কলকাতা বিভাগে ফিরে যান

ব্রডব্যান্ড পরিষেবায় বিএসএনএল-সঙ্গী স্থানীয় কেব্‌লওয়ালা

June 23, 2020 | 3 min read

কোভিড-এর কারণে ‘নিউ নর্মাল’ পরিস্থিতিতে কলকাতা ও তার সংলগ্ন এলাকায় ফাইবার-টু-হোম (এফটিটিএইচ) ব্রডব্যান্ডের বাজার যে বিপুল হারে বাড়ছে, তার একটা বড় অংশ নিজেদের দখলে নিয়ে আসাকে পাখির চোখ করেছে বিএসএনএল কলকাতা। আর সেই কারণে কলকাতা ও তার সন্নিহিত এলাকায় গ্রাহকদের নির্দিষ্ট ঠিকানায় এফটিটিএইচ ব্রডব্যান্ড সংযোগ দিতে ইতিমধ্যেই প্রায় ৬৫টি কেব্‌ল অপারেটর সংস্থা ও বেকার তরুণী-তরুণীদের ডিএসএ-র সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছে কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিকম সংস্থাটি।

তাদের এই সহযোগীরাই বিএসএনএল এফটিটিএইচ ব্রডব্যান্ডের বিপণন, সংযোগ থেকে লাইনের রক্ষণাবেক্ষণ— সমস্ত কিছু করবে। বিএসএনএল সরাসরি কিছু করবে না। বিএসএনএল গ্রাহকদের সবথেকে বড় অভিযোগ, রক্ষণাবেক্ষণ ক্ষেত্রে দ্রুত পরিষেবা না পাওয়া। ব্রডব্যান্ড একবার খারাপ হলে, কবে যে তা সারাই হবে, সে অনিশ্চিত। সেই কারণে, বিএসএনএল ব্রডব্যান্ড সংযোগ নিতে অনেক গ্রাহকেরই অনীহা রয়েছে। কিন্তু, এফটিটিএইচ ব্রডব্যান্ড ব্যবসায় যে নয়া মডেল আনা হয়েছে, তাতে যেহেতু স্থানীয় কেব্‌ল অপারেটর বা ডিএসএ-রাই রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকবে, তাই ওই সমস্যা থেকে গ্রাহকরা নিস্তার পাবেন বলে বিএসএনএলের দাবি।

বিএসএনএল কলকাতার চিফ জেনারেল ম্যানেজার বিশ্বজিৎ পালের কথায়, ‘এপ্রিল মাসে আমরা এই নয়া মডেল নিয়ে এসেছি। করোনা লকডাউনের জন্য প্রথম দু’মাস সে ভাবে এগোনো যায়নি। তবে এখনও পর্যন্ত আমরা প্রায় ৬৫টি কেব্‌ল অপারেটর ও ডিএসএ-র সঙ্গে রেভিনিউ শেয়ারিং চুক্তি স্বাক্ষর করেছি। নিউ নর্মাল পরিস্থিতিতে ওয়ার্ক-ফ্রম-হোম ও স্কুল-কলেজের অনলাইন পড়াশোনার জন্য ফিক্সড লাইন ব্রডব্যান্ডের বিপুল চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে এবং তা মেটাতে আগামী ৩১ মার্চের মধ্যে আমাদের লক্ষ্য সহযোগীদের মাধ্যমে মোট ৫০,০০০ নয়া এফটিটিএইচ ব্রডব্যান্ড সংযোগ দেওয়া।’

মাসিক ৪৯৯ টাকা (কর ব্যতীত) থেকে শুরু করে গ্রাহকদের জন্য মোট ২০টি ‘ভারত ফাইবার’ মাসুল প্ল্যান এনেছে বিএসএনএল। প্রথমটিতে ৪০ এমবিপিএস স্পিডে মাসে সর্বোচ্চ ৩০০ জিবি পাওয়া যাবে। ৩০০ জিবি ডেটা ব্যবহার করার পরে স্পিড নেমে আসবে ১ এমবিপিএস-এ। বাকি প্ল্যানগুলিতে ১০ এমবিপিএস থেকে ১০০ এমবিপিএস গতি মিলবে। পাশাপাশি, সমস্ত প্ল্যানেই একেবারে নিখরচায় ভারতের মধ্যে যে কোনও অপারেটরের নেটওয়ার্কে আউটগোয়িং কল করার সুবিধা পাবেন গ্রাহকরা। এ জন্য অবশ্য গ্রাহককে নিজের খরচে হ্যান্ডসেট কিনতে হবে। ভারতে এখনও পর্যন্ত রিলায়েন্স জিও গিগাফাইবার ও এয়ারটেল এক্সট্রিম ফাইবার-এর এই কম্বো পরিষেবা রয়েছে। জিও এবং এয়ারটেলে ওই এফটিটিএইচ ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্কে টিভি দেখারও সুযোগ রয়েছে এবং টিভি দেখলে যে ডেটা খরচ হয়, তা গ্রাহকের ডেটার কোটা থেকেই কাটা যায়। বিএসএনএলের ক্ষেত্রে টিভি দেখার সুযোগ না থাকলেও টাকার অঙ্কে বিএসএনএলের এফটিটিএইচ ব্রডব্যান্ডের মাসিক মাসুল বাকি দুই সংস্থার থেকে অনেকটাই কম বলে মত বিশেষজ্ঞদের।

ব্রডব্যান্ড পরিষেবায় বিএসএনএল-সঙ্গী স্থানীয় কেব্‌লওয়ালা

গত জানুয়ারিতে স্বেচ্ছাবসর প্রকল্পের পরে বিএসএনএল কর্মী সংখ্যা ৫০ শতাংশেরও বেশি কমে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে গ্রাহক পরিষেবা ঠিকমতো দিতে সংস্থার নাভিশ্বাস ওঠার জোগাড়। সেই কারণেই ব্রডব্যান্ড পরিষেবার সংযোগ থেকে শুরু করে রক্ষণাবেক্ষণ, সমস্ত কিছুর দায়িত্ব কোনও একটি তৃতীয় সংস্থার হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে এক বিএসএনএল আধিকারিক জানিয়েছেন। তাঁর মতে, ‘কেব্‌ল অপারেটর ছাড়াও যেহেতু বেকার যুবক, যুবতীরা বিএসএনএলের ডিএসএ হিসাবে এই কাজে সংযুক্ত হতে পারবেন, তাই অনেক নয়া কর্মসংস্থান সৃষ্টি হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে।’

কলকাতার মূল রাস্তাগুলির ভূগর্ভে বিএসএনএলের ফাইবার অপটিক কেব্‌ল লাইন রয়েছে। সংস্থার বিভিন্ন এক্সচেঞ্জ, বড় আবাসন, শপিং মল, বাজার ইত্যাদি মিলিয়ে বিএসএনএলের নিজস্ব মালিকানাধীন ১৪৪টি অপটিক্যাল লাইন টার্মিনাল (ওএলটি) রয়েছে। এই টার্মিনালগুলি থেকেই এফটিটিএইচ ব্রডব্যান্ডের মূল সংযোগ দেওয়া হয়। কেব্‌ল অপারেটর বা ডিএসএ-র মাধ্যমে সংযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে চার ধরনের রেভিনিউ শেয়ারিং মডেল স্থির করেছে সংস্থাটি।

বিশ্বজিৎ পালের ব্যাখ্যা, ‘প্রথম মডেলে কোনও ওএলটি থেকে গ্রাহকের বাড়ি পর্যন্ত ওভারহেডে গোটা ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্ক টানবে সহযোগী অপারেটর, মোডেম দেবে বিএসএনএল। দ্বিতীয় মডেলে, মোডেমেও অপারেটর সরবরাহ করবে। সহযোগী অপারেটর নিজের জায়গায় ওএলটি বসিয়েও ওভারহেড নেটওয়ার্ক তৈরি করে মোডেম দিতে পারে। আর চতুর্থ মডেলে বিএসএনএল-এর এক্সচেঞ্জে থাকা ওএলটি থেকে গ্রাহকের বাড়িতে সমস্ত নেটওয়ার্ক তৈরি করে মোডেম সরবরাহ ইতাদি সমস্ত কিছুর দায়িত্ব অপারেটরের। তবে সব ব্যবসায়িক মডেলেই গ্রাহকের ব্রডব্যান্ড সংযোগ থেকে নেটওয়ার্কের কোথাও কিছু খারাপ হলে বা তার ছিঁড়লে তা সারাই করার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট অপারেটরের।’

আগে এই সমস্ত কিছুই বিএসএনএল নিজেরা করত। ফলে, ফল্ট হলে তা সারাই করতে যেমন সময় লাগত, তেমনই কয়েক কিলোমিটার দীর্ঘ ওভারহেড ফাইবার অপটিক ছিঁড়ে গেলে তার পরিবর্তে নতুন তার টানতে মিটার প্রতি ১৮-২০ টাকা হিসাবে বিপুল অর্থ খরচ হতো। স্থানীয় সহযোগী কেব্‌ল অপারেটরের মাধ্যমে এই ব্যবসা করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় সংস্থার খরচ যেমন কমবে, তেমনই গ্রাহকরাও অনেক উন্নত পরিষেবা পাবেন বলে রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিকম সংস্থাটি মনে করছে।

বর্তমানে বিএসএনএল কলকাতার ব্রডব্যান্ড গ্রাহক ৭৩,০০০-এর মতো। তাঁদের লাইনেরও রক্ষণাবেক্ষণ করার কাজ অদূর ভবিষ্যতে এই সহযোগী সংস্থাগুলির হাতে তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বিএসএনএলের।

তথ্যসূত্র: এই সময়

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#BSNL, #local cable operators, #fibre broadband services

আরো দেখুন