সুস্থতার হারে দেশের পরিসংখ্যান কে টেক্কা দিচ্ছে বাংলার জেলাগুলো
করোনা মোকাবিলায় কেন্দ্রের রাজনীতি যে অভিযোগের দস্তাবেজেই বন্ধ থেকে যাবে, আরও একবার তার প্রমাণ রাখল বাংলা। লাখে লাখে পরিযায়ী শ্রমিকরা পরিকল্পনাহীনভাবে জেলায় জেলায় ঢুকতে শুরু করায় সংক্রমণের মাত্রা লাগাম ছাড়িয়েছিল। আর তখনই বিরোধীরা দাঁত-নখ বের করে একের পর এক অভিযোগ দেগেছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে। কিন্তু পরিস্থিতি বদলে দিয়েছে রাজ্য সরকার। কারণ, করোনা সংক্রমণের পর সুস্থতার হারে দেশের পরিসংখ্যানকে টেক্কা দিচ্ছে এ রাজ্যের জেলাগুলি। কলকাতা এবং সংলগ্ন চারটি জেলা বাদ দিয়ে গোটা রাজ্যেই সংক্রমণের চেয়ে সুস্থতার হার অনেক বেশি।
সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর বিশ্বজুড়ে আক্রান্ত ও মৃত্যুর বহর দেখে এদেশেও আতঙ্ক বাড়ছিল। কিন্তু করোনা রোগীরা সুস্থ হতেই ভয় অনেকটা কাটতে শুরু করেছে। গত কয়েকদিনে সারা দেশেই সুস্থতার হার আক্রান্তের হারকে ছাপিয়ে গিয়েছে। শনিবার রাত পর্যন্ত সারা দেশে সুস্থতার গড় হার ৫৬ শতাংশ। আর দেশের এই হারকে টপকে এরাজ্যের গড় সুস্থতার হার ৫৮ শতাংশ। জেলায় জেলায় সুস্থতার হার কিন্তু এর অনেকটাই বেশি। কলকাতা এবং সংলগ্ন চার জেলাকে বাদ দিলে রাজ্যে সুস্থতার হার ৬৮ শতাংশ।
স্বাস্থ্যদপ্তরের দেওয়া বুলেটিন অনুযায়ী শনিবার রাত পর্যন্ত গোটা রাজ্যে সংক্রামিতের সংখ্যা ছিল ১৩ হাজার ৫৩১। আর এই সময়ে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৭৮৬৫ জন। রাজ্যের মধ্যে কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় সংক্রমণ সর্বাধিক। এই জেলাগুলিতে অবশ্য প্রথম থেকেই সংক্রমণ বেশি ছিল। শনিবার রাত পর্যন্ত উত্তরবঙ্গের কোচবিহার থেকে দক্ষিণবঙ্গে পুরুলিয়া পর্যন্ত বাকি ১৮টি জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩৬১২। কিন্তু সেখানে সুস্থ হয়ে উঠেছেন মোট ২৪২৫ জন। অর্থাৎ সুস্থতার হার ৬৮ শতাংশ। ওইদিন পর্যন্ত মাত্র ১১৮৭ জন চিকিৎসাধীন ছিলেন।
এর কৃতিত্ব পুরোটাই রাজ্য সরকারের। পরিযায়ী শ্রমিকরা জেলায় জেলায় ছড়িয়ে যাওয়ায় সংক্রমণ বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু স্বাস্থ্যদপ্তরও দ্রুততার সঙ্গে চিকিৎসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এবং তা কার্যকর করেছে। যার প্রথম ধাপ জেলায় জেলায় নতুন করে করোনা হাসপাতাল তৈরি। পরীক্ষার রিপোর্ট দ্রুত পেতে বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ, এমনকী জেলা হাসপাতালেও মেশিন বসানো হয়েছে। স্বাস্থ্যদপ্তরের কর্তারা বলেন, সংক্রমণের রিপোর্ট দ্রুত পাওয়ায় চিকিৎসাও তাড়াতাড়ি শুরু হয়েছে। জেলায় জেলায় তারই সুফল মিলেছে। সুস্থতার হার বেড়েছে।
কিছু জেলার পরিসংখ্যান আরও ইতিবাচক। কোচবিহারে আক্রান্ত হয়েছিলেন ২৮৮ জন, আর সুস্থ মোট ২৫৩। তেমনই উত্তর দিনাজপুরে ২৩২ জনের মধ্যে ২০৮ জন, মুর্শিদাবাদে ১৮৫ জনের মধ্যে ১৪৬ জন, বীরভূমে ২৮০ জনের মধ্যে ২২৯ জন, পূর্ব বর্ধমানে ১৪৯ জনের মধ্যে ১১২ জন সুস্থ হয়েছেন। বিশেষভাবে উল্লেখ্য পুরুলিয়া এবং ঝাড়গ্রাম জেলা। পুরুলিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন ৮৭ জন। আর সুস্থ হয়েছেন ৮৪ জন। আর ঝাড়গ্রামে ১৯ জনের মধ্যে ১৮ জনই সুস্থ হয়ে গিয়েছেন। যদিও জেলা থেকে প্রাপ্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সুস্থ হওয়া রোগীর সংখ্যা আরও বেশি। যেমন পূর্ব বর্ধমান। সরকারি হিসেবে এই জেলায় ১১২ জন সুস্থ হলেও জেলা প্রশাসন বলছে, সংখ্যাটা হবে ১২৯। যা পরবর্তী বুলেটিনে আপডেট হবে। একইভাবে বাঁকুড়ায় ১৩৯ জনের হিসেব মিললেও জেলা স্বাস্থ্যদপ্তর জানাচ্ছে, সুস্থ হয়েছেন ১৫৭ জন। অর্থাৎ পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট, ধীরে ধীরে করোনা জয়ের পথেই এগচ্ছে বাংলা।