এলে তা তুলে নেওয়া হয়। এরপর তাতে নুন মাখানো হয়। তারপর তা রপ্তানি করা হয়। বাদামি রঙের চিজকে স্মোক চিজ বলা হয়। কলকাতায় স্মোক চিজের চাহিদায় বেশি। ব্যান্ডেল চিজ ছোট ছোট পিস করে স্যালাড দিয়ে খাওয়া যায়। আবার তা রান্নার বিভিন্ন পদ তৈরি করেও খাওয়া হয়। ব্যান্ডেল চিজ দামেও ভীষণই সস্তা। সাইজ অনুযায়ী প্রতি পিসের পাইকারি দর ৮ টাকা থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত।