তদন্ত শেষ হওয়ার আগে বুঝে গেলেন রাজনৈতিক খুন! স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মন্তব্যে উঠছে প্রশ্ন

এক যুবকের অস্বাভাবিক মৃত্যু। আর সেই ঘটনাকে ঘিরেই শুক্রবার দিনভর তুলকালাম চলল কলকাতার চিৎপুর এলাকার খোসবাগানে

May 7, 2022 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

এক যুবকের অস্বাভাবিক মৃত্যু। আর সেই ঘটনাকে ঘিরেই শুক্রবার দিনভর তুলকালাম চলল কলকাতার চিৎপুর এলাকার খোসবাগানে। সকাল সকাল বাড়ির সামনে রেলের পরিত্যক্ত কোয়ার্টার থেকে উদ্ধার হয় অর্জুন চৌরাসিয়া (২৬) নামে ওই যুবকের ঝুলন্ত দেহ। তারপরই আসরে নেমে পড়েন বিজেপি নেতারা। দেহ আটকে রেখে শুরু হয় মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি। আর তাদের সেই দাপাদাপির কাণ্ডারী হয়ে ওঠেন স্বয়ং দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বর্তমানে তিনি বঙ্গসফরে। তাই দলের তরফে দ্রুত ঘটনাস্থলে নিয়ে আসা হয় তাঁকে। আর তিনি সেখানে এসে ময়নাতদন্তের আগেই সাফ জানিয়ে দিলেন, অর্জুনকে খুন করা হয়েছে। দাবি তুললেন সিবিআই তদন্তেরও। কোনও তদন্ত ছাড়া কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কীভাবে এমন কথা বলতে পারেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস।

নিহতের পিসতুতো দাদা বিনোদ কুমার বারুইয়ের দাবি, বিজেপির সঙ্গে তাঁর ভাইয়ের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। অর্জুন পেশায় গেঞ্জি কারখানার কর্মী। বিধানসভা ভোটের পর কিছুদিন ঘরছাড়াও ছিলেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাতটায় কাজ থেকে বাড়ি ফেরেন অর্জুন। সঙ্গে ছিল বেতনের ১১ হাজার টাকা। টিফিনবক্স রেখে বেরিয়ে যান। রাত পর্যন্ত না ফেরায় তাঁর মোবাইলে ফোন করেন বাড়ির লোকজন। কিন্তু ফোন বেজে যায়। রাতে চিৎপুর থানার দ্বারস্থ হয় পরিবার। মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন পরীক্ষা করে পুলিস জানায়, বাড়ির আশেপাশেই আছেন তিনি।

এদিন সকালে ফের থানায় যান পরিবারের সদস্যরা। এই সময় পরিত্যক্ত রেল কোয়ার্টার থেকে খড় আনতে গিয়ে এক খাটাল মালিক ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান অর্জুনকে। ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন চিৎপুর থানার অফিসাররা। পুলিসের প্রাথমিক অনুমান, আত্মঘাতী হয়েছেন অর্জুন। এরপরই আসরে নেমে পড়েন বিজেপি নেতৃত্ব। পুলিস দেহ উদ্ধার করতে গেলে শুরু হয় ধস্তাধস্তি। দীর্ঘ পাঁচ ঘণ্টা তাদের আটকে রাখা হয়। শেষপর্যন্ত ঘটনাস্থলে বিশাল বাহিনী নিয়ে এসে বিজেপি কর্মীদের সরান ডিসি সেন্ট্রাল রূপেশ কুমার। দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়।

দুপুর তিনটে নাগাদ ঘটনাস্থলে পৌঁছন অমিত শাহ। পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁর কাছে অভিযোগ জানানো হয়, অর্জুনকে খুন করা হয়েছে। সিবিআই তদন্ত চান তাঁরা। ওই দাবিতে সায় দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও। সেইসঙ্গে ঘটনা নিয়ে রাজ্যের কাছে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে বলেও জানান। সূত্রের খবর, নবান্ন থেকে এদিন রাতেই রিপোর্ট দিল্লিতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূলের মহিলা কংগ্রেসের সভানেত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মৃত্যু নিয়ে জঘন্য রাজনীতি করছেন। তদন্ত শেষ হওয়ার আগে তিনি কী করে বুঝে গেলেন এটা রাজনৈতিক খুন!’ সেইসঙ্গে তাঁর প্রশ্ন, যেভাবে সকাল থেকে বিজেপি নেতারা, বাইরের লোকেরা ছুটে এলেন তাতে পরিকল্পিত ঘটনা নয় তো? রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূল নেতা ফিরহাদ হাকিমও বলেন, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যদি এভাবে কথা বলেন, তাহলে নিশ্চিতভাবেই তা তদন্তকে প্রভাবিত করবে।  

এদিকে, সিএফএসএল বা কোনও কেন্দ্রীয় সংস্থার তত্ত্বাবধানে মৃতদেহের ময়নাতদন্তের দাবিতে এদিন তড়িঘড়ি হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয় বিজেপি। রাজ্যের তরফে এর বিরোধিতা করা হয়। উভয় পক্ষের বক্তব্য শোনার পর আদালত নির্দেশ দেয়, আলিপুরের কমান্ড হাসপাতালে মৃতদেহের ময়নাতদন্ত হবে। কল্যাণী এইমসের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, আর জি কর হাসপাতালের ফরেন্সিক সায়েন্স বিভাগের প্রধান ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার প্রধান দায়রা বিচারক ময়নাতদন্তের সময় উপস্থিত থাকবেন। গোটা প্রক্রিয়াটির ভিডিওগ্রাফি করার নির্দেশও দেওয়া হয়। এছাড়া কলকাতা পুলিস কমিশনারকে মৃতের পরিবারের লোকজনদেরও যথাযথ সুরক্ষার ব্যবস্থার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen