মণিপুরে শেষ হাসি হাসলো বিজেপিই – কিভাবে ঘটল উলটপুরাণ? জানুন ভেতরের খবর
কংগ্রেসের বাড়া ভাতে ছাই দিয়ে মণিপুরে ক্ষমতা ধরে রাখল বিজেপি। সূত্রের খবর, অবশেষে বুধবার দিল্লিতে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতাদেরর সঙ্গে কথা বলার পরে বিরোধ ভুলে ফের বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোটে ফিরে আসতে রাজি হয়েছেন এনপিপির বিধায়কেরা। যার জেরে বর্তমানে খানিক স্বস্তিতে গেরুয়া শিবির।
সূত্রপাত
সূত্রের খবর, সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংয়ের সঙ্গে মতানৈক্যের জেরে বিজেপির জোট ছেড়ে সম্প্রতি বেরিয়ে যান এনপিপির বিধায়কেরা। ফলস্বরূপ মণিপুরে প্রবল সঙ্কটের মুখে পড়ে বিজেপি সরকার। সমর্থন সরে যাওয়ায়, বিধানসভায় সংখ্যালঘু হয়ে পড়ে মণিপুরের শাসকদল।
পদত্যাগকারী ন’জন বিধায়কের মধ্যে তিনজন হলেন বিজেপির বিধায়ক – স্যামুয়েল জেন্ডাই, টিটি হওকিপ এবং সুভাষচন্দ্র। এছাড়াও, চারজন ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) বিধায়ক, যারা সমর্থন প্রত্যাহার করেছেন তারা হলেন উপ-মুখ্যমন্ত্রী ওয়াই জয়কুমার সিং, উপজাতি ও পাহাড় অঞ্চল উন্নয়ন মন্ত্রী এন কাইশি, জল সম্পদ, যুবকল্যান বিষয়ক ও ক্রীড়া মন্ত্রী লেটপাও হওকিপ এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী এল জয়ন্তকুমার সিং।
এছাড়াও আরো দুজন বিধায়ক সমর্থন প্রত্যাহার করেন। তাঁরা হলেন সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের এল রবীন্দ্র এবং নির্দল বিধায়ক আশাবুদ্দিন।
সংখ্যাতত্ত্ব
প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এবং কংগ্রেস নেতা ইবোবি সিং দাবি করেন যে তাদের ২৭ জন বিধায়ক ছাড়াও, এনপিপির চারজন বিধায়ক, তৃণমূল এবং নির্দল বিধায়কেরও সমর্থন আছে। ৬০ আসনের বিধানসভায় তাদের পক্ষে মোট ৩৩ জন বিধায়ক রয়েছেন বলে দাবি করা হয়।
সম্প্রতি, মণিপুর হাইকোর্টও কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া সাত বিধায়ককে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বিধানসভায় প্রবেশ থেকে বিরত রেখেছিল। সুতরাং, এই মুহূর্তে আস্থাভোট হলে ৫২ বিধায়ক ভোট দিতে পারেন।
রাজনীতি
এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেসের রাজ্যে ক্ষমতায় ফিরে আসা এবং কংগ্রেসের প্রার্থী টি মঙ্গি বাবুর রাজ্য সভায় নির্বাচিত হওয়া প্রায় নিশ্চিত ধরে নেওয়া হয়। সূত্রের খবর, এনপিপির বিধায়করা গৌরব গগৈয়ের মাধ্যমে কংগ্রেস দলের সাথে যোগাযোগ করেছিলেন। তারই মাধ্যমে কংগ্রেসের কোষাধ্যক্ষ আহমেদ প্যাটেলের সাথে এ বিষয়ে টেলিফোনে কথা হয় তাদের। হয় কমান্ড নীতিগতভাবে সম্মতি ম্যানালে কংগ্রেস নিজস্ব জোট ঘোষণা করে – সেকুলার প্রগ্রেসিভ ফ্রন্ট (এসপিএফ)।
কংগ্রেসের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওকরাম ইবোবি সিং রাজ্যপাল নাজমা হেপতুল্লার কাছে ৩০ জন বিধায়কের সমর্থনের দাবি জানিয়ে নতুন সরকার গঠনের প্রস্তাবও দেন। পুরো বিষয়টি তদারকি করতে গৌরব গগৈ এবং অজয় মাকেন মণিপুরেও যান। ইতিমধ্যেই, মণিপুর ডেভলপমেন্ট সোসাইটির সরকারি তহবিলের ৩৩২ কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ইবোবি সিংকে জেরা করতে সিবিআই তাদের একটি টিমকে ইম্ফলে পাঠায়।
হাইজ্যাক
ইবোবি সিং যখন সিবিআইয়ের জেরার মুখে হিমসিম খাচ্ছিলেন, তখন বিজেপির ট্রাবল-শ্যুটার তথা উত্তর পূর্ব গণতান্ত্রিক জোটের আহ্বায়ক হিমন্ত বিশ্ব শর্মা এবং মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী তথা এনপিপি সভাপতি কনরাড সাংমা ২৩শে জুন বিশেষ বিমানে ইম্ফলের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। সেই একই দিনে তারা জয়কুমারসহ চারজন এনপিপি বিধায়ককে গুয়াহাটিতে নিয়ে যান।
পরের দিন বিধায়কদের দিল্লীতে নিয়ে যাওয়া হয় সেখানেই তারা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডার সাক্ষাতে বীরেন সিংয়ের সাথে মত পার্থক্যের কথা জানান। সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এই বিধায়কদের আশ্বস্থ করে বলেন যে তাদের সমস্যার সমাধান করা হবে।
শেষাবধি
২০১৭ সালের বিধানসভা ভোটের পরে মণিপুরে ২৮ জন বিধায়ক নিয়ে একক বৃহত্তম শক্তি হিসেবে সামনে এসেছিল কংগ্রেস। কিন্তু সেবারেও ক্ষমতার কাছাকাছি এসেও সরকার গঠন করতে পারেনি সেই দল। এবারেও ঠিক তেমন ভাবেই ক্ষমতা দখলের কাছাকাছি এসেও বিজেপির চলে কুপোকাত হতে হল কংগ্রেসকে।