মৃত্যুর হার কমাতে কুইক রেসপন্স টিম
রাজ্যে করোনা-মুক্তির হার স্বস্তি দিলেও করোনায় মৃত্যুর হার কমানো যাচ্ছে না। এখনও রোজ গড়ে ১০-১২ জন করোনা-আক্রান্তের মৃত্যু হচ্ছে রাজ্যে। পশ্চিমবঙ্গে এখন করোনায় মৃত্যুর হার ৪ শতাংশের আশপাশেই। এই পরিস্থিতিতে করোনা-আক্রান্তদের মৃত্যুহার কমানোকে পাখির চোখ করে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ করল স্বাস্থ্য ভবন।
কী সেই পদক্ষেপ?
গুরুতর অসুস্থ করোনা-আক্রান্তদের চিকিৎসায় বাড়তি গুরুত্ব দিতে স্বাস্থ্য দপ্তর প্রতিটি কোভিড হাসপাতালে ‘কুইক রেসপন্স টিম’ গড়ার নির্দেশ দিয়েছে। কোনও করোনা-আক্রান্ত মারা গেলে সেই মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখতে হাসপাতালের নিজস্ব ব্যবস্থা রয়েছে। তবে সেই ব্যবস্থার পাশাপাশি, করোনা-আক্রান্তর মৃত্যু হলে এ বার তার কারণ খুঁজে দেখবে স্বাস্থ্য দপ্তরের বিশেষ প্রতিনিধি দল।
মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘যে ভাবে হোক, করোনায় আক্রান্তদের মৃত্যুর হার আমাদের কমাতেই হবে। সেই জন্যই হাসপাতালে সঠিক সময়ে রোগীর ভর্তির বিষয়টি নিশ্চিত করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি, এক জন গুরুতর অসুস্থ করোনা রোগীর চিকিৎসার জন্য আলাদা টিম তৈরি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’ স্বাস্থ্য অধিকর্তার কথায়, ‘এই সব ব্যবস্থা নেওয়া সত্ত্বেও যদি কোনও করোনা-আক্রান্তের মৃত্যু হয়, তা হলে তা কেন হল, সেটা আমরা খতিয়ে দেখব। প্রতিটি ঘটনা ধরে ধরে কারণ খুঁজে বার করার চেষ্টা হবে। যেমনটা ডেঙ্গির ক্ষেত্রে করা হয়েছিল। আমাদের টিম হাসপাতালে পৌঁছে গোটা বিষয়টি দিনের দিনই অনুসন্ধান করে দেখবে।’
সোমবারই এই রিভিউয়ের কাজ শুরু করেছে স্বাস্থ্য ভবনের বিশেষ দল। স্বাস্থ্য অধিকর্তা জানান, মঙ্গলবার ডিসান ও সঞ্জীবন কোভিড হাসপাতালে করোনা-আক্রান্তর মৃত্যুর খবর পেয়ে রিভিউ করতে যান স্বাস্থ্য দপ্তরের ওই ‘ডেথ রিভিউ টিমের’ সদস্যরা।
স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের খবর, এমআর বাঙুর হাসপাতালে করোনা-রোগীর মৃত্যুর হার হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় সেখানে একটি ‘কুইক রেসপন্স টিম’ (কিউআরটি) তৈরি করার নির্দেশ দেওয়া হয়। স্বাস্থ্য অধিকর্তা জানাচ্ছেন, ওই টিমের নজরদারির ফলে কোভিড-আক্রান্তের মৃত্যুর হার আশানুরূপ ভাবে কমে এসেছে এমআর বাঙুর হাসপাতালে। এ বার সেই পদক্ষেপকেই ‘মডেল’ করে রাজ্যের ৭৭টি কোভিড হাসপাতালে এই কিউআরটি তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্য ভবনের তরফে।
স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রের খবর, এক জন অ্যানাস্থেটিস্ট, মেডিক্যালের এক জন স্নাতকোত্তর পড়ুয়া, এক জন মেডিক্যাল অফিসার, একজন হাউস স্টাফ এবং এক জন ক্রিটিকাল কেয়ারের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্স থাকবেন কিউআরটি-র দায়িত্বে। রোজ সকালে হাসপাতালে রাউন্ড দেওয়ার পর তুলনামূলক ভাবে খারাপ শারীরিক অবস্থায় থাকা রোগীদের একটি তালিকা সাধারণ চিকিৎসকরা তৈরি করে হাসপাতালের প্রধানকে দেবেন। সেই রোগীদের বাড়তি নজরদারির দায়িত্ব সামলাবে কিউআরটি।
স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘একটি হাসপাতালে ৩০০ জন রোগী ভর্তি থাকলে অবস্থা খারাপ হতে পারে এমন রোগীর সংখ্যা হয়তো হবে ২০-২৫। কিউআরটি-কে সেই ২০-২৫ জনের দায়িত্ব সামলাতে হবে। তাঁদের অবস্থার যাতে অবনতি না-হয়, সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। স্বভাবতই ৩০০ রোগীর জায়গায় ২০-২৫ জন রোগীর দেখভাল করতে একটি টিম থাকলে ওই রোগীরা বাড়তি যত্নও পাবেন।’
শুধু ভর্তি থাকা রোগীই নয়, হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টা ধরে কাজ করা এই কিউআরটি-কে প্রয়োজনে জরুরি বিভাগে আসা মুমূর্ষু রোগীদেরও চিকিৎসা করতে হবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য ভবন।