দেওঘরের মারন রোপওয়ে থেকে বেঁচে ফেরার রোমহর্ষক অভিজ্ঞতার কথা শোনালেন ৮ বাঙালি
প্রায় চব্বিশ ঘণ্টা কার্যত শূন্যে ঝুলছিলেন। একসময় ছেড়ে দিয়েছিলেন বাঁচার আশাও৷ জল না পেয়ে তৃষ্ণা নিবারণের জন্য বোতলের মধ্যে জমিয়ে রেখেছিলেন প্রস্রাবও!
শেষ পর্যন্ত বায়ুসেনা উদ্ধার করার পর দেওঘরের হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা সেরে আজ মালদহে ফিরলেন হরিশ্চন্দ্রপুরের ছয় জন ও মানিকচকের দু’ জন পর্যটক। সকলের চোখে মুখেই এখনও আতঙ্কের ছবি স্পষ্ট। প্রথমত, ভয়াবহ দুর্ঘটনার কবলে পড়া। দ্বিতীয়ত উঁচু পাহাড়ের কোলে কার্যত শূন্যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকা। মালদহে ফিরে প্রত্যেকে জানিয়েছেন তাঁদের হাড়হিম করা অভিজ্ঞতা।
একে কনকনে ঠান্ডা তার উপরে খাবার এবং জল ছাড়া প্রায় ২৪ ঘণ্টা আটকে থাকতে হয়েছিল রোপওয়েতে। পানীয় জল না মেলায় তৃষ্ণা নিবারণের জন্য নিজেদের প্রস্রাব পর্যন্ত সংরক্ষণ করে রেখেছিলেন বোতলে। যে ঘটনা রীতিমতো গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠার মতোই।
ঝাড়খণ্ডের দেওঘরের কাছে বাবা বৈদ্যনাথ ধাম থেকে মাত্র কুড়ি কিলোমিটার দূরে ত্রিকুট পাহাড়ে রোপওয়েতে গত রবিবার ঘটে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। গত রবিবার বিকেল চারটের সময়এই দুর্ঘটনা ঘটে। শূন্যে ঝুলন্ত অবস্থায় মুখোমুখি দু’টি রোপওয়ে ট্রলি কারের ধাক্কা লাগাতেই দুর্ঘটনা ঘটে বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা। যে ঘটনার জেরে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর। এই দুর্ঘটনার জেরে ১২টি রোপওয়ে আটকে যায়।
এই অভিশপ্ত রোপওয়েতেই ছিলেন মালদহের পর্যটকেরা। এঁদের মধ্যে মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের বাজার পাড়ার ঝুমা পাল, বিনয় দাস, সুধীর দত্তরা জানিয়েছেন নিজেদের অভিজ্ঞতা। মালদহেরই মানিকচকের বাসিন্দা পুতুল শর্মাও কোনওরকমে বেঁচে ফিরেছেন।
দেওঘর ফেরত রোপওয়ে যাত্রীরা জানিয়েছেন, সবাই মিলে ত্রিকুট পাহাড়ে মন্দির দেখতে গিয়েছিলেন। রোপওয়েতে যাওয়ার সময় কোনও সমস্যা হয়নি। কিন্তু, ফেরার সময় হঠাৎই প্রবল ঝাঁকুনি হয় । পাল্টি খেয়ে অনেকটা নীচে নেমে এসে শূন্যে ঝুলতে থাকে রোপওয়ে। এরপর বিকেল থেকে পরদিন দুপুর পর্যন্ত সেই রোপওয়েতেই বসে থেকে অপেক্ষা করতে হয় প্রত্যেককে৷ নীচে পাহাড়ের মাঝে অতল খাদ৷ কখন, কীভাবে সাহায্য এসে পৌঁছবে, তাও অজানা৷ এখনও শূন্যে ভেসে থাকার ছবি যেন চোখের সামনে ভাসছে বিনয় দাস, পুতুল শর্মাদের। যেন বিশ্বাসই হচ্ছে না সকলে বেঁচে আছেন।
এক সময় জলতেষ্টাতে গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাওয়ায়, ভয়ে আতঙ্কে প্রস্রাব পর্যন্ত সংরক্ষণ করেছিলেন মালদহের এই পর্যটকরা। অনেক পরে জল পৌঁছে দেয় সেনাবাহিনী। উদ্ধারের সময় হেলিকপ্টারের পাখার হাওয়ায় দুলতে শুরু করে রোপওয়ে। দড়িতে বেঁধে রোপওয়ে থেকে প্রত্যেককে উদ্ধার করে বায়ুসেনা৷ সেই সময় প্রাণে বেঁচে ফেরার আশা ছেড়েছিলেন প্রত্যেকেই।
দুর্ঘটনার সময় কয়েকজন সামান্য জখম হন। উদ্ধারকাজে বায়ুসেনার দু’টি হেলিকপ্টার নামানো হয়। দুর্ঘটনাগ্রস্ত রোপওয়ে থেকেই মালদহের পর্যটকরা নিজেদের পরিস্থিতি আর উদ্ধারকার্য মোবাইল ক্যামেরা বন্দি করেন।বাড়ি ফিরেও সেসব দৃশ্য দেখে আঁতকে উঠছেন তাঁরা৷