চড়ক পুজো নিষিদ্ধ করা বিডন সাহেব, আজও তিলোত্তমায় অমর হয়ে রয়েছেন
কিন্তু আইনের বিরুদ্ধাচরণ করেন বিপ্লবীরা, তারা বললেন চড়ক চলবে। আত্মত্যাগ, সাহস, বীভৎসতার আর সহিষ্ণুতার, এক অমোঘ বানী এই পুজোর রীতিতেই খুঁজে পেয়েছিল অগ্নি যুগের বিপ্লবী তরুণ সমাজ।
সৌভিক রাজ

চৈত্র মাসের শেষ দিন অর্থাৎ চৈত্র সংক্রান্তিত পালিত হয় চড়কের পুজো। এই পুজোর প্রচলন নিয়ে নানান মতভেদ রয়েছে। প্রচলিত লোককথা অনুযায়ী, ১৪৮৫ সালে সুন্দরানন্দ ঠাকুর নামের এক রাজা চড়কের পুজোর প্রচলন করেন। যদিও রাজ পরিবারের লোকেরা এই পুজো শুরু করলেও চড়ক পুজো কখনও কোনও রাজবাড়ির পুজো হয়ে উঠতে পারেনি। চড়ক পুজোর সঙ্গে বিশেষ কিছু রীতি রয়েছে, যা শুনে গায়ে কাঁটা দিতে পারে। কুমিরের পুজো, জ্বলন্ত ছাইয়ের ওপর হাঁটা, কাঁটা, ছুরি বা ধারালো কিছুর ওপর লাফানো, শিবের বিয়ে,অগ্নিনৃত্য ইত্যাদি এই পুজোর বিশেষ অঙ্গ হিসাবে মনে করা হয়।
চড়ক পুজোর সঙ্গে ভূতপ্রেত, পুনর্জন্মবাদ ইত্যাদি জড়িয়ে রয়েছে, সেই কারণেই নানা রকমের দৈহিক যন্ত্রণা ধর্মের অঙ্গ বলে মনে করা হয়। চড়কগাছের সঙ্গে ভক্তদের লোহার হুড়কো দিয়ে বেঁধে দ্রুতবেগে ঘোরানোর রীতি রয়েছে। সেই সঙ্গে পিঠে, হাতে, পায়ে, জিভে এবং শরীরের অঙ্গে লোহা গেঁথে দেওয়া হয়। কিন্তু শরীরকে কষ্ট দিয়ে এই রূপ ধর্মাচরণ বরদাস্ত করেননি ব্রিটিশেরা। তারা বিরোধীতা করতে শুরু করে। কিন্তু এত সহজে এদেশে কিছুই হয় না।

তার আগে জেনে নেওয়া যাক চড়ক বিরোধীতার শুরুর কথা। কলকাতার উত্তরে চড়ক ডাঙায় চড়কের আসর বসত। খাস উত্তর কলকাতার জোড়াবাগান এলাকায় জাঁকিয়ে হত চড়ক ঘোরার অনুষ্ঠান। আজও ছাতু বাবুর বাজার অর্থাৎ বিডন স্ট্রিট সংলগ্ন ডাক ঘরের পাশে চড়ক পালিত হয়। চৈত্র সংক্রান্তির আগের দিন পুকুর থেকে সেটি তুলে এনে চড়ক তলায় গাছ বসানো হয়। তাপর শুরু হয় ঘোরা। কিন্তু এমন উৎসবের মধ্যে মিশে রয়েছে বীভৎসতা। গায় বড়শি গেঁথে ঘোরা, বঁটি ঝাঁপ দেওয়া, আগুনে হাঁটা এগুলিই ছিল চড়কের অঙ্গ। ১৮৬৩-তে চড়ক নিয়ে গোল বাঁধল বঙ্গে। স্যার সিসিল বিডনের উদ্যোগে ব্রিটিশ সরকার আইন করে চড়ক পালন বন্ধ করে দিয়েছিল। যদিও কোন কোন ঐতিহাসিকের মতে, ১৮৬৫ সালে ব্রিটিশ সরকার আইন প্রণয়ন করে এটি বন্ধ করে দিয়েছিল।

কিন্তু আইনের বিরুদ্ধাচরণ করেন বিপ্লবীরা, তারা বললেন চড়ক চলবে। আত্মত্যাগ, সাহস, বীভৎসতার আর সহিষ্ণুতার, এক অমোঘ বানী এই পুজোর রীতিতেই খুঁজে পেয়েছিল অগ্নি যুগের বিপ্লবী তরুণ সমাজ।
আজও গ্রামবাংলার অনেক স্থানেই চিরাচরিত চড়ক পুজো পালিত করা হয়। মূলত কৃষিপ্রধান অঞ্চলগুলিতে চড়ক উৎসব বেশি করে পালিত হয়। কলকাতাতে আজও চড়কের মেলা বসে, যেখানে চড়কের মেলা বসে সেই রাস্তাটার নাম বিডন স্ট্রিট। সিসিল বিডনের নামে রাস্তাটির নামকরণ করা হয়েছে।