ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে রদবদল করল আরবিআই
ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের নিয়মে অনেক রদবদল আনল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া (আরবিআই)। শুক্রবার এই সংক্রান্ত নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে তারা। বলা হয়েছে, আগামী ১ জুলাই থেকে নতুন নিয়ম কার্যকর হবে। কোন ধরনের আর্থিক সংস্থা কার্ডের পরিষেবা দিতে পারবে তা যেমন নির্দিষ্ট করে বলা হয়েছে, তেমনই গ্রাহকদের কার্ডের নিয়মাবলি নিয়ে সতর্ক করার বিষয়ে কিছু নীতি মেনে চলার কথা বলা হয়েছে। কোনও গ্রাহক কার্ড ছেড়ে দিতে চাইলে কতটা দ্রুততার সঙ্গে তা করতে হবে বা না করলে কী হারে জরিমানা দিতে হবে সেটাও বলেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক।
তবে ক্রেডিট কার্ড নিয়েই বেশি কড়া মনোভাব দেখিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। বলা হয়েছে, গ্রাহককে কার্ড দেওয়ার আগেই সুদের হার, জরিমানার নিয়ম, পরিমাণ ইত্যাদি লিখিত ভাবে জানিয়ে দিতে হবে। কোনও গ্রাহকের কার্ডের আবেদন বাতিল করা হলে তার কারণও লিখিত ভাবে জানাতে হবে। কখনওই অযাচিত ভাবে কাউকে কার্ড পাঠানো যাবে না। আবার কার্ড থেকে ঋণ ও অন্যান্য সুযোগসুবিধা বাড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রেও গ্রাহকের অনুমতি নিতে হবে। সেটা না মানলে বিলের দ্বিগুণ পরিমাণ টাকা জরিমানা হিসেবে গ্রাহককে দিতে বাধ্য থাকবে সংস্থা। গ্রাহকের কাছ থেকে প্রাপ্য টাকা আদায়ের জন্য কোনও তৃতীয় সংস্থার মাধ্যমে হেনস্থা করা যাবে না। এ জন্য কার্ডের পরিষেবা দেওয়া সংস্থাকে নিজস্ব কর্মী রাখতে হবে।
কোন ব্যাঙ্ক বা আর্থিক সংস্থা কার্ডের পরিষেবা দিতে পারবে তা-ও নির্দিষ্ট করে দিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। বলা হয়েছে, ১০০ কোটি টাকার বেশি সম্পত্তি রয়েছে এমন বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ক কার্ড দিতে পারবে। গ্রামীণ ব্যাঙ্ক যৌথ ভাবে কার্ড চালু করতে পারবে স্পনসর ব্যাঙ্কের সঙ্গে। নন ব্যাঙ্কিং আর্থিক সংস্থা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের অনুমোদন ছাড়া ক্রেডিট কার্ড চালু করতে পারবে না।
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, কোনও ক্রেডিট কার্ড চালু করার ক্ষেত্রে ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড (ওটিপি)-এর পদ্ধতি মানতেই হবে। কোনও গ্রাহক কার্ড পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে তা চালু না করলে সংস্থার পক্ষ থেকে কার্ড বাতিল করা যাবে। এ ক্ষেত্রে গ্রাহকের কাছ থেকে কোনও অর্থ নেওয়া যাবে না। কোনও গ্রাহক যদি প্রদেয় টাকা মাসিক কিস্তিতে (ইএমআই) দিতে চান তবে কত টাকা মূল ও কত টাকা সুদ হিসাবে নেওয়া হচ্ছে তা স্পষ্ট করে গ্রাহককে আগাম জানাতে হবে। পরে গ্রাহককে পাঠানো বিলেও বিস্তারিত উল্লেখ করে দিতে হবে। গ্রাহককে ‘নো কস্ট ইএমআই’ বলে সুদ নেওয়া যাবে না।
কোনও গ্রাহক যদি এক বছরের বেশি সময় কার্ড ব্যবহার না করেন, তবে তা বন্ধ করে দেওয়া যাবে। তবে সেটা করার আগে গ্রাহককে জানাতে হবে এবং অনুমতি নিতে হবে। ৩০ দিনের মধ্যে গ্রাহক অনুমতি না দিলে কার্ড বন্ধ করে দেওয়া যাবে। তবে তার আগে গ্রাহক সব টাকা মিটিয়ে দিতে বাধ্য থাকবেন। ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে রিটেল পারচেজ, ব্যালান্স ট্রান্সফার, ক্যাশ অ্যাডভান্স ইত্যাদি পরিষেবার ক্ষেত্রে কোনটায় কত খরচ তা গ্রাহককে স্পষ্ট করে জানাতে হবে। কোনও লুকানো খরচ রাখা চলবে না। একই সঙ্গে গ্রাহককে জানিয়ে দিতে হবে সর্বনিম্ন প্রদেয় টাকা এবং দেরিতে বিল মেটানোর জন্য কী হারে এবং কতটা জরিমানা দিতে হবে।
কোনও গ্রাহক যদি যাবতীয় বকেয়া মিটিয়ে ক্রেডিট কার্ড ছেড়ে দেওয়ার আবেদন করেন, তবে সাতটি কর্মদিবসের মধ্যে তা বিবেচনা করতে হবে। কার্ড যে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, তা অবিলম্বে গ্রাহককে মেসেজ, ইমেল বা অন্য কোনও উপায়ে জানাতে হবে। যদি সাতটি কর্মদিবসের মধ্যে কার্ড ছেড়ে দেওয়ার আর্জির প্রক্রিয়া শেষ না হয় তবে বিলম্বের জন্য কার্ড-দাতা সংস্থাকে দৈনিক ৫০০ টাকা জরিমানা গুনতে হবে। তবে গ্রাহকের কোনও বকেয়া থাকলে সেই নিয়ম কার্যকর হবে না।