রাজ্য বিভাগে ফিরে যান

জিটিএ-তেই পাহাড় সমস্যার সমাধান, গোর্খাল্যান্ডের দাবি থেকে পিছু হাঁটল মোর্চা

May 9, 2022 | 2 min read

পৃথক রাজ্য অর্থাৎ গোর্খাল্যান্ডের দাবি থেকে পিছু হাঁটল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। রাজ্যের অধীনে থেকেই পাহাড় সমস্যার সমাধান সম্ভব, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেওয়া ১৫ পাতার স্মারকলিপিতে এমনটাই জানিয়েছে মোর্চা।

রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদলের পর থেকেই পাহাড়ে স্থায়ী শান্তি আনার জন্য নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাহাড় নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোর লেগেই থাকে, পাহাড়ের সমস্যাও দীর্ঘদিনের। বিগত বছরের অক্টোবরে পাহাড়ের এক প্রশাসনিক বৈঠক থেকে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, “আমি চাই পাহাড় সমস্যার স্থায়ী সমাধান হোক।” কোন পথে স্থায়ী শান্তি আসবে পাহাড়ে, কী পথ অবলম্বন করতে, সেই প্রস্তাবও পাহাড়ের প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে দিতে বলেন মমতা। ​এবার সেই সমস্যার চিরস্থায়ী সমাধানের পথ খুঁজতে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে একাধিক প্রস্তাব দিল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা।

সূত্রের খবর আজ ৯ই মে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি, কলকাতায় রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের মারফত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে পাহাড় সমস্যার স্থায়ী সমাধান কীভাবে সম্ভব সেই সংক্রান্ত প্রস্তাব পৌঁছে দিয়েছেন। প্রসঙ্গত, ২০০৭ সালে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা পাহাড় ও তরাই-ডুয়ার্সকে নিয়ে পৃথক রাজ্যের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। এরপর মোর্চা, রাজ্য ও কেন্দ্রের সঙ্গে ২০১১ সালে জিটিএ চুক্তি স্বাক্ষর করে। ২০১১ সালে ১৮ই জুলাই শিলিগুড়িতে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ওই চুক্তিতে বলা হয়েছিল, রাজ্যের অধীনে থাকা জিটিএকে পাহাড়ের সর্বোচ্চ স্বায়ত্তশাসনের অধিকার দেওয়া হবে। বলা হয়েছিল, রাজ্যের অধীনে থেকেই জিটিএ পাহাড় সমস্যার স্থায়ী সমাধান খোঁজার কাজ করবে। এরপরেই জিটিএ নির্বাচন হয়। ২০১২ সালে নির্বাচনে বিমল গুরুঙের নেতৃত্বে জিটিএ’র দখল নেয় মোর্চা। কিন্তু এরপরেও একাধিকবার মোর্চার তরফে পৃথক রাজ্যের দাবি করা হয়, গুরুং জিটিএ ছেড়ে বেরিয়ে আসেন। আবার ফিরেও যান।
এইভাবেই ২০১৭ অবধি দোলাচল চলেছে। তবে মোর্চা তরফে ২০১১ সালে কেন্দ্র, রাজ্য এবং জিটিএ-র মধ্যে যে ত্রিপাক্ষিক চুক্তি হয়েছিল, পৃথক রাজ্য অর্থাৎ গোর্খাল্যান্ডের দাবি জিইয়ে রেখেই মোর্চা তাতে সই করেছিল।

কিন্তু আজ ১৫ পাতার যে প্রস্তাব জমা পড়েছে রাজ্যের কাছে; সেই অনুযায়ী, জিটিএই হল পাহাড় সমস্যার স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধান। যে চুক্তি নিয়ে বারবার প্রশ্ন উঠেছে, যাকে মৃত শিশুর সঙ্গে তুলনা করেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা। মোর্চার দাবি, সেই চুক্তিই সমস্যার সমাধানের পথ বাতলে দেবে। তাদের সাফ কথা, জিটিএ চুক্তিকে সম্পূর্ণভাবে পূরণ করা হোক, অর্থাৎ পাহাড়ের পূর্ণ ক্ষমতা জিটিএ-র হাতে তুলে দেওয়া হোক। তবেই পাহাড় সমস্যার সমাধান সম্ভব।

এ কথা স্পষ্ট হল যে, পৃথক রাজ্য অর্থাৎ গোর্খাল্যান্ডের দাবি থেকে সরে এল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। রাজ্যের মধ্যে থেকেই পাহাড় সমস্যার স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধানের জন্যই সওয়াল করছে তারা। জিটিএ-তেই সমস্যার সমাধান। সেই সঙ্গে জিটিএ-র হাতে আইনি অধিকার, সমস্ত রকম ক্ষমতা দিতে, নিয়োগ থেকে শুরু করে বিচার ক্ষমতা প্রতিটির পূর্ণ অধিকার জিটিএ-র হাতে তুলে দিতে হবে, এমনটাই দাবি মোর্চার। তারপরেই যেন জিটিএ নির্বাচন হয়।

বিগত পাহাড় সফরে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন দ্রুত জিটিএ নির্বাচন হবে, কিন্তু আপাতত জিটিএ নির্বাচন চাইছে না মোর্চা। বিগত বিধানসভা ও পৌর-নির্বাচনে পাহাড়ে বিমল গুরুঙদের রাজনৈতিক ভিত্তি ক্রমশ আলগা হয়েছে। পাহাড়ের ভোট ময়দানে গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে মোর্চা। ফলে মোর্চার পক্ষে এই মুহূর্তে রাজ্যের বিরুদ্ধে গিয়ে আন্দোলন করা কার্যত অসম্ভব। ২০১৭ সালে জুন থেকে মোর্চা যে হিংসাত্মক আন্দোলন শুরু করে। তার পরবর্তীতে বিমল গুরুং, রোশন গিরি, প্রকাশ গিরিদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহীতা, খুনের মামলা রজু রয়েছে। স্মারকলিপিতে মামলা প্রত্যাহারের কথাও উল্লেখ রয়েছে। মোর্চার দাবি জিটিএ চুক্তি পূরণ হয়নি, প্রায় ৯৫ শতাংশ দাবিই পূরণ হয়নি। স্মারকলিপিতে সব উল্লেখ করে মোর্চা জানাচ্ছে, তারা জিটিএতেই থাকতে চান।

তবে মোর্চার এই প্রস্তাব রাজ্য মানবে কি না, বা পাহাড়ের অন্য রাজনৈতিক দলগুলো আদৌ তা সমর্থন করবে কি না; এখন সেটাই দেখার।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Darjeeling, #Gorkha Janmukti Morcha, #Roshan Giri

আরো দেখুন