ভারতীয় সমাজে আজও বৈষম্যর শিকার বিধবারা
প্রাচীন ভারতীয় সমাজে স্বামীর মৃত্যুর পর বিধবা নারীদের জীবনে যন্ত্রণার প্রধান কারণ হিসেবে দেখা যায় সামাজিক বৈষম্য। একদিকে সামাজিক, ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে তাদের অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ ছিল অলিখিত নিয়মে। দ্বিতীয়বার বিয়ের কথা তো ভাবাই যেত না।
স্বামী হারানো এইসব কন্যাদের হিন্দু পরিবারগুলো পাঠিয়ে দিত কাশী, বৃন্দাবন, মথুরাতে। আর সেখানে তাদের পড়তে হতো আরও ভয়াবহ অভিজ্ঞতার মুখে।
কিন্তু পরিবর্তনের এই যুগে ভারতীয় সমাজে বিধবা নারীদের সে অবস্থানের কতটা বদল হয়েছে? সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, অবস্থার উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এখনও ঘটেনি। এমনই প্রেক্ষাপটে আজ পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক বিধবা দিবস।
বিধবাদের প্রতি সামাজিক বৈষম্য, কুসংস্কারাচ্ছন্ন ধ্যান-ধারণা ও অর্থনৈতিক বঞ্চনা নিশ্চিহ্ন করার লক্ষ্য সামনে রেখেই জাতিসংঘ ২০১১ সাল থেকে ২৩ জুনকে আন্তর্জাতিক বিধবা দিবস ঘোষণা করে। একইসঙ্গে বিধবা নারীদের জীবন থেকে যৌন নির্যাতন ও শোষণের ঝুঁকি দূর করা এবং সম্পদ ও অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা অর্জনে বাধা দূর করা দিনটি উদযাপনের উদ্দেশ্য।
তবে, ভারতীয় সমাজে বিধবা নারীদের অবস্থানের উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক পরিবর্তন এখনও হয়নি। এখনও যে কোনও সামাজিক বা ধর্মীয় মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানে বিধবা নারীদের অংশগ্রহণ সহজভাবে নেয়া হয় না। অতীতে কাশি বা মথুরায় যাদের পাঠিয়ে দেয়া হত তাদের প্রধান অংশের নিয়তি হয়ে দাঁড়াত ভিক্ষাবৃত্তি কিংবা পতিতাবৃত্তি। এখন এই কাশী-বাসী হওয়ার ধারা কমেছে। তবে তাদের দুর্দশা কমেনি।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ব্যাপক প্রচেষ্টার ফলে ব্রিটিশ শাসনামলে বিধবা বিবাহের বিষয়ে আইন হয় বটে, তবে ভারতীয় পুরুষেরা বিধবা বিবাহের ক্ষেত্রে বর্তমান যুগে এসেও সংস্কারমুক্ত হতে পারছেন না। দ্বিতীয়বার বিয়ের ক্ষেত্রেও সামাজিক চিন্তাধারার খুব একটা উন্নতি হয়নি। বিধবা নারীদের দ্বিতীয়বার বিয়ে হচ্ছে কেবল বিপত্নীক পুরুষদের সাথেই।
এছাড়া যে সমস্ত নারীর সম্পদ বা আর্থিক সংস্থান আছে তাদেরকে হয়তো বিয়ে করতে আগ্রহী হচ্ছেন কেউ কেউ। প্রগতিশীল চিন্তায় অনুপ্রাণিত হয়ে বিধবা নারীকে বিয়ের ক্ষেত্রে আগ্রহ দেখা যায় না। তবে কি সমাজের প্রয়োজন আরও এক বিদ্যাসাগরের?