পিএফেও দুর্নীতি? ‘আনক্লেমড’ অর্থের গজিয়ে ওঠা দাবিদার নিয়ে ঘনাচ্ছে রহস্য
মোদী সরকারের কাজকর্ম মানেই রহস্যের আঁতুরঘর। দু-চারটে ফেলু, ব্যোমকেশ, হোমস-বন্ডরাও হিমশিম খেয়ে যাবে সমাধান করতে। এমনই এক রহস্য ঘনালো পিএফের ‘আনক্লেমড’ অ্যাকাউন্টে গচ্ছিত অর্থ নিয়ে। ২০১৮ সালে সম্পূর্ন দাবিহীনভাবে প্রায় সাড়ে ৫৪ হাজার কোটি টাকা পড়েছিল। বছর ঘুরতে না ঘুরতে হাজির দাবিদার। গজিয়ে ওঠা ভুতুড়ে দাবিদার, যে সে দাবিদার নয়!৫৩ হাজার কোটি টাকার দাবিবার পাওয়া যাচ্ছে।
একেবারে পিসি সরকারের ম্যাজিকের মতোই ব্যাপার। মোদী সরকার মানেই তো ম্যাজিক! সম্প্রতি তথ্যের অধিকার (আরটিআই ২০০৫) আইনে করা এক মামলার পরিপ্রেক্ষিতে এ জিনিস সামনে এসেছে। আনক্লেমড অর্থ পেনশনভোগীদের জন্যে ব্যয় করা হবে বলেই কয়েক বছর আগে সংসদে লিখিত বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছিলেন মোদী সরকারের শ্রমমন্ত্রী। কিন্তু তারপর দাবিহীন অর্থের দাবিদার এনে হাজির করা হয়েছে। ফলত আর বলার অপেক্ষা রাখে না, প্রবীণ নাগরিকদের উন্নয়ন তহবিলে কিছুই পাঠানো যায়নি। পিএফের আওতাধীন পেনশনভোগীদের জন্য মোদী সরকার যে বিন্দুমাত্র চিন্তিত নয়, তাও ফের প্রমাণ হল এই ঘটনায়।
পিএফের আওতাধীন ৭০ লক্ষ পেনশনভোগীর মাসিক পেনশনের পরিমাণ তিন হাজার টাকার বেশি নয়, এমন কি বেশ কয়েক হাজার প্রবীণ নাগরিকের পেনশনের অঙ্ক এক হাজার টাকারও নীচে। জানা গিয়েছে, পিএফ গ্রাহকদের একাংশ কোন কারণবশতঃ তাদের জমা টাকা নির্দিষ্ট সময়ের মেয়াদের মধ্যে তোলেননি। সেই টাকাই দাবিহীনভাবে ইপিএফওর হাতে থেকে গিয়েছিল।
বলাইবাহুল্য সেই টাকার পরিমাণ নেহাত কম নয়। কিন্তু নির্দিষ্ট করে কত? সেই তথ্য জানতে আরটিআই আইনের সাহায্যে আবেদন করেন গুরুগ্রামের বাসিন্দা প্রবীণ কোহলি। তাঁর আবেদনের প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানায়, আইনের সংজ্ঞা অনুযায়ী, তাদের কাছে কোন দাবিহীন টাকা আর জমা নেই। কিন্তু ব্যবহৃত হচ্ছে না এমন অ্যাকাউন্টে ২০১৮ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত ৫৪ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা জমা রয়েছে। অন্যদিকে মোদী সরকার জানিয়েছে, এক বছরের মধ্যে ইনঅপারেটিভ অ্যাকাউন্টের ৫৩ হাজার ১৯ কোটি টাকা অপারেটিভ অ্যাকাউন্টে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখানেই রহস্যের আগমন। এমন ভুতুড়ে কান্ড সম্পর্কে ওয়াকিবহালমহলের ব্যাখ্যা, পেনশনভোগীদের যাতে ওই টাকা দিতে না হয়। ইচ্ছে করে মোদী সরকার এমন কাজ করেছে। কারণ বিজেপি সরকারের শ্রমমন্ত্রী সন্তোষ কুমার গঙ্গওয়ার জানিয়েছেন, সরকারের সিনিয়র সিটিজেন্স ওয়েলফেয়ার ফান্ড নামক তহবিলে দাবিহীন টাকা জমা পড়ে।
বস্তুত স্বল্প সঞ্চয়, পিপিএফসহ নানান খাতের টাকা, যেগুলির দাবিদার নেই তা সেখানে আসে। বিজেপি সরকার তরফে বলা হয়েছিল সেই টাকা পিএফের পেনশনভোগীদের পেনশনে ব্যবহার করা হবে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। মোদী সরকারের অন্যান্য প্রতিশ্রুতির মতোই এও এক মিথ্যাচার হয়েই রয়ে গিয়েছে।