মূল্যবৃদ্ধি থেকে বেকারত্ব রুখতে ব্যর্থ মোদী, এদিকে জোর সরকারের অষ্টম বর্ষপূর্তি
মূল্যবৃদ্ধির আগুনে দিশাহারা মানুষ। কর্মসংস্থানে বিপুল ঘাটতি। বাড়ছে বেকারত্ব। ধস শেয়ার বাজারে। বৈদেশিক মুদ্রা এক ধাক্কায় নেমে গিয়েছে। সর্বকালীন অবনতি ঘটেছে টাকার বিনিময় মূল্যেও। আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থাগুলির পাশাপাশি রিজার্ভ ব্যাঙ্ক পর্যন্ত বলেছে, জিডিপি বৃদ্ধিহার কম হবে। আরও বাড়বে মুদ্রাস্ফীতির হার। এই চরম দুঃসংবাদ আর অর্থনীতির অনিশ্চয়তার মধ্যেও নির্বিকার বিজেপি এবং কেন্দ্রীয় সরকার। উল্টে তারা ডাক দিয়েছে উৎসবের। ধুমধাম করে পালিত হতে চলেছে মোদী সরকারের অষ্টম বর্ষপূর্তি। আগামী ৩০ মে থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত দেশজুড়ে প্রবল জাঁকজমকের আয়োজন করতে চলেছে গেরুয়া শিবির।
এহেন উৎসবের প্রাক্কালে দলের প্রতিটি কমিটি ও ইউনিটকে বার্তা দিয়েছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎপ্রকাশ নাড্ডা। বলেছেন, আট বছরে ভারতবাসী, বিশেষ করে গরিবের জীবন বদলে দিয়েছে মোদি সরকার। মানুষের কাছে গিয়ে একথা প্রচার করতে হবে। ‘৮ বছর: সেবা, সুশাসন এবং গরিবকল্যাণ’—এই শিরোনামকে সামনে রেখে পালিত হবে মোদী সরকারের অষ্টম বর্ষপূর্তি উৎসব। এই এক পক্ষকালে সাধারণ মানুষের সঙ্গে ৭৫ ঘণ্টা কথা বলবেন বিজেপির প্রত্যেক নেতাকর্মী। এই নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণের কারণ, চলতি বছরই দেশের ৭৫তম বর্ষপূর্তি। ‘দেশ কে রিপোর্ট কার্ড’ শীর্ষক পুস্তিকা, প্রচার ভিডিও, দলীয় সঙ্গীত ইত্যাদি তৈরি করা হচ্ছে। বিশেষ করে গরিব, তফসিলি জাতি-উপজাতি এবং মহিলাদের জন্য মোদী সরকার যে অতীতের যে কোনও আমলের থেকে বেশি কাজ করেছে, সেই বার্তাই দেওয়া হবে অষ্টম বর্ষপূর্তিতে। বিজেপির যুব মোর্চা আয়োজন করবে বাইক মিছিল, যে কর্মসূচির নাম বিকাশ তীর্থ যাত্রা। আগামী ৭ থেকে ১৩ জুন ওই কর্মসূচিতে হাজির থাকবেন মোদী সরকারের তাবড় তাবড় মন্ত্রীরা।
উৎসবের সূচনা অবশ্য কার্যত বুধবার থেকেই হয়ে গিয়েছে। ‘মোদী@২০ ড্রিমস মিট ডেলিভারি’ বইপ্রকাশ অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে ‘মোদি-ভজনা’য় মজেছেন স্বয়ং উপ রাষ্ট্রপতি বেঙ্কাইয়া নাইডু। জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে তিনি তুলনা টেনেছেন প্রধানমন্ত্রীর। সাফ জানিয়েছেন, মোদি যে একজন অবিসংবাদী নেতা, তাঁর চরম নিন্দুকও সেকথা স্বীকার করবেন। মহাত্মা গান্ধী যেভাবে স্বাধীনতা সংগ্রামকে অভিজাতদের হাত থেকে বের করে গণআন্দোলনের রূপ দিয়েছিলেন, ঠিক সেভাবেই মোদি উন্নয়নমূলক প্রকল্পকে পরিণত করেছেন গণউদ্যোগে। ওই অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও।
এর পাশাপাশি দলের তরফ থেকে নানা কর্মসূচি নিয়েছে বিজেপি। দলীয় এমপিদের প্রতি নির্দেশ গিয়েছে, মানুষের বাড়ি বাড়ি যেতে হবে। কেন্দ্রীয় সরকার আট বছরে কত প্রকল্প করেছে, তার বিস্তারিত ফিরিস্তি তুলে ধরতে হবে জনসাধারণের কাছে। প্রচারে আরও বলা হবে, কাশ্মীরের ৩৭০ নম্বর অনুচ্ছেদের অবলুপ্তি অথবা উত্তর-পূর্ব ভারতের সমস্যা দূর করা—দেশের যাবতীয় সমস্যা সামধানে কাজ করেছে মোদী সরকার। আগামী ২৬ মে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদির আট বছর পূর্ণ হবে। শুধুই বিজেপি নয়, কেন্দ্রীয় সরকারও একইভাবে এই আট বছরকে উন্নতির সময়কাল হিসেবে প্রচার করতে নামছে। প্রচারের বিষয়বস্তুও স্পষ্ট প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশিকায়। দেশবাসীকে বলা হবে, আট বছর পর ভারতে এসেছে অমৃতকাল!