বোর্ডের পরীক্ষা থেকে নিয়োগ প্রক্রিয়া- কেলেঙ্কারির শীর্ষে বিজেপির শাসিত রাজ্যগুলিই
উন্নয়ন নাকি শুধু ‘ডবল ইঞ্জিন’ রাজ্যেই? মোদী জমানায় তাঁর দলের নেতা এবং মন্ত্রীদের ঢাক পেটানোয় আম জনতার মধ্যে কতটা প্রভাব পড়ছে, সে ব্যাপারে প্রশ্ন থাকতে পারে। কিন্তু বোর্ডের পরীক্ষা থেকে নিয়োগ প্রক্রিয়া—সর্বত্র নানাবিধ কেলেঙ্কারিতে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলি যে গোটা দেশকে পিছনে ফেলেছে, সে ব্যাপারে সংশয় নেই। উত্তরপ্রদেশ সহ প্রায় সব গেরুয়া শাসনেই এই প্রবণতা মাথাচাড়া দিয়েছে। বেছে বেছে এই রাজ্যগুলিতেই বাতিল হয়ে যাচ্ছে একের পর এক চাকরির পরীক্ষা। সর্বশেষ উদাহরণ, বিহার পাবলিক সার্ভিস কমিশনের নিয়োগ। নীতীশ কুমারের রাজ্যের ঘটনায় তদন্তে নেমে দেখা যাচ্ছে, প্রশ্ন ফাঁসের চক্র ছড়িয়ে পড়েছে অন্য রাজ্যেও। আর ধীরে ধীরে তা মধ্যপ্রদেশের ব্যাপম কেলেঙ্কারির ধাঁচেই একটি আন্তঃরাজ্য দুর্নীতির রূপ নিচ্ছে।
দেখা যাচ্ছে, দেশে প্রশ্ন ফাঁস ও অনিয়মের ঘটনা বিহার, উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা, গুজরাত, মধ্যপ্রদেশে সবচেয়ে বেশি। গত এক বছরে এই ‘ডবল ইঞ্জিন’ রাজ্যগুলিতে বারবার প্রশ্নপত্র ফাঁসে কর্মপ্রার্থী ও ছাত্রছাত্রীরা সঙ্কটে পড়েছেন। কখনও চাকরির পরীক্ষা, কখনও রাজ্য বিদ্যালয় শিক্ষা বোর্ডের দশম-দ্বাদশ শ্রেণি। একই ঘটনা লাগাতার শুধু এনডিএ শাসিত রাজ্যগুলিতে ঘটলেও তা নিয়ে কেন্দ্র অথবা বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব কিন্তু কোনও উচ্চবাচ্য করেনি। আরও যে দুই রাজ্যে এই প্রশ্নপত্র ফাঁসের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, সেগুলি হল রাজস্থান ও ঝাড়খণ্ড। রাজস্থান কংগ্রেস শাসিত। আর ঝাড়খণ্ডে কংগ্রেসের জোট সরকার। এই রাজ্যগুলিতে কর্মপ্রার্থী ও পড়ুয়াদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। ২০২০ সালে করোনা মহামারী পর্বে সমস্ত নিয়োগ পরীক্ষা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আবার সরকারি চাকরির নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হতেই দেখা যাচ্ছে, প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে বিশেষত ডবল ইঞ্জিন রাজ্যগুলিতে। ফলে বন্ধ হচ্ছে নিয়োগ।
বিহার পাবলিক সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষায় সাম্প্রতিককালে সবথেকে বেশি প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। তুমুল আলোড়ন চলছে সাম্প্রতিক ঘটনায়। মঙ্গলবারই কলেজের প্রিন্সিপাল, ব্লকের বিডিও, সরকারি আধিকারিক, লেকচারার মিলিয়ে একঝাঁক অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই পরীক্ষায় ৬ লক্ষাধিক কর্মপ্রার্থী আবেদন করেছেন। পরীক্ষার ঠিক আগে লিক হয়েছে প্রশ্নপত্র। এখানেই শেষ নয়। দশম শ্রেণির বোর্ড পরীক্ষার অঙ্ক প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে। বিহার দমকল সার্ভিসের পরীক্ষা, গত জানুয়ারি মাসে পুলিস কনস্টেবল নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নও ফাঁস। এরপরই স্থান যোগীরাজ্য উত্তরপ্রদেশের। গত নভেম্বর মাসে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার আগেই সেখানে প্রশ্ন বেরিয়ে গিয়েছিল। ফলে ২১ লক্ষাধিক চাকরিপ্রার্থীর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে যায়। বিজেপি শাসিত হরিয়ানায় কখনও নেট, কখনও পুলিস নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে গত নভেম্বরে। এখানেই শেষ নয়। বিজেপির দাবি, এদেশের মডেল রাজ্য গুজরাত। সেখানেও কিন্তু একই দশা! গুজরাত সেকেন্ডারি সার্ভিস সিলেকশন বোর্ড পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছিল গত ডিসেম্বরে। ৮৮ হাজার কর্মপ্রার্থী আবেদন করেছিলেন সেই পরীক্ষায়। ব্যাপম নিয়ে মধ্যপ্রদেশ একসময় রীতিমতো ক্রাইম থ্রিলারের ধাঁচে এক সিরিয়াল মৃত্যুর কেন্দ্রভূমি হয়ে উঠেছিল। সেখানেও গত মাসে স্টাফ নার্স সিলেকশন, রুরাল এগ্রিকালচারাল এক্সটেনশন অফিসার ইত্যাদি পদের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। আর তাই প্রশ্ন এখন একটাই, বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিই প্রশ্নপত্র ফাঁসের ভরকেন্দ্র হয়ে উঠছে কেন?