‘বন্দে মাতরম’ সম্পর্কে এই তথ্যগুলো জানেন কি?
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়-এর লেখা ‘বন্দে মাতরম’ গানটি ১৯৫০ সালে ভারতের জাতীয় স্তোত্রের মর্যাদা পায়। এই গানটিকে ঘিরে রয়েছে অনেক ইতিহাস। যা হয়তো অনেকেরই অজানা।
চলুন দেখে নেওয়া যাক এক গানটিকে ঘিরে থাকা কিছু অজানা তথ্য
১) একাধিক ভারতীয় মুসলিম সংগঠন ‘বন্দে মাতরম’ গাওয়ার বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি করেছেন। তাদের মতে, ভারত মাতার বন্দনা গীতি এই গানটির মূল ভাবনা ইসলাম-নিষিদ্ধ পৌত্তলিকতার অনুসরণ করে।
২) অনুমান করা হয়, ১৮৭৬ সাল নাগাদ ব্রিটিশ সরকারের অধীনে চাকুরিরত অবস্থাতেই ‘বন্দে মাতরম’ রচনার কথা ভেবেছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। ১৮৮২ সালে বঙ্কিমচন্দ্রের আনন্দমঠ উপন্যাসে প্রথম এই গানটি প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে লেখক যদুভট্টকে গানটিতে সুর দেওয়ার জন্যে অনুরোধ করেন।
৩) সংস্কৃততে- ‘বন্দে মাতরম’ কথার অর্থ ‘বন্দনা করি মায়ের’। সংস্কৃত-বাংলা মিশ্রভাষায় লিখিত,এই গানটি দেবী দুর্গার বন্দনাগীতি এবং দেশমাতৃকার একটি জাতীয় মূর্তি কল্পনা করা হয়েছিল। শ্রীঅরবিন্দ ‘বন্দে মাতরম’ গানটিকে ‘বঙ্গদেশের জাতীয় সংগীত’ বলে উল্লেখ করেন।
৪) ‘বন্দে মাতরম’ ব্রিটিশ শাসনের হাত থেকে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের জাতীয় ধ্বনিতে পরিণত হয়। প্রথমে কলকাতা মহানগরীতে প্রধান প্রধান রাজনৈতিক সমাবেশে ‘বন্দে মাতরম’ ধ্বনি দেওয়া শুরু হয়। টিশ সরকার জনসমক্ষে এই ধ্বনি উচ্চারণ নিষিদ্ধ করে দেয়।
৫) ১৮৯৬ সালে বিডন স্কোয়ারে অনুষ্ঠিত জাতীয় কংগ্রেসের কলকাতা অধিবেশনে গানটি পরিবেশন করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। পাঁচ বছর বাদে ১৯০১ সালের কংগ্রেসের কলকাতা অধিবেশনে গানটি পরিবেশন করেন দক্ষিণাচরণ সেন। ১৯০৫ সালে কংগ্রেসের বারাণসী অধিবেশনে গানটি পরিবেশন করেছিলেন সরলা দেবী চৌধুরাণী।
৬) লালা লাজপত রায় লাহোর থেকে ‘বন্দে মাতরম’ নামক একটি সাময়িকপত্র প্রকাশ করতেন। ১৯০৫ সালে হীরালাল সেন ভারতের প্রথম রাজনৈতিক চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেছিলেন; এই চলচ্চিত্রের সমাপ্তি হয়েছিল গানটির মাধ্যমে।
৭) ব্রিটিশ পুলিশের হাতে নিহত হওয়ার আগে মাতঙ্গিনী হাজরার শেষ উচ্চারিত শব্দ ছিল ‘বন্দে মাতরম’।
৮) ১৯০৭ সালে ভিখাজি কামা ভারতের প্রথম জাতীয় পতাকা তৈরী করেছিলেন, তার মাঝের ব্যান্ডে দেবনাগরী হরফে ‘বন্দে মাতরম’ ধ্বনিটি খোদিত ছিল।
৯) ১৯০৯ সালে শ্রীঅরবিন্দ মাদার, আই বাউ টু দি! শিরোনামে ‘বন্দে মাতরম’ গানটির ইংরেজি অনুবাদ করেন। এই অনুবাদটি বহুল প্রচলিত। একাধিকবার এই গানটিতে সুর দেওয়া হয়। ‘বন্দে মাতরম’ সঙ্গীতের পাওয়া প্রাচীনতম অডিও রেকর্ডিংটি ১৯০৭ সালের। সমগ্র বিংশ শতাব্দীতে গানটি প্রায় একশোটি ভিন্ন সুরে রেকর্ড করা হয়েছিল।
১০) ২০০২ সালে বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ দশটি জনপ্রিয় গান নির্বাচনের একটি আন্তর্জাতিক সমীক্ষা চালায়। এই সমীক্ষায় ৭০০০ গানের মধ্যে থেকে এ আর রহমান সুরারোপিত ‘বন্দে মাতরম’ গানটি বিশ্বের দ্বিতীয় জনপ্রিয়তম গান নির্বাচিত হয়।