টেস্ট, ভিজিট আর বেড অস্ত্রে এগিয়ে বঙ্গ
বাড়ি বাড়ি ভিজিট, বিপুল সংখ্যক কোভিড হাসপাতাল তৈরি এবং অল্প সময়ে টেস্টের সংখ্যা ব্যাপক বাড়ানো। রাজ্যের জনস্বাস্থ্য শাখার আধিকারিকরা মনে করছেন, এই তিন পদক্ষেপেই বেশ কিছুটা লাগাম পরানো সম্ভব হয়েছে বাংলার করোনা পরিস্থিতিতে।
নতুন রোগী চিহ্নিতকরণ ও তাঁদের দ্রুত চিকিৎসার পরিকাঠামো গড়ে ওঠার শর্তেই অল্প সময়ে বেশি সংখ্যায় কোভিড রোগীর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরা সম্ভব। হচ্ছেও তাই। প্রতিদিন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা রাজ্যে বাড়লেও পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে করোনামুক্তির সংখ্যাও। এবং সেই সূত্রেই ‘অ্যাক্টিভ কেস’ বা চিকিৎসাধীন রোগী ক্রমাগত নিম্নগামী বাংলায়।
মঙ্গলবার স্বাস্থ্য দপ্তরের বুলেটিনে প্রকাশ, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৭০ জন করোনা আক্রান্তের খোঁজ মেলায় রাজ্যে মোট আক্রান্ত হয়েছে ১৪,৭২৮। আবার ৫৩১ জন রোগমুক্ত হয়ে বাড়িও ফিরেছেন। ফলে করোনাজয়ীর সংখ্যা বেড়ে হল ৯২১৮ জন।
করোনামুক্তির হার ৬২.৫৮%, যা দেশের সার্বিক পরিস্থিতির (প্রায় ৫৬%) চেয়ে ঢের ভালো। অ্যাক্টিভ কেসের সংখ্যাও কমতে কমতে পাঁচ হাজারেরও নীচে (৪৯৩০) এখন। বাড়তে বাড়তে এক সময়ে যা ৫৬৯৩ হয়েছিল গত ১৩ জুন। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, এই বিষয়গুলি তুলে ধরা হতে পারে আজ, বুধবার নবান্নে সর্বদল বৈঠকেও। পাশাপাশি আলোচনা হবে আগামী দিনের পরিকল্পনা নিয়েও। মঙ্গলবার স্বাস্থ্যভবনে ফের বেসরকারি হাসপাতালগুলির সঙ্গেও বৈঠককরেন স্বাস্থ্যকর্তারা।
মাসখানেক আগেও মনে করা হচ্ছিল, বাংলার করোনা পরিস্থিতি বুঝি হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে। ভিন রাজ্য থেকে শ্রমিকদের ঘরে ফেরার সূত্রে সেই আশঙ্কা আরও তীব্র হয়। কিন্তু এখন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্লোগান ‘থ্রি-টি’ বা টেস্ট-ট্র্যাক-ট্রিট মন্ত্রে ভরসা রেখেই মিলেছে অনেকটা সাফল্য। শ্রমিকদের ক্ষেত্রেও কড়া ভাবে এই থ্রি-টি অনুসরণ করা হয়েছে।
সেই সঙ্গে স্বাস্থ্যভবন সূত্রের খবর, রাজ্যের প্রায় পৌনে তিন কোটি বাড়িতে গত কয়েক মাসে পাঁচ-ছ’বার করে ভিজিট করেছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। সেই ভিজিটের মাধ্যমেই ১.৯২ লক্ষ সর্দি-কাশি-জ্বরের (ইলি বা ইনফ্লুয়েঞ্জা লাইক ইলনেস) রোগী এবং ৪৩৩৭ জন সারি (সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইলনেস) রোগীচিহ্নিত হয়েছে।
ইলি ও সারি যেহেতু করোনার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপসর্গ, তাই অনেকের শরীরে সংক্রমণটা চিহ্নিত হয়েছে খুব তাড়াতাড়ি। এমন নজির সারা দেশে নেই বলে সম্প্রতিদাবি করেছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীমমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
রাজ্যের কোভিড ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড কনটেনমেন্ট কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘সব জেলায় যে হারে কোভিড টেস্ট বাড়ানো হয়েছে, তার ফল মিলছে হাতেনাতে। ইলি ও সারি রোগীদের করোনা পরীক্ষা হয়েছে তড়িঘড়ি। টেস্ট পরিকাঠামোর উন্নতিতে করোনা ধরা পড়ছে তাড়াতাড়ি। ফলে হাসপাতালে ভর্তি হলেও জটিলতা হচ্ছে না। দ্রুত সেরে উঠছেন। ফলে বেড অক্যুপেন্সি রেটও কমতে কমতে ২০ শতাংশের কাছাকাছি হয়েছে।’
তবে স্বাস্থ্যকর্তাদের এও মানছেন যে, এখন যেহেতু করোনা পজিটিভ হলেই সবাইকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হচ্ছে না, বাড়ি কিংবা সরকারি ‘সেফ হোমে’ও থাকা যাচ্ছে, তাই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা আক্রান্ত বৃদ্ধির সঙ্গে সমান পাল্লায় বাড়ছে না।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের একাংশ এও বলছেন, রাজ্যজুড়ে দ্রুত কোভিড হাসপাতাল গড়ে তোলার কাজটি অত্যন্ত প্রশংসনীয় ভাবে হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ৭৭টি হাসপাতালকে কোভিড হাসপাতালে রূপান্তর এবং ৯৪৮টি ক্রিটিক্যাল কেয়ার-সহ (৩৯৫টি ভেন্টিলেটরযুক্ত) ১০ হাজারের বেশি কোভিড বেডের ব্যবস্থা হয়েছে খুব দ্রুত। এর ফলেও কমছে মৃত্যুহার।