আজ দিল্লিতে প্রধান বিচারপতিদের সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন মমতা
দেশের প্রায় সবক’টি হাইকোর্টে পর্যাপ্ত বিচারপতি না থাকায় বিচারপ্রক্রিয়া শ্লথ হয়ে পড়ছে। এনিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে এবার দেশের ২৫টি হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিদের উদ্যোগী হতে অনুরোধ জানালেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এম ভি রামান্না। শুক্রবার নয়াদিল্লিতে ৩৯তম প্রধান বিচারপতি সম্মেলনের উদ্বোধন করে সমস্ত হাইকোর্টের প্রধান বিচাপতিদের উদ্দেশ্যে রামান্না বলেন, ‘শীঘ্রই বিচারপতি পদে উন্নীত করার জন্য নামের তালিকা পাঠান। যাতে অতি সত্বর শূন্যপদ পূরণ করে বিচার ব্যবস্থাকে আরও গতিশীল করা যায়।’ প্রতি ছ’বছর অন্তর প্রধান বিচারপতি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এবছর সম্মেলনের আলোচ্য সূচির বিষয়ে প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, ‘যে সব সমস্যার জন্য বিচার প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তা চিহ্নিত করাই হবে এই সম্মেলনের উদ্দেশ্য। পাশাপাশি দেশের আদালতগুলিতে শূন্যপদ পূরণের সমস্যা মিটিয়ে সমস্ত আদালতের মধ্যে সমন্বয় গড়ে তোলার বিষয়টিও হবে অন্যতম আলোচ্য বিষয়।’
এদিকে শনিবারের জয়েন্ট কনফারেন্স অফ চিফ মিনিস্টার্স অ্যান্ড চিফ জাস্টিসেস’এ যোগ দিতে বিদ্যুৎমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসকে সঙ্গে নিয়ে এদিনই দিল্লি পৌঁছেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দেশের অন্য আদালতগুলির মত কলকাতা হাইকোর্টেও পর্যাপ্ত সংখ্যক বিচারপতির অভাবে বিচার ব্যবস্থা মার খাচ্ছে। শুধুমাত্র হাইকোর্টেই দু’লাখের বেশি মামলার বিচারপর্ব বাকি। সুপ্রিম কোর্টের কলেজিয়াম কলকাতা হাইকোর্টে নিয়োগের জন্য ১১ জন বিচারপতির নাম সুপারিশ করলেও তাতে এখনও ছাড়পত্র দেয়নি কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রক। আজ শনিবার সম্মেলনে বিচারব্যবস্থাকে আরও গতিময় করতে এবিষয়গুলি তুলে ধরে বক্তব্য রাখতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতা হাইকোর্টে সর্বমোট ৭২ জন বিচারপতি থাকার কথা। যাঁদের মধ্যে ৫৪ জন স্থায়ী এবং ১৮ জন অস্থায়ী। কিন্তু বর্তমানে হাইকোর্টে রয়েছেন মোট ৩৯ জন বিচারপতি। অর্থাৎ ৩৩ জন বিচারপতি কম। অথচ কলেজিয়ামের সুপারিশ সত্ত্বেও দেশের অন্যতম এই গুরুত্বপূর্ণ হাইকোর্টে বিচারপতি নিয়োগে অনীহা কেন্দ্রের। যার জেরে স্বাভাবিকভাবেই বিচারপ্রক্রিয়া গতি হারাচ্ছে। চলতি মাসের হিসাব অনুযায়ী কলকাতা হাইকোর্টে ২ লক্ষ ২১ হাজার মামলা জমে রয়েছে। যার মধ্যে দেওয়ানি মামলা ১লক্ষ ৮৯ হাজার এবং ৩৬ হাজার ফৌজদারি মামলা রয়েছে। পাশাপাশি নিম্ন আদালতগুলিতে ২৬ লক্ষের বেশি মামলা বকেয়া রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্র বিচারপতি নিয়োগে ছাড়পত্র না দিয়ে ক্রমেই যে পর্বত প্রমাণ মামলা জমবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
অন্যদিকে, এই সম্মেলনকে কেন্দ্র করেই দিল্লিতে বিরোধী মুখ্যমন্ত্রীদের অঘোষিত জোট সাক্ষ্যাৎ হতে চলেছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। সাম্প্রতিক মূল্যবৃদ্ধি থেকে জিএসটি ইস্যু কিংবা রান্নার গ্যাসের দাম বৃদ্ধি। একাধিক ইস্যুতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে বারবার সরব হতে দেখা গিয়েছে। এব্যাপারে যৌথ আন্দোলন গড়ে তুলতে এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে রক্ষা করতে অবিজেপি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের একজোট হওয়ার ডাক দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর আহ্বানে সাড়া দিয়েছেন বিভিন্ন মুখ্যমন্ত্রী। শুক্রবার সন্ধ্যায় মমতার সঙ্গে দেখা করেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী তথা আপ প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়াল। দেশের দুই শীর্ষ বিরোধী নেতা-নেত্রী বেশ কিছুক্ষণ আলোচনাও করেন। সেই পরিসরেই এবার দিল্লির এই সম্মেলনকে উপলক্ষ করে বিরোধী রাজ্যগুলির কোনও সম্মিলিত ঐক্য দেখা যেতে পারে বলেও মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।