কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইনাল সেমিস্টারের পরীক্ষা বাতিল
উচ্চমাধ্যমিকের পর রাজ্যের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় গুলিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরের ফাইনাল সেমিস্টারের পরীক্ষা বাতিল করা হল । শনিবার রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দফতরের তরফে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে এমনই প্রস্তাব বা সুপারিশ পাঠানো হয়েছে । মূলত করোনা ভাইরাস সংক্রমণের জন্যই রাজ্যের উচ্চ শিক্ষা দফতরের তরফে এমনই প্রস্তাব বলে জানানো হয়েছে । ফাইনাল সেমিস্টারের পরীক্ষা বাতিল করা হলেও উচ্চ শিক্ষা দফতরের তরফে জানানো হয়েছে , ৩১ জুলাইয়ের মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে ফাইনাল সেমিস্টারের ফলাফল প্রকাশ করতে হবে ।
প্রসঙ্গত , মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই ঘোষণা করেছিলেন ফাইনাল সেমিস্টার ছাড়া অন্যান্য সেমিস্টারের পরীক্ষা দিতে হবেনা ছাত্র-ছাত্রীদের । শনিবার উচ্চ শিক্ষা দফতরের তরফে জারি করা প্রস্তাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে আগের সেমিস্টারগুলিতে ছাত্রছাত্রীরা পরীক্ষা ছাড়াই পরবর্তী সেমিস্টারে উঠে যেতে পারবেন । বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে উচ্চ শিক্ষা দফতরের তরফে প্রস্তাব বা সুপারিশে বলা হয়েছে-
- রাজ্যের সব বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে মূল্যায়ন ব্যবস্থা একই রকম থাকতে হবে সব বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য । স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরের ছাত্র-ছাত্রীদের ফাইনাল সেমিস্টারের পরীক্ষার বদলে আগের পাঁচটি সেমিস্টারের থেকে প্রাপ্ত নম্বর থেকে যে সেমিস্টারে সব থেকে বেশি নম্বর পেয়েছে সেই নম্বর ফাইনাল সেমিস্টার পরীক্ষায় যোগ করে ছাত্র-ছাত্রীদের রেজাল্ট দেওয়া হবে । সেক্ষেত্রে এই নম্বরের ওয়েটেজ বা গুরুত্ব থাকবে ৮০%, বাকি ২০ শতাংশ ফাইনাল সেমিস্টারের ইন্টার্নাল অ্যাসেসমেন্টের ওপর । এই দুই-এর উপর ভিত্তি করেই ফাইনাল সেমিস্টার তথা ছাত্র-ছাত্রীদের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরের মার্কশিট তৈরি হবে।
- ফাইনাল সেমিস্টারের ফলাফল প্রকাশ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ৩১ জুলাইয়ের মধ্যেই করতে হবে ।
- রাজ্যে যে সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রফেশনাল কোর্স অর্থাৎ ইঞ্জিনিয়ারিং , আইন , ম্যানেজমেন্ট ,ফার্মাসি , শিক্ষক প্রশিক্ষণ- সহ অন্যান্য প্রফেশনাল কোর্সের সঙ্গে যুক্ত ছাত্র-ছাত্রীদের পঠন-পাঠন করায় , তাদেরকেও একই নিয়ম মানতে হবে পড়ুয়াদের ফাইনাল সেমিস্টারের ফলাফল প্রকাশের জন্য ।
- যদি কোনও ছাত্র-ছাত্রী এই মূল্যায়ন পদ্ধতির বদলে লিখিত পরীক্ষায় বসতে চায় তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়কে সেই ছাত্র বা ছাত্রীকে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ করে দিতে হবে । সেক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষা তখনই নিতে পারবে যখন বর্তমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে এবং সেই পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ পরীক্ষা নেওয়ার এক মাসের মধ্যেই প্রকাশ করতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়কে । এক্ষেত্রে সেই ছাত্র বা ছাত্রী লিখিত পরীক্ষায় যে নম্বর পাবে সেই নম্বরকেই চূড়ান্ত নম্বর হিসেবে ধার্য করা হবে । বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে ছাত্র-ছাত্রীদের স্পেশ্যাল এই পরীক্ষা নেওয়ার জন্য আগে থেকে মুচলেখা নিতে হবে ।
- ফাইনাল সেমিস্টার ছাড়া অন্যান্য যে সেমিস্টারগুলি রয়েছে , সব ছাত্র-ছাত্রীদের পরবর্তী সেমিস্টারে পাশ করিয়ে দিতে হবে ।
- করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পরবর্তী শিক্ষাবর্ষ শুরুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে রাজ্য সরকার । রাজ্যের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে একই সময়ে শিক্ষাবর্ষ শুরু হবে ।
- লকডাউনের জন্য চলতি শিক্ষাবর্ষের পঠনপাঠনের যে ক্ষতি হয়েছে , সেই দিনগুলিতে পড়ুয়াদের উপস্থিতি গণ্য করতে হবে ।
- অনলাইনে ক্লাস করার জন্য কোনো রকম অতিরিক্ত টাকা বা ফি নেওয়া যাবে না ।
- নেতাজি সুভাষ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়কে অনুসরণ করতে হবে , অন্যান্য মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ও ইগনু-এর মতো বিশ্ববিদ্যালয়গুলি কী পদক্ষেপ নিচ্ছে পরীক্ষার পদ্ধতির ক্ষেত্রে ।
- প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজকে একটি করে অভিযোগ জানানোর জন্য অভিযোগ সেল খুলতে হবে । যেখানে ছাত্রছাত্রীরা পঠন-পাঠন ও পরীক্ষা সংক্রান্ত কোন অভিযোগ থাকলে তা জানাতে পারবে।
১৩ জুন রাজ্যের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য , রেজিস্ট্রার সহ-উপাচার্যদের নিয়ে বৈঠক করেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় । ওই বৈঠকেই কীভাবে ফাইনাল সেমিস্টার-সহ শিক্ষাবর্ষ শুরু করা যাবে , তা নিয়ে মতামত নেওয়া হয় । তারপর শনিবার রাজ্য সরকারের তরফে বিশ্ববিদ্যালয় গুলিকে এই প্রস্তাব বা সুপারিশ পাঠানো হয়েছে । আগামী সপ্তাহ থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলি এই প্রস্তাব বা সুপারিশ কীভাবে কার্যকর করবে , তা নিয়ে প্রস্তুতি শুরু করবে বলেই উচ্চ শিক্ষা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে ।