বাংলায় লাশের রাজনীতি করতে গিয়ে বিপাকে বঙ্গ বিজেপি, ক্ষুব্ধ কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব
কাশীপুর থেকে ময়না—গত কয়েকদিনে রাজ্যের দুই প্রান্তে দলীয় কর্মীর মৃত্যুকে ‘রাজনৈতিক হত্যা’ বলে চালাতে গিয়ে কার্যত মুখ পুড়েছে বিজেপির। লাশের রাজনীতি করতে গিয়ে জনমানসে গেরুয়া পার্টির ভাবমুর্তি ধাক্কা খেয়েছে বলেও মনে করছে দলের আদি নেতৃত্বের একাংশ। তাঁদের মূল নিশানায় সুকান্ত মজুমদার–অমিতাভ চক্রবর্তীদের অনভিজ্ঞতা। বর্তমান রাজ্য নেতৃত্বের ‘গ্রাউন্ড রিপোর্ট’কে বিশ্বাস করে ঠকেছেন খোদ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। কারণ, কাশীপুরে নিহত বিজেপি কর্মীকে খুন করা হয়েছে এবং সেই ঘটনায় সিবিআই তদন্তের দাবি করে বসেছিলেন শাহ। যদিও আদালতে পেশ করা ময়নাতদন্ত রিপোর্ট তার উল্টো কথা বলছে। একইভাবে ময়নার ঘটনায় বিবাহ বর্হিভূত সম্পর্কের কারণেই মৃত্যু, তা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এবার থেকে এই ধরনের কর্মী হত্যার ঘটনায় সবদিক খতিয়ে দেখে বিজেপির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি জারি করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে দলের এক নেতা বলেন, একেই বলে ঠেকে শেখা। গত কয়েকমাসে ‘ডেড বডি’ নিয়ে সোচ্চার হতে গিয়ে বিজেপি রাজনৈতিক ডিভিডেন্ড হারিয়েছে। দেশের শাসক দলের একটা প্রদেশ শাখার এহেন অপরিণত আচরণ দিল্লিতেও সমালোচিত হয়েছে। অমিত মালব্যর মতো কিছু নেতা, কেবল সোশাল মিডিয়ায় দাপাদাপি করতে গিয়ে পার্টিটাকে ডোবাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, এক্ষেত্রেও বঙ্গ বিজেপি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘কপি’ করতে চাইছে। বিরোধী নেত্রী থাকাকালীন উনি দলীয় কর্মী খুনের ঘটনা নিয়ে রাজ্য উত্তাল করে দিতেন। পাশাপাশি শেষ পর্যন্ত মৃত্যের পরিবারের পাশে থাকতেন। একই সঙ্গে আইনি লড়াইতেও স্বজনহারাদের সঙ্গ ছাড়তেন না। কিন্তু হঠাৎ নেতা হয়ে ওঠা বিজেপির কিছু ‘সবজান্তা’ স্রেফ লোক দেখানোর জন্য মাঝে মাঝে রাস্তায় নামছেন। সেগুলির ছবি-ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে সস্তা জনপ্রিয়তা কুড়োনোর চেষ্টা করছেন। বিধানসভা নির্বাচনের এক বছর পার হয়ে গেলেও, এখনও অসংখ্য বিজেপি কর্মী-নেতা ভোট পরবর্তী হিংসার ক্ষতিপূরণ পাননি। যা নিয়ে অসন্তোষের পারদ ক্রমেই চড়ছে। যার আঁচ পাচ্ছেন রাজ্য কমিটির বহু প্রভাবশালী। তাই লাশ রাজনীতি নিয়ে কিছুটা পিছু সরতে চলেছে পদ্ম পার্টি। তাই আগামীদিনে দলীয় কর্মী মারা গেলেই তৃণমূল খুন করেছে, বলে ‘হাওয়া গরম’ করা থেকে কিছুটা বিরত থাকার অবস্থান নেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ঘটনায় মণ্ডল কিংবা জেলা থেকে প্রাথমিক রিপোর্ট চাওয়া হবে। পাশাপাশি পার্টির তরফে রাজ্য প্রশাসনের সঙ্গে ‘লবি’ করার দায়িত্বে থাকা নেতারা ঘটনাটি ক্রস চেক করবেন। তারপরই আন্দোলন, কর্মসূচি ঘোষিত হবে।