বাংলার পথেই উপাচার্য নিয়োগে রাজ্যপালের ক্ষমতা হ্রাস তামিল নাড়ুতেও
রাজ্যপালের ক্ষমতা খর্ব করে নতুন বিল পাশ করল তামিলনাড়ু বিধানসভা। এর ফলে এবার রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপাচার্য নিয়োগের ক্ষমতা থাকবে রাজ্য সরকারের হাতে।
সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ থেকে শুরু করে তামিলনাড়ু পর্যন্ত অ-বিজেপি রাজ্যেগুলিতে রাজ্যপাল বনাম সরকার সংঘাত তুঙ্গে উঠেছে। অভিযোগ, সাংবিধানিক প্রধানের পদটিকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করছে গেরুয়া শিবির। সোমবার এহেন পরিস্থিতিতে তামিলনাড়ুর বিধানসভায় একটি বিতর্কিত বিল পেশ করে রাজ্যের শাসকদল ডিএমকে। মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিনের নির্দেশেই এই বিল পেশ করা হয়। নয়া বিলটির পক্ষে সদনে যুক্তি পেশ করে স্ট্যালিন বলেন, “প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির রাজ্য গুজরাটেও উপাচার্য নিয়োগ করে রাজ্য। তেলেঙ্গানা ও কর্ণাটকেও উপাচার্য নিয়োগের ক্ষমতা রয়েছে রাজ্য সরকারের হাতেই।”
এদিকে, বিলের পক্ষে মুখ্যমন্ত্রী স্ট্যালিন যুক্তি খাড়া করলেও বিধানসভা থেকে ওয়াকআউট করেন বিজেপি বিধায়করা। তাঁদের অভিযোগ, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত রাজনৈতিক স্বার্থ পূরণে এই পদক্ষেপ করা হয়েছে। সদ্য উটিতে রাজ্যের কেন্দ্রীয় ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপাচার্যদের নিয়ে একটি বৈঠক করেন তামিলনাড়ুর রাজ্যপাল আর এন রবি। এহেন সময়ে তাঁর ক্ষমতা খর্ব করে বিধানসভায় নয়া বিল পাশ হওয়ার বিষয়টি যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। নিয়ম মোতাবেক রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপাচার্য নিয়োগ করেন রাজ্যপাল। তবে সেই নিয়োগপর্বে রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা করেই নির্দিষ্ট প্রার্থীকে দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। প্রাক্তন AIADMK সরকারকে একহাত নিয়ে স্ট্যালিনের অভিযোগ, বিগত চার বছরে উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে মর্জি মাফিক কাজ করেছেন রাজ্যপাল। রাজ্যের সঙ্গে কোনও আলোচনা করা হয়নি। ফলে প্রশাসনিক বিষয়ে যথেষ্ট জটিলতা দেখা দিয়েছে। সবমিলিয়ে এবার তামিলনাড়ুতে রাজ্যপাল বনাম রাজ্য সংঘাত নতুন মাত্রা লাভ করেছে।
উল্লেখ্য, নবান্নর একাধিক নীতি নিয়ে আপত্তি তুলেছেন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা নিয়েও তাঁর সঙ্গে সরকারের মতানৈক্য আছে। শাসকদল তৃণমূল তাঁকে ‘পদ্মপাল’ বলে কটাক্ষ করে। কয়েকমাস আগে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু ধনকড়কে সরিয়ে আচার্য পদে মুখ্যমন্ত্রীকে বসানোর সম্ভাবনা উসকে দিয়েছিলেন। এসবের মাঝে তামিলনাড়ু সরকার রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগের ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছে সেখানকার রাজ্যপালের হাত থেকে। সোমবার তামিলনাড়ু বিধানসভায় এবিষয়ে বিল পাস হওয়ার প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে বাংলায়। প্রশ্ন উঠছে, এবার কি একই পথে হাঁটবে বাংলা?
এই বিষয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গৌতম মাইতি বলেন, “রাজ্যপালরা পদাধিকার বলে রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য হন। ওই পদে কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তিকে বসানো উচিত নয়। শিক্ষাবিদদেরই আচার্য হওয়া উচিত। পাশাপাশি উপাচার্য পদও রাজনীতির উর্ধ্ব থাকা দরকার। শিক্ষক এবং শিক্ষাবিদদের দ্বারাই পরিচালিত হোক শিক্ষাক্ষেত্র। কেন্দ্র এবং রাজ্য উভয়ের হস্তক্ষেপ থাকা উচিত নয়।” কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পার্থিব বসুর বক্তব্য, “উপাচার্য নিয়োগের ক্ষমতা রাজ্যপালের হাতে থাকবে কি থাকবে না, তা বড় কথা নয়। বড় কথা হচ্ছে যিনি নিয়োগ করছেন এবং যিনি নিযুক্ত হচ্ছেন তিনি শিক্ষার সঙ্গে জড়িত কি না। বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থায় আচার্যের ভূমিকা থাকা উচিত। আমাদের দেশে শিক্ষায় সরকারি হস্তক্ষেপ করা হয়। কেন্দ্র এবং রাজ্য দুই সরকারকেই হস্তক্ষেপ থেকে দূরে থাকতে হবে।” রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জয়ন্ত রায় মনে করেন, “দেশের পবিত্র সংবিধানকে সবসময় মেনে চলতে হবে। কোনও রাজ্য যদি না মানে দুর্ভাগ্যের। নীতি বা আইন পরিবর্তন করা যায়। আইন মেনেই তা করতে হয়। রাজনীতির লোকজন আচার্য বা উপাচার্য হোক তা চাই না।”