উত্তরবঙ্গ বিভাগে ফিরে যান

কালবৈশাখীর হানায় লন্ডভন্ড উত্তরবঙ্গের তিন জেলা, ক্ষতিগ্রস্ত ৭৫০০ বাড়িঘর

April 19, 2022 | 2 min read

ছবি সৌঃ ক্যালকাটা টিভি

কালবৈশাখীর তাণ্ডবে উত্তরবঙ্গের তিন জেলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হল। রবিবার সন্ধ্যায় কোথাও ১৫ মিনিট, আবার কোথাও আধঘণ্টা ঝড়ের তাণ্ডব চলে। এর জেরে আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার ও জলপাইগুড়ি জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় সাড়ে সাত হাজার বাড়ি। শুধু তাই নয়, বহু স্কুল ও কয়েকশো বিঘা জমির ফসল তছনছ হয়েছে। আরও দু’দিন ঝড় চলবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর। গ্রামবাসীরা এ নিয়ে রীতিমতো আতঙ্কিত। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সতর্ক প্রশাসন। এদিকে ত্রাণের দাবিতে সোমবার মাথাভাঙায় রাস্তা অবরোধ করেন ভুক্তভোগী বাসিন্দারা।

ওই সন্ধ্যায় ঝড় ও শিলাবৃষ্টির দাপট সবচেয়ে বেশি ছিল আলিপুরদুয়ার জেলায়। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মাত্র ১৫ মিনিটের ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ফালাকাটা ব্লকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪৫০০ বাড়ি। এরমধ্যে ফালাকাটা পুরসভা এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির সংখ্যা প্রায় ১৫০০। পুর এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত স্কুলবাড়ির সংখ্যা ২৬টি। যদিও বেসরকারি হিসেবে গোটা ব্লকে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি ও স্কুলের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। শিলার আঘাতে অনেক বাড়ির টিনের চাল ফুটো হয়ে গিয়েছে। শিলার ওজন ছিল আড়াই থেকে তিন কেজি। শিলার আঘাতে কয়েকজন জখম হন। ঝড়ের দাপটে কোথাও উড়ে গিয়েছে বাড়ির চাল। ক্ষতিগ্রস্তরা ত্রিপল টাঙিয়ে কোনওরকমে দিন কাটাচ্ছেন। অনেকে আবার আশ্রয় নিয়েছেন প্রতিবেশীর বাড়িতে।

পুরএলাকা ছাড়াও ব্লকের ময়রারডাঙা, জটেশ্বর-১, ধনীরামপুর-১, ২, দেওগাঁ ও গুয়াবরনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের বিস্তীর্ণ এলাকার টিনের বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিলাবৃষ্টিতে। ছ’টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার পাট, ভুট্টা খেত ও অন্যান্য কৃষিজ ফসল পুরোপুরি তছনছ হয়ে গিয়েছে।

ফালাকাটার বিডিও সুপ্রতীক মজুমদার বলেন, ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে পুর ও পঞ্চায়েত এলাকায় ৪৫০০ কাঁচাবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রিপল ও ত্রাণসামগ্রী বিলি করা হয়েছে। ফালাকাটা পুরসভার চেয়ারম্যান প্রদীপ মুহুরি বলেন, এটা নতুন পুরসভা। প্রয়োজনের তুলনায় ত্রাণ কম। টাকা নেই। চোখের সামনে সব দেখার পরও কিছু করতে পারছি না। এখন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একমাত্র ভরসা।

কোচবিহার জেলার মাথাভাঙা-২ ব্লকেও ঝড়ের দাপট ছিল যথেষ্ট। ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বড় শৌলমারি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা। ওই এলাকায় প্রায় ৩০০ বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নষ্ট হয়েছে প্রচুর জমির ভুট্টা। বোরো ধানে ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সোমবার সকালে স্থানীয় বাসিন্দারা ত্রাণ ও ক্ষতিপূরণের দাবিতে রাস্তা অবরোধ করেন। বিডিও এবং এসডিপিও ঘটনাস্থলে গিয়ে বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে অবরোধ তোলেন। ওই রাতে মেখলিগঞ্জেও ঝড় হয়। মাথাভাঙা মহকুমা কৃষি আধিকারিক শ্যামলকুমার সাহা বলেন, ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে চাষের ক্ষয়ক্ষতির হিসেব করা হচ্ছে।

জলপাইগুড়ি জেলার মালবাজারেও তাণ্ডব চালায় কালবৈশাখী। প্রায় ৩০ মিনিট ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে নাগরাকাটা ব্লকের সুলকাপাড়া ও লুকসান গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় আড়াই হাজার বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শুধুমাত্র লুকসান গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার গ্রাসমোড় চা বাগানের ১ নম্বর লাইনে ১৬০০ শ্রমিক আবাস কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সুলকাপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার ঘাসমারিতে ৩০০, ছাড়টণ্ডুতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩০০ বাড়ি। খয়েড়বাড়িতে ২৫০, মঙ্গরুপাড়া ২৫০ বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিডিও বিপুলকুমার মণ্ডল বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ত্রাণ বিলি করা হয়েছে। এদিকে সিকিম কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দপ্তরের অধিকর্তা গোপীনাথ রাহা বলেন, উত্তরবঙ্গে বাতাসের উপরিভাগে নিম্নচাপ অক্ষরেখা বিস্তৃত রয়েছে। যার প্রভাবে আরও ক’দিন বজ্রবিদ্যুৎ সহ ঝড় ও শিলাবৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#North Bengal, #Kalboishakhi

আরো দেখুন