১৩ লক্ষ স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে এক ছাতার তলায় আনার ভাবনা রাজ্য সরকারের, উপকৃত হবে ১ কোটি পরিবার
ক্ষমতায় আসার পর থেকেই গ্রামীণ এলাকায় মহিলাদের আয় বাড়াতে উদ্যোগী স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গড়া হয়েছে প্রায় ১৩ লক্ষ স্বনির্ভর গোষ্ঠী, যার উপর নির্ভরশীল বাংলার এক কোটিরও বেশি পরিবার। ঋণের শর্ত পর্যন্ত এখন অনেক সহজ। শুধু একটি বিষয়ের সমাধান হওয়া বাকি ছিল। বর্তমানে এই বিপুল সংখ্যক স্বনির্ভর গোষ্ঠী বিভিন্ন দপ্তরের অধীনে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই সেগুলির সামগ্রিক উন্নয়নে ব্যাঘাত ঘটে। সেই সমস্যা মেটাতে এবার সমস্ত দপ্তরের স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে একছাতার তলায় নিয়ে আসছে নবান্ন। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী এই প্রকল্পের নাম দিয়েছেন ‘নিজস্বিনী’।
সম্প্রতি পাহাড় সফরের সময় দার্জিলিংয়ে নিজে হাতে মোমো বানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মনোবল বাড়িয়েছেন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের। এবার বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনেও তাঁদের বিশেষ গুরুত্ব দিতে চলেছেন মমতা। সেখানেই তিনি প্রকাশ্যে আনবেন এই ‘নিজস্বিনী’ উদ্যোগ। উদ্বোধন করবেন এই প্রকল্পের একটি ‘ডেডিকেটেড পোর্টাল’-এরও।
নবান্ন সূত্রে খবর, সম্প্রতি গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনাতেও উঠে আসে গোটা বিষয়টি। সব শুনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হন কেন্দ্রীয় আধিকারিকরা। তাঁরা রাজ্যকে জানান, সমস্ত দপ্তরের স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে একছাতার নীচে এনে মানুষের জীবন-জীবিকার মান উন্নয়নের প্রচেষ্টা সারা দেশে এই প্রথম। এই নতুন উদ্যোগ আগামী দিনে সারাদেশের সামনে একটি ‘মডেল’ হয়ে উঠতে চলেছে।
মুখ্যমন্ত্রীর এমন উদ্যোগ কিন্তু নতুন নয়। ২০২০ সালের গোড়ায় ‘জয় বাংলা’ প্রকল্প চালু করে বিভিন্ন দপ্তরের অধীন বার্ধক্য ভাতা এক জায়গায় নিয়ে আসেন তিনি। ভাতা বাবদ অর্থও বাড়ানো হয়। সকলের জন্য ১০০০ টাকা। ঠিক একইভাবে এবার প্রায় ১৩ লক্ষ স্বনির্ভর গোষ্ঠীকেও একছাতার তলায় নিয়ে আসছে রাজ্য। এর মধ্যে প্রায় ন’লক্ষই পঞ্চয়েত দপ্তরের অধীনে। সূত্রের খবর, সেই কারণে এই একছাতার নীচে আনার কাজের দায়িত্বও দেওয়া হয়েছে ওই দপ্তরকে। এর পাশাপাশি শহরাঞ্চলের স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলি পরিচালনার দায়িত্ব রয়েছে পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তরের সংস্থা সুডার উপর। স্বনির্ভর গোষ্ঠী ও স্বনিযুক্তি, সমবায়, সংখ্যালঘু বিষয়ক ও মাদ্রাসা শিক্ষা ও অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দপ্তরের অধীনেও রয়েছে এমন একাধিক দল। এঁদের সকলেরই তথ্য থাকবে ‘নিজস্বিনী’ পোর্টালে। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর নাম, ঠিকানা, রেজিস্ট্রেশন ও যোগাযোগ নম্বরের পাশাপাশি এঁদের লেনদেন এবং আর্থিক বিষয়গুলিও বিস্তারিতভাবে সেখানে তুলে ধরা হবে। ফলে এঁরা দৈনন্দিন কাজকর্মে কতটা সাফল্য পাচ্ছে, তা কেন্দ্রীয়ভাবে লিপিবদ্ধ থাকবে রাজ্যের তথ্যভাণ্ডারে। নবান্নের শীর্ষকর্তাদের থেকে শুরু করে সমস্ত সংশ্লিষ্ট অফিসাররা সে সব দেখতে পাবেন একটিমাত্র ক্লিকেই। এতে রাজ্যের কোন প্রান্তে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর জন্য কী ধরনের উদ্যোগ নেওয়ার প্রয়োজন, তা খুব সহজেই নির্ণয় করা যাবে।
বিভিন্ন সময় রাজ্যের আর্থিক সহায়তা পেয়ে থাকে এই স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলি। এই পোর্টালের মাধ্যমে সেই অর্থের সঠিক ব্যবহার হচ্ছে কি না, তা যাচাই করে দেখা সম্ভব হবে। রাজ্যের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, এটি নবান্নের আরও একটি বৃহৎ প্রকল্প। কারণ, এর মধ্যে দিয়ে এক কোটির বেশি পরিবারের মানুষকে একটি সূত্রে বাঁধছে রাজ্য। ফলে প্রতিটি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সম্বন্ধে পরিষ্কার ধারণা থাকবে রাজ্যের আধিকারিকদের। আর তাদের আরও বেশি ব্যবসা পেতে সাহায্য করতে পারবে সরকার।