রাজ্য বিভাগে ফিরে যান

৬৫ দিনে ৪ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিককে কাজ দিয়ে নজির রাজ্যের

June 28, 2020 | 2 min read

বঞ্চনার জবাব কথায় নয়, কর্মে। রাজ্যে ফিরে কাজ পেলেন পরিযায়ী শ্রমিকরা। লকডাউন শিথিলের পর পেরিয়েছে ৬৫ দিন। এর মধ্যে চার লক্ষ শ্রমিককে একশো দিনের কাজ দিয়ে নজির গড়ল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। তৈরি হয়েছে আট কোটিরও বেশি শ্রমদিবস। রাজ্যের এই তৎপরতায় খুশি পরিযায়ী শ্রমিকদের একটা বড় অংশ। কেন্দ্রের বঞ্চনার বিরুদ্ধে এমন উদ্যোগকে চ্যালেঞ্জ হিসেবেও দেখছেন অনেকেই।

সম্প্রতি ঢাকঢোল পিটিয়ে ‘গরিব কল্যাণ রোজগার অভিযান’ প্রকল্প ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মূলত কাজ হারানো পরিযায়ী শ্রমিকদের আর্থিক সুরাহা দিতে তাঁর এই পরিকল্পনা। তবে এর পিছনে ভোটের রাজনীতিও দেখছেন মোদির সমালোচকরা। সে যাইহোক, মোদির ঘোষিত প্রকল্পে নাম নেই পশ্চিমবঙ্গের। পড়শি বিহার, ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড কিংবা রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ এবং মধ্যপ্রদেশকে ‘অভিযান’-এ শামিল করেছে কেন্দ্র। ছ’টি রাজ্য মিলিয়ে ১১৬টি জেলা মোদির ঘোষিত প্রকল্পের সুবিধা পাবে। বঞ্চিত শুধু বাংলাই। কেন্দ্রের এই বিমাতৃসুলভ আচরণের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। মোদি সরকারের অবশ্য যুক্তি, যে সব জেলায় কমপক্ষে ২৫ হাজার শ্রমিক ফিরেছেন, ওই সব জেলাকে প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

অথচ, পশ্চিমবঙ্গের এমন বহু জেলা রয়েছে, যেখানে ২৫ হাজারেরও বেশি শ্রমিক ঘরে ফিরেছেন। ভিনরাজ্যে কাজ হারিয়ে তাঁদের এখন দুর্বিসহ অবস্থা। রাজ্যের তথ্য বলছে, বিভিন্ন জেলা মিলিয়ে ঘরে ফেরা পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ১১ লক্ষ। বিহার, ওড়িশার শ্রমিকরা কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুবিধা পেলে বাংলার শ্রমিকরা পাবেন না কেন? এই প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি অবশ্য হাত গুটিয়ে বসে নেই রাজ্য সরকার। অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিকদের ‘জবকার্ড’ দিয়েছেন পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দপ্তর। এখন পর্যন্ত চার লক্ষ শ্রমিক অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন একশো দিনের কাজে। মোট ‘জবকার্ড’ বিলি হয়েছে এক কোটি ৩০ লক্ষ ২৪ হাজার।

৬৫ দিনে ৪ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিককে কাজ দিয়ে নজির রাজ্যের

রাজ্যে সবচেয়ে বেশি শ্রমিক ফিরেছেন মুর্শিদাবাদ, নদীয়া, দুই দিনাজপুর, দুই মেদিনীপুর, দুই ২৪ পরগনা, বাঁকুড়া, বীরভূম এবং হাওড়া, হুগলিতে। শ্রমদিবস তৈরিতে এই সব জেলাগুলিতে বাড়তি গুরুত্ব দিয়েছে রাজ্য। এ ছাড়া প্রতিটি জেলাতেও একশো দিনের কাজে গতি এসেছে। গত ২২ এপ্রিল থেকে এখন পর্যন্ত এই প্রকল্পে খরচ হয়েছে দু’ হাজার ৯২১ কোটি ৬৪ লক্ষ ১১ হাজার টাকা। প্রকল্পের কাজ খতিয়ে দেখতে জেলা সফরে যাবেন পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। শনিবার তিনি বলেছেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশেই ভিনরাজ্য থেকে ফেরা শ্রমিকদের কাজ দেওয়ার এই সিদ্ধান্ত। সেই মতো প্রথমে তাঁদের হাতে ‘জবকার্ড’ তুলে দেওয়া হয়। তাঁরাই এখন একশো দিনের কাজে গ্রামীণ উন্নয়নে বড় ভূমিকা নিচ্ছেন। রাস্তা তৈরি, পুকুর খনন, সেচের খাল খনন, সবুজায়ন সহ একাধিক কাজের সঙ্গে তাঁরা যুক্ত।’

ঘরে ফিরে এখনও বহু শ্রমিক ‘নিজভূমে পরবাসী’। কোভিডের সংক্রমণ রুখতে তাঁরা এখন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে। ফলে সবাইকে কাজ দেওয়া সম্ভব হয়নি বলেও মেনে নিয়েছেন পঞ্চায়েতমন্ত্রী। তবে তাঁর আশ্বাস,‘ওঁদের কোয়ারেন্টাইনের মেয়াদ শেষ হলেই কাজে যুক্ত করা হবে। এ ব্যাপারে প্রতিটি জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ পাঠানো হয়েছে।’ একশো দিনের প্রকল্পের নিয়ম মেনেই পরিযায়ী শ্রমিকরা মজুরি পাচ্ছেন। দৈনিক ২০৪ টাকা করে পাচ্ছেন তাঁরা। এই কম মজুরিতে কাজ করতে কিছু পরিযায়ী শ্রমিকের অনিহাও নজর এড়ায়নি রাজ্যের। বিশেষ করে নির্মাণ কিংবা সোনার গহনা তৈরির কাজের যুক্ত শ্রমিকরা কাজ থেকে মুখ ফেরাচ্ছেন বলে খবর। তবে পরিযায়ী শ্রমিকদের একটা বড় অংশই রাজ্যের উদ্যোগে সাড়া দিচ্ছেন। মহামারীর দুর্দিনে দিনে ২০৪ টাকা উপার্জনের সুযোগ পেয়ে খুশি তাঁরা।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#West Bengal, #Migrant Labourers

আরো দেখুন