‘হিন্দু রাষ্ট্রই কী সব সমস্যার সমাধান?’, মোদীদের কটাক্ষ প্রাক্তন বিজেপি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী যশোবন্তের
নাম না করেই বিজেপি সরকারের হিন্দুত্বনীতির কড়া ভাষায় সমালোচনা করলেন প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেতা যশোবন্ত সিনহা। দিন কয়েক ধরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সাম্প্রদায়িক সমস্যা মাথা চাড়া দিয়েছে। এ সমস্ত কিছুকেই কেন্দ্রীয় সরকারের চাল বলেই ইঙ্গিত করলেন প্রাক্তন এই বিজেপি নেতা। ব্যঙ্গের ছলে ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র ঘোষণা করে দেওয়ার পরামর্শ দিলেন তিনি। আর কী বললেন প্রবীণ এই নেতা?
দীর্ঘ অতিমারি পর্ব, লকডাউন- সব মিলিয়ে মুখ থুবড়ে পড়েছিল ভারতীয় অর্থনীতি। করোনার ফাঁড়া কিছুটা কাটলেও অর্থনীতিতে উন্নতির চিহ্নমাত্র নেই। বরং দিনকে দিন আরও খারাপ হচ্ছে পরিস্থিতি। রেকর্ড মাত্রা ছুঁয়েছে পেট্রোল-ডিজেল-সহ জ্বালানির দাম। গতসপ্তাহে এক ধাক্কায় ৫০ টাকা বেড়ে গিয়েছে রান্নার গ্যাসের দাম। পেরিয়ে গিয়েছে এক হাজার টাকার কোঠাও। কয়লা সঙ্কট এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে বন্ধ রাখতে হয়েছে একাধিক রেল পরিষেবা। এর মধ্যে সোমবার ফের টাকার দামে রেকর্ড পতন হয়েছে। সব মিলিয়ে দেশের অর্থনীতির অবস্থা যে দিনকে দিন শোচনীয় জায়গায় পৌঁছেছে, তা বলাই বাহুল্য।
অন্যদিকে, দিন কয়েক ধরেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কানে আসছে সাম্প্রদায়িক অশান্তির খবর। দিল্লি, মধ্যপ্রদেশ থেকে শুরু করে রাজস্থান-সহ একাধিক জায়গায় ছড়িয়েছে হিংসা। তার উপর লাউডস্পিকার বিতর্ককে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে দানা বেঁধেছে অশান্তি। মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, উত্তরপ্রদেশ-সহ বেশ কিছু রাজ্যে বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা। আবার বারাণসীর জ্ঞানবাপী মসজিদ বিতর্ক ও কৃষ্ণ জন্মভূমি-ইদগা মসজিদ মামলা ঘিরেও অশান্তির আঁচ করছে প্রশাসন। এর মধ্যে উসকে উঠেছে হিন্দি ভাষা বিতর্কও। এদিকে, বঙ্গসফরে এসে সিএএ বিতর্ককে ফের উস্কে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। যা শোনার পর থেকেই উদ্বেগ ঘনীভূত হয়েছে সাধারণ মানুষের মনে।
দেশের আসল সমস্যাগুলি থেকে সাধারণ মানুষের নজর ঘোরাতেই আসলে হিন্দুত্বের তাস খেলছে কেন্দ্রে আসীন বিজেপি সরকার। নাম না করে সেদিকেই এবার ইঙ্গিত করলেন প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেতা যশবন্ত সিনহা। দিন কয়েক আগেই গ্যাসের দামবৃদ্ধি নিয়ে তোপ দেগেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপির শাসনকে ব্রিটিশ শাসনের সঙ্গে তুলনা করেন তিনি। রান্নার গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির পদক্ষেপকে ‘গ্রেট ইন্ডিয়ান লুট’-এর সঙ্গেও তুলনা করেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর দেখানো পথেই কেন্দ্রের বিরোধিতায় সুর চড়িয়েছেন একাধিক তৃণমূলের মন্ত্রী ও নেতা-কর্মীরা।
টাকার দামের রেকর্ড পতন নিয়ে মঙ্গলবার কেন্দ্রকে ফের একহাত নিলেন যশবন্ত। এদিন টুইটারে নাম না করেই বিজেপি সরকারের হিন্দুত্বনীতির কট্টর সমালোচনা করেন যশোবন্ত। ব্যঙ্গের সুরে তিনি বলেন, “আমাদের সমস্ত সমস্যার সহজ সমাধান রয়েছে আমাদের হাতের কাছেই। ভারতকে হিন্দুরাষ্ট্র ঘোষণা করে দেওয়া হোক। বদলে ফেলা হোক সংবিধান। বাকি সমস্ত ধর্মকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে দেওয়া হোক। পাশাপাশি মুছে ফেলা হোক সমস্ত অ-হিন্দু ইতিহাস। কবে কোন বুদ্ধ, কোন জৈন, কোন মুসলিম, কোন খ্রিস্টান হিন্দুদের আক্রমণ করেছিল, বেছে বেছে তাঁদের বিরুদ্ধে বদলা নেওয়া হোক।”
দিন কয়েক আগেও বিজেপি সরকারকে তুলোধনা করেছিলেন প্রাক্তন এই বিজেপি নেতা। ২০১৮ সালে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন যশোবন্ত। প্রসঙ্গত জাতীয় স্তরে বড়সড় সংগঠন গড়তে উঠেপড়ে লেগেছে তৃণমূল কংগ্রেস। ত্রিপুরা, গোয়া-সহ বেশ কয়েকটি রাজ্যের ভোটেও অংশ নিয়েছিল তাঁরা। বিজেপি বিরোধী জোট গড়তে অন্যান্য অবিজেপি দলগুলিকেও পাশে চেয়েছে তৃণমূল।
দিন কয়েক আগেও বিজেপি সরকারের নীতির তীব্র সমালোচনা করেছিলেন যশোবন্ত। একটি জাতীয় সংবাদমাধ্যমে তিনি জানান, সাম্প্রদায়িক ঘৃণা ও হিংসার চোরাবালিতে ক্রমশ ডুবে যাচ্ছে দেশটা। আর সেসবে ইন্ধন দিচ্ছে বিজেপি। যাতে আসল সমস্যাগুলির থেকে সাধারণ মানুষের নজর ঘুরিয়ে দেওয়া যায়। সব মিলিয়ে বিজেপি বিরোধিতার সুর যে ক্রমশ আরও চড়া করছে তৃণমূল নেতৃত্ব , তো এককথায় পরিষ্কার।