রাজ্যে নয়া কারখানা, লগ্নি ৫ কোটি

এই নয়া সম্ভাবনার সবথেকে বেশি লাভ তোলার জায়গায় রয়েছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প।

June 29, 2020 | 3 min read
Published by: Drishti Bhongi

কোভিড- ১৯ বিশ্ব অর্থনীতি স্তব্ধ করে দিয়েছে। পাশাপাশি, এই চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতি শিল্প ও ব্যবসা ক্ষেত্রে একগুচ্ছ নয়া সম্ভাবনার বীজও বপন করেছে। আর এই নয়া সম্ভাবনার সবথেকে বেশি লাভ তোলার জায়গায় রয়েছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প। সেই দিকে তাকিয়েই আগামী কয়েক মাসের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে দু’দুটি কারখানা গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কলকাতারই সংস্থা টিবিএল ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এক্সপোর্টস। লগ্নি সব মিলিয়ে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা। আর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মিলিয়ে প্রায় ৫০০ নয়া কর্মসংস্থান সৃষ্টির উজ্জ্বল সম্ভাবনা। সবথেকে বড় কথা, উৎপাদিত ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্যের ৯০ শতাংশই রপ্তানি করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে টিবিএল।

গত ২৫ বছর ধরে সংস্থাটি মূলত সিমেন্ট, লৌহ ও ইস্পাত, কাগজ শিল্পের মতো বিভিন্ন ম্যানুফাকচারিং ক্ষেত্রের কারখানায় প্রয়োজনীয় ইঞ্জিনিয়ারিং মেশিনারি সরবরাহ করে আসছে। টিবিএল ম্যানেজিং ডিরেক্টর তাহের মহম্মদ ফইজুল্লাভয়ের কথায়, ‘আমাদের মূল ব্যবসা হচ্ছে ইঞ্জিনিয়ারিং ট্রেডিং ও এক্সপোর্ট। আমরা অন্যান্য রাজ্যের বিভিন্ন কারখানায় জবওয়ার্কের মাধ্যমে মেশিনারি উৎপাদন করে রপ্তানি করি। কিন্তু, করোনা পরিস্থিতিতে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি এই সমস্ত জবওয়ার্কের বদলে নিজেদের কারখানা গড়ে তুলে সেখানেই সমস্ত কিছু উৎপাদন করব। আর যেহেতু আমি পশ্চিমবঙ্গের ভূমিপূত্র, তাই কলকাতা ও তার আশেপাশে কারখানা ও গুদামঘর গড়ে তুলব। সব মিলিয়ে জমি সহ ২ কোটি টাকার মতো লগ্নি করার পরিকল্পনা রয়েছে।’

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি অর্থ ও শিল্পবাণিজ্য মন্ত্রী অমিত মিত্রও জানিয়েছেন, ভারতের আর্থিক পরিস্থিতি যেখানে অত্যন্ত খারাপ, সেখানে আর্থিক পর্যায়ে কোভিড- ১৯-এর কারণে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তার মোকাবিলায় রাজ্যের সম্ভাবনা অনেকটাই ভাল। আর এমএসএমই ক্ষেত্রের হাত ধরেই পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতি করোনা পরিস্থিতির মোকাবিলা করে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাবে বলে প্রবল আশাবাদী রাজ্য সরকার।

এদিকে রাজ্যে প্রস্তাবিত ওই কারখানায় মূলত হাইড্রলিক পাওয়ার প্যাক, হাইড্রলিক সিলিন্ডার উৎপাদন ও গিয়ার বক্স অ্যাসেম্বলিং করার পরিকল্পনা করেছে টিবিএল। কারখানা গড়ে তোলার জন্য সংস্থাটি ২,০০০ বর্গফুটের মতো জমি খুঁজছে হাওড়ার জঙ্গলপুর ও কলকাতার তপসিয়া অঞ্চলে। প্রস্তাবিত কারখানায় প্রাথমিক ভাবে বছরে উৎপাদন হবে ২ কোটি টাকা মূল্যের পণ্য, যার ৯০ শতাংশই সার্ক ও আসিয়ান ভুক্ত দেশগুলির পাশাপাশি মধ্য প্রাচ্যে রপ্তানি করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে টিবিএল। বাকি ১০ শতাংশ পূর্ব ও উত্তর পূর্ব ভারতের বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও শিল্প সংস্থার কল-কারখানায় সরাসরি বিক্রির পরিকল্পনা করেছেন তাহের।

কিন্তু, যেখানে করোনা পরিস্থিতির কারণে শিল্প, বাণিজ্য তো বটেই সামগ্রিক ভাবে ভারত সহ অনেক দেশের অর্থনীতি সঙ্কুচিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদরা, সেখানে টিবিএল-এর এই উলট পুরাণ কেন? তাহেরের জবাব, ‘প্রথমত, আমাদের নিজেদের কারখানা গড়ে উঠলে ১৫-২০ শতাংশ উৎপাদন খরচ কমবে। দ্বিতীয়ত, করোনা আমাদের নতুন করে ভাবার সময় দিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা স্থির করার দিশা দিয়েছে। তাই আমরা এবার আমাদের চিরাচরিত ব্যবসা ক্ষেত্রের পাশাপাশি স্টিল, স্টেইনলেস পাইপ ও স্কাফহোল্ডিং পাইপ উৎপাদন করার জন্য যৌথ উদ্যোগে পশ্চিমবঙ্গে নয়া টিউব প্ল্যান্ট গড়তে চলেছি। এই ব্যবসায় আমরা প্রথম আসছি।’

এই উদ্দেশ্যে হাওড়ার সলপে প্রায় ৩ কোটি টাকা (জমির দাম সহ) বিনিয়োগ করে নয়া কারখানা গড়ে তোলার কাজ আগামী অগস্ট-সেপ্টেম্বর মাস নাগাদ শুরু করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। তার ছয় মাস পর থেকেই উৎপাদন চালু হয়ে যাবে বলে তাহের জানিয়েছেন। শুধুমাত্র এই কারখানাতে প্রায় ৩০০-র বেশি নয়া প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।

সলপে যে টিউব প্ল্যান্ট গড়ে তোলার পরিকল্পনা করা হয়েছে, সেখানে বছরে ১৮,০০০ টন পর্যন্ত উৎপাদন করা সম্ভব। বর্তমানে এ ধরনের পাইপের টন প্রতি গড় দাম ৩০,০০০ টাকা। সে ক্ষেত্রে সলপের কারখানাতে বছরে ৫৪ কোটি টাকার উৎপাদন করা সম্ভব বলে বিশেষজ্ঞদের মত।

প্রস্তাবিত কারখানাটিতে যে স্টিল, স্টেইনলেস পাইপ উৎপাদন করা হবে, সেগুলি চেয়ার, টেবিলের পায়া, পর্দা লাগানো সহ বিভিন্ন দৈনন্দিন গৃহস্থালী ও অফিসের পণ্য ও অন্যান্য ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয়। এ ছাড়া বর্তমানে বাড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রে বাঁশের বদলে স্কাফহোল্ডিং পাইপের তৈরি ভাড়া অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ওই স্কাফহোল্ডিং পাইপ-ও সলপের কারখানায় উৎপাদিত হবে। ভারতে প্রতি মাসে বর্তমানে এই ধরনের স্টিল টিউবের বাজার ৮০-৯০ লক্ষ টন, যার ১০-১৫ শতাংশ চিনা সংস্থাগুলির দখলে।

কাদেরের লক্ষ্য, ভারতের স্টিল টিউবের বাজারে চিনা পণ্যের প্রবেশ একেবারে বন্ধ করে দেওয়া। আর সেই লক্ষ্য পূরণে তাঁরই মতো পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য শিল্পোদ্যোগীদের অনুপ্রাণিত করতে ৬১ বছর বয়সেও ব্যাটন নিজের হাতেই তুলে নিয়েছেন তাহের মহম্মদ ফইজুল্লাভয়।

তথ্যসূত্র: এই সময়

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen