বাংলা আবাস যোজনার প্রথম পর্যায়ের ৩,৫০০ কোটি টাকা দিল না কেন্দ্র
কেন্দ্রীয় বঞ্চনার তালিকায় নতুন সংযোজন বাংলা আবাস যোজনা। ২০২০-’২১ অর্থবর্ষে এই প্রকল্পে রাজ্যে ৯ লক্ষ ২৩ হাজার বাড়ি তৈরির অনুমোদন মিলেছে। তারই প্রথম পর্যায়ে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক থেকে আসার কথা ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। তবে সবই কাগজেকলমে। গরিব মানুষের বাড়ি তৈরির কাজ রয়ে গিয়েছে সেই তিমিরেই! কারণ, টাকার দেখা নেই। নতুন অর্থবর্ষ শুরুর পর ৮০ দিন কেটে গিয়েছে। কিন্তু কেন্দ্র থেকে এক টাকাও আসেনি। ফলে বাড়ি তৈরির কাজও এগয়নি। কেন্দ্রের এই গড়িমসিতে সবথেকে বিপদে পড়েছেন মাথার উপর পাকা ছাদ না থাকা মানুষরা। ইতিমধ্যে একাধিকবার কেন্দ্রীয় আধিকারিকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলেছেন রাজ্য পঞ্চায়েত দপ্তরের কর্তারা। প্রাথমিক পর্যায়ের টাকা দেওয়ার অনুরোধ করেছেন। কাজ হয়নি। বিষয়টিকে কেন্দ্রীয় বঞ্চনা ছাড়া কিছুই বলতে রাজি নন রাজ্য সরকারের শীর্ষ আধিকারিকরা।
বাংলা আবাস যোজনায় বাড়ি তৈরির জন্য ৬০ শতাংশ টাকা দেয় কেন্দ্রীয় সরকার। ৪০ শতাংশ আসে রাজ্যের কোষাগার থেকে। ম্যাচিং গ্রান্ট হিসেবে। দারিদ্র্যসীমার নীচে থাকা গৃহহীন বা মাটি-দরমার বাড়িতে বসবাসকারীদের পাকা বাড়ি নির্মাণের জন্য আর্থিক সুবিধা প্রদান করা হয়। পাকা বাড়ি অর্থাৎ, একটি শোওয়ার ঘর, রান্নার জায়গা, বারান্দা এবং শৌচাগার। এই যোজনায় বাড়ি তৈরির নিরিখে বেশিরভাগ রাজ্যের থেকেই এগিয়ে পশ্চিমবঙ্গ। গ্রামীণ এলাকায় প্রতিটি বাড়ির জন্য ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়। জঙ্গলমহলের চারটি জেলায় অবশ্য মেলে ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা। নোডাল এজেন্সি হিসেবে দায়িত্বে থাকে পঞ্চায়েত দপ্তর। এবার কেন্দ্র টাকা না দেওয়ায় স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে নিজেদের অংশও দিতে পারছে না নবান্ন। ফলে বাড়ির কাজ সময়ে শেষ করা নিয়েও সংশয় থাকছে।
পঞ্চায়েত দপ্তর সূত্রে খবর, গত অর্থবর্ষে ১০ লক্ষ ৮৩ হাজার বাড়ি তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছিল। গত ৩১ মার্চের মধ্যে সেই নির্মাণ কাজ শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি ও লকডাউনের জেরে কাজ থমকে যায়। ২২ এপ্রিলের পর সেই কাজ শুরু হয়েছে। এখনও পর্যন্ত ১০ লক্ষ ১৮ হাজার বাড়ির কাজ শেষ হয়েছে। আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত গত অর্থবর্ষের বাড়ি তৈরির কাজ সরকারি ওয়েবসাইটে নথিভুক্ত করা যাবে। আধিকারিকরা জানিয়েছেন, গত অর্থবর্ষে এই খাতে কেন্দ্রীয় অনুদান এসেছে প্রায় ৬ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। সেই অনুযায়ী রাজ্যের অংশও মিটিয়ে দিয়েছে সরকার। আরও হাজার কোটি টাকা কেন্দ্রের দেওয়ার কথা। জানা গিয়েছে, গত আর্থিক বছরের অনুদান থেকে প্রায় ৫০ হাজার বাড়ির প্রথম কিস্তির টাকা মিটিয়েছে পঞ্চায়েত দপ্তর। কাজ হয়েছে বলতে এটুকুই।
আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বহু বাড়ি। সেগুলিও বাংলা আবাস যোজনার অধীনে পুনরায় বাসযোগ্য করে তোলার কথা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিকে, লকডাউনের জেরে বহু নির্মাণ শ্রমিক কাজ হারিয়ে রাজ্যে ফিরে এসেছেন। ফলে আবাস যোজনার কাজ থাকলে তাঁদের রুজি-রুটির কিছুটা হলেও সুরাহা হবে। কিন্তু টাকা না এলে তা সম্ভব নয়।
টাকা না দেওয়ার পিছনে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের বক্তব্য অবশ্য আলাদা। এই প্রকল্পে দীর্ঘদিন ধরেই অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। যা রুখতে কড়া সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রক ও পঞ্চায়েত দপ্তর। তা হল, টাকা কোনও জেলা বা ব্লক প্রশাসনের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা দেওয়া যাবে না। সেগুলি বন্ধ করে দিতে হবে। সরাসরি উপভোক্তার অ্যাকাউন্টে যাবে টাকা। দপ্তর সূত্রে খবর, নিয়ম কার্যকর হলেও জেলা-ব্লক স্তরে এমন প্রায় ১৫০টি অ্যাকাউন্ট এখনও চালু রয়েছে। তাতে টাকাও রয়েছে। মন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে, সেগুলি আগে বন্ধ করতে হবে। তবেই আসবে প্রথম পর্যায়ের টাকা।