রাজ্য বিভাগে ফিরে যান

হ্যাটট্রিকের বর্ষপূর্তি: ‘বাংলার মেয়ের’ হাতে কেমন কাটলো বাংলার গত এক বছর

May 2, 2022 | 3 min read

২০২১ সালের ২ রা মে থেকে ২০২২ সালের ২ রা মে। কেটে গিয়েছে ৩৬৫ দিন। সময় যত গড়িয়েছে, ততই বদল এসেছে বাংলার রাজনীতিতে। বিগত বছর আজকেরদিনেই নীলবাড়ি দখলের লড়াইয়ের রায় প্রকাশ হয়েছিল। বিপুল জনাদেশ ইতিহাস তৈরি করে তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় এসেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলার মানুষ বলেছিল, সে নিজের মেয়েকেই চায়।

অন্যদিকে, দুশো পার করার স্বপ্ন দেখানো গেরুয়া শিবিরের রথ থেমেছিল অনেক আগেই। তারপর থেকেই ক্ষয়ের পালা শুরু বিজেপিতে। পদ্মবনে এখন কাঁটা। শুধুই চলে যাওয়ার পালা। অন্য দিকে, তৃণমূলের জয়ের রথ এগিয়েই চলেছে। তৃতীয় শক্তি হয়ে উঠতে পারেনি কেউই। ভোট মিটতে না মিটতেই ভেঙেছে বাম-কংগ্রেস-আইএসএফ জোটের সংযুক্ত মোর্চা। একটা আসনে জিতলেও রাজ্য রাজনীতি থেকে হারিয়ে গিয়েছেন আব্বাস সিদ্দিকি। শূন্যের গোলকধাঁধায় ঘুরপাক খাচ্ছে কংগ্রেস। ডুবতে ডুবতেও ভেসে থাকার মরিয়া লড়াই চালাচ্ছে সিপিএম। দ্বিতীয় স্থান নিয়ে বাম আর বিজেপির মধ্যে লড়াই চলছে।

রাজ্য রাজনীতির শেষ এক বছরের নির্যাস এটুকুই। এই একটা বছর অনেক কিছুর সাক্ষী। একের পর এক নির্বাচন, উপনির্বাচন, দলবদল, অঘটনে ভরা একটি বছর ২০২১। এ কথা বলাই যায় যে, এই বছরে বারো মাসে তেরো পার্বণের মতো এসেছে নির্বাচন আর আদালতের নির্দেশ। যা নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে একের পর এক তরঙ্গ খেলে গিয়েছে। যা এখনও প্রবহমান। এই একটা বছরে কংগ্রেস ব্যাতিত রাজ্যের বাকি তিন প্রধান রাজনৈতিক দলে সংগঠনেও এসেছে বদল। তৃণমূলের সংগঠনে গুরুত্ব বেড়েছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তিনি দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন। সিপিএমেও নতুন রাজ্য সম্পাদক হয়ে এসেছেন মহম্মদ সেলিম। বিজেপিতে রাজ্য সভাপতি পদে দিলীপ ঘোষের জায়গায় এসেছেন সুকান্ত মজুমদার। সেই সঙ্গে রাজ্য থেকে জেলায় জেলায় বদলেছে দলের কমিটি। তা নিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভে জর্জরিত গেরুয়া শিবির। বিদ্রোহ আর পদত্যাগের মিছিল চলছে।

গত বছরে ভোট গণনার দিন অর্থাৎ ২ মে সকলেও জয় নিয়ে গেরুয়া শিবিরের আশা ছিল তুঙ্গে। বেলা এগোতেই স্পষ্ট হয়ে যায় মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে ফিরছেন মমতাই। তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় আসছে তৃণমূলই। আরও বেশি শক্তি নিয়ে। দিনের শেষে ফল ছিল তৃণমূল ২১৩ আর বিজেপি ৭৭। স্বপ্নভঙ্গ হওয়া গেরুয়া শিবিরের কাছে গর্ব করে বলার মতো ছিল একটাই কথা, নন্দীগ্রামে শুভেন্দু অধিকারীর জয়। টানটান লড়াই শেষে মমতাকে হারানো নিয়ে অবশ্য খুব বেশি উল্লাস দেখাতে পারেনি বিজেপি। কারণ, লক্ষ্যের অনেক অনেক দূরে থমকে যাওয়ার গ্লানিতে বিষাদের মাত্রাই ছিল বেশি। প্রসঙ্গত, নন্দীগ্রাম আসনটির গণনা নিয়ে মামলা চলছে।

বিষাদের সঙ্গে শুরু হয় বিচ্ছেদ পর্ব। ভোটের আগে তৃণমূল থেকে বিজেপিতে আসা নেতারা তখন থেকেই দূরত্ব বাড়ানো শুরু করে দেন। একে একে ঘরে ফিরেছেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে সব্যসাচী দত্তরা। ফিরেছেন আরও অনেকে। মে মাসে ভোটের ফল প্রকাশের পর জুনেই কৃষ্ণনগর উত্তর কেন্দ্র থেকে জয়ী মুকুল রায়ের দলবদল। এরপরে আরও চার বিধায়ক গিয়েছেন তৃণমূলের শিবিরে। ওদিকে দুই সাংসদ জগন্নাথ সরকার ও নিশীথ প্রামাণিকের জেতা শান্তিপুর ও দিনহাটা বিজেপির হাতছাড়া হয়েছে উপনির্বাচনে। ভবানীপুরের উপনির্বাচনে এক অর্থে দাঁড়াতেই পারেনি পদ্ম-শিবির। ভাঙনও থামেনি। দু-বারের সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় দল ছেড়েছেন।সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুর বালিগঞ্জ আসনের তৃণমূল বিধায়ক তিনি। ২০১৪ এবং ২০১৯ সালে জেতা বিজেপির আসানসোলও এখন তৃণমূলের। সব মিলিয়ে পদ্মের সাংসদ সংখ্যা কমে ১৭ আর বিধায়ক সংখ্যা কমে ৭০।

অন্যদিকে শাসক তৃণমূলের সাংসদ সংখ্যা বেড়ে ২৩ আর বিধায়ক সংখ্যা বেড়ে ২২১। তবে এই হিসাবের মধ্যে নেই কলকাতার মানিকতলা। প্রাক্তন মন্ত্রী সাধন পাণ্ডের মৃত্যুতে খালি রয়েছে কলকাতার ওই আসন। রাজ্যে উপনির্বাচনের ইতিহাস জারি থাকলে সেটিও শাসকেরই থাকবে।

শুধু উপনির্বাচনেই নয়, কলকাতাসহ রাজ্যের সব পুরভোটেও পদ্ম ফুল আর ফোটেনি রাজ্যে। কলকাতায় জেতা ওয়ার্ড খুইয়ে দখলে মাত্র তিন। গত লোকসভা বা বিধানসভা নির্বাচনে জেতা এলাকাতেও পুরসভায় দাঁড়াতেই পারেনি গেরুয়া শিবির। খড়্গুপর থেকে শিলিগুড়ি সর্বত্র এক ফল। কেবল তাহেরপুর পুরসভা বামেদের শিবরাত্রির সলতে।

এক বছরে তৃণমূলের এগনোর মাপকাঠি ভোটবৃ্দ্ধি ধরা হলে তার সবচেয়ে বড় নজির হালে জেতা আসানসোলের ফল। যে আসনে কোনও দিনই খাতা খুলতে পারেনি ঘাসফুল, সেখানেই তিন লাখের বেশি ভোটে জয়ী হয়েছে তৃণমূল। এর মাঝেই বাংলার বাইরেও ত্রিপুরা এবং গোয়ায় পা রেখেছে তৃণমূল। ত্রিপুরার পুরভোটে ভোট শতাংশের বিচারে ফল সন্তোষজনক বলেই অভিমত দলের নেতাদের। গোয়ায় ফল একেবারের আশাব্যাঞ্জক নয়। তবে তাতে দমে না গিয়ে উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিতে ডানা মেলছে মমতার দল।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#tmc, #Trinamool Congress, #Battle For Bengal, #bengal politics, #West Bengal, #Mamata Banerjee

আরো দেখুন