কলকাতায় অজান্তে সংক্রমণের পর সুস্থ হয়েছেন অনেকে
কলকাতায় করোনা আক্রান্তের ঊর্ধ্বমুখী হার যখন রক্তচাপ বাড়াচ্ছে রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তাদের, তখনই কেন্দ্রীয় সংস্থা আইসিএমআর-এর সেরো সার্ভের তথ্য জানাল, মহানগরে অন্তত সাড়ে ১৪ শতাংশ (১৪.৩৯%) মানুষ নিজের অজান্তে করোনায় আক্রান্ত হয়ে সেরেও উঠেছেন ইতিমধ্যে।
কত শতাংশ মানুষের শরীরে করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে, তা জানতে আনলক-১ পর্বে গোটা দেশে সেরো সার্ভে শুরু করেছিল ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ। রাজ্যের আরও পাঁচ জেলার সঙ্গে কলকাতা পুরসভার ১৭টি ওয়ার্ডেও এই সার্ভের জন্য সংগ্রহ করা হয়েছিল রক্তের নমুনা। সেই নমুনার রিপোর্ট পর্যালোচনা করেই কলকাতা নিয়ে উৎসাহব্যঞ্জক তথ্য জানিয়েছে কেন্দ্রীয় সংস্থা। কলকাতার পরিসংখ্যানে কিছুটা আশায় স্বাস্থ্যকর্তারা। তবে নমুনার সংখ্যা কম হওয়ায় পুরোপুরি আশ্বস্ত হতে পারছেন না অনেক বিশেষজ্ঞই।
সাধারণ মানুষের মধ্যে কত শতাংশ ইতিমধ্যেই করোনায় সংক্রমিত হয়ে নিজের অজান্তে সুস্থ হয়ে উঠেছেন, তা জানতে পরীক্ষামূলক ভাবে সেরো সার্ভে শুরু করেছিল আইসিএমআর। করোনার উপসর্গ নেই, এমন মানুষদের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে দেখা হয়েছিল তাঁদের শরীরে অ্যান্টিবডির উপস্থিতি রয়েছে কি না। এক আইসিএমআর কর্তার কথায়, ‘আমাদের দেখার উদ্দেশ্য ছিল, হার্ড ইমিউনিটির দিকে কতটা এগোচ্ছে রাজ্যগুলি। কারণ, করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে পারে সার্বিক ভাবে জনসাধারণের এক বড় অংশের শরীরে তৈরি হওয়া প্রতিরোধ ক্ষমতাই (হার্ড ইমিউনিটি)।’ প্রাথমিক ভাবে কলকাতা ছাড়াও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, আলিপুরদুয়ার, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম জেলার ৪০০ জন করে করোনার উপসর্গহীন মানুষের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। বাগবাজার থেকে বালিগঞ্জ, মানিকতলা থেকে নিউ আলিপুর, শোভাবাজার থেকে পোস্তা—কলকাতারও মোট ১৭টি ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকা থেকেও গড়ে ৪০ জন করে ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করে আইজিজি (ইমিউনোগ্লোবিউলিন জি) পরীক্ষা করা হয়। পুরসভার এক কর্তা জানান, ‘মূলত চল্লিশোর্ধ্ব ব্যক্তিরাই টেস্ট করাতে এগিয়ে এসেছিলেন। মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্তদের মধ্যে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে টেস্ট করানোর প্রবণতা ছিল লক্ষণীয়।’
শনিবারও যেখানে রাজ্যে মোট করোনা আক্রান্ত ৫২১ জনের মধ্যে ১৪১ জনই কলকাতার, সেখানে সেরো সার্ভে থেকে উঠে আসা পরিসংখ্যান ঠিক কী দিক নির্দেশ করছে শহর সম্পর্কে? স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনের অধিকর্তা এবং মাইক্রোবায়োলজি বিশেষজ্ঞ প্রতীপকুমার কুণ্ডু বলেন, ‘শরীরে কোনও বহিরাগত শত্রুর (অ্যান্টিজেন) আক্রমণ হলে শরীর তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রয়োগ করে সেই অ্যান্টিজেনকে হারানোর জন্য সৈন্য বা অ্যান্টিবডি তৈরি করে। সেরো সার্ভের এই রিপোর্ট বিশ্লেষণ করলে বলতে হয়, কলকাতার প্রায় সাড়ে ১৪ শতাংশ মানুষ ইতিমধ্যেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সুস্থও হয়ে উঠেছেন।’
কলকাতার ক্ষেত্রে এই পরিসংখ্যান কিছুটা হলেও আশাব্যঞ্জক বলে মনে করছেন প্রতীপ। তিনি বলেন, ‘ধরে নেওয়া যেতে পারে, এই সাড়ে ১৪ শতাংশ মানুষ আর করোনায় আক্রান্ত হবেন না।’
নমুনার সংখ্যা বেশ ছোট হওয়ায় অবশ্য এখনই খুব বেশি নিশ্চিন্ত নন বিশেষজ্ঞদের সবাই। তাঁদের মতে, ৫০ লক্ষেরও বেশি মানুষের বাস যে শহরে সেখানে ৪০০ জনের নমুনা নেহাতই নগণ্য। স্বাস্থ্য দপ্তরের এক কর্তাও বলেন, ‘নমুনার সংখ্যা আরও বাড়লে চিত্রটা আরও পরিষ্কার হবে।’ কলকাতা পুরসভার প্রশাসক ফিরহাদ হাকিমের বক্তব্য, ‘আমরা নিজেদের একটা সার্ভেতে দেখেছি, বস্তি এলাকায় সংক্রমণের হার অন্য মেট্রো শহরের তুলনায় বেশ কম। সেটাও আশাব্যঞ্জক। আমরা নজরদারি এবং সচেতনতা প্রচার চালিয়ে যাব।’