সীমান্তে উত্তেজনা, ভারতে আসছে রাফাল
বিশ্বের অত্যাধুনিক রাফাল ফাইটার জেট ভারতে আসছে সময়ের আগেই। এবং বেশি সংখ্যায়। চীনের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত সংঘাতে লাদাখ থেকে ভারত মহাসাগর—সর্বত্র চূড়ান্ত সমরসজ্জা চলছে। সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় লাদাখের চুশুল বর্ডার পয়েন্টে আবার চীন ও ভারতীয় সেনার কমান্ডার স্তরের বৈঠক হয়েছে। চলছে চাপা টেনশন। আর এমন একটা সময়ই ফ্রান্স থেকে অবশেষে আসছে এই বহু প্রতীক্ষিত যুদ্ধবিমান। সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, ২৭ জুলাই ভারতে আসবে রাফাল জেট। প্রাথমিক চুক্তি অনুযায়ী, প্রথম স্কোয়াড্রনে চারটি রাফাল জেট আসার কথা ছিল। কিন্তু জানা যাচ্ছে, চীনের সঙ্গে সংঘাতের এই আবহে দুই স্কোয়াড্রন রাফাল আসতে চলেছে। অর্থাৎ অন্তত আটটি। নির্ধারিত সূচিতে প্রথম স্কোয়াড্রনের চারটি রাফাল আসার কথা পাঞ্জাবের আম্বালা এয়ারফোর্স বেস স্টেশনে। কিন্তু এখন সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হওয়ায় পশ্চিমবঙ্গের হাসিমারা এয়ারফোর্স বেসকেও প্রস্তুত রাখা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে পূর্ব সীমান্তও সক্রিয় হয়ে উঠবে।
বায়ুসেনা বাহিনীতে রাফালের অন্তর্ভুক্তি এক ধাক্কায় ভারতের এয়ারফোর্স শক্তিকে বহুগুণ বাড়িয়ে দিতে চলেছে। সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হল, রাফাল এয়ারক্র্যাফ্ট আসার পর যুদ্ধে ব্যবহারের জন্য যে সাধারণ সময়সীমা লাগার কথা, এক্ষেত্রে তাও লাগবে না। দ্রুত প্রস্তুত হয়ে যাবে। পরিভাষায় যাকে বলা হয় কমব্যাট রেডি। এর কারণ, রাফালের ডেলিভারির পাশাপাশি প্রায় একইসঙ্গে ফ্রান্স পাঠাচ্ছে মেটিওর এবং স্কাল্প মিসাইল। যেগুলি রাফাল বহন করে থাকে। এই মিসাইল সিস্টেম অনেক আগেই পাঠানো সম্ভব হল কেন? কারণ, ফ্রান্স নিজেদের স্টক থেকেই সেগুলি দ্রুত ডেলিভারি করছে, যাতে রাফাল ডেলিভারি হলেও অকেজো হয়ে বসে না থাকে। অর্থাৎ ২৭ জুলাই রাফাল আসার সঙ্গে সঙ্গেই হয়ে উঠবে ওয়ার রেডি।
এদিকে, শুধুই ফ্রান্স নয়, ইজরায়েলও ভারতকে দ্রুত একঝাঁক অস্ত্র পাঠাচ্ছে। চলতি বছরের শেষে যে ইন-সার্ভিস এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম আসার কথা ছিল, সেটি ইজরায়েল এখনই পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেরকমই কথা হয়েছে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের সঙ্গে ইজরায়েলের ডিফেন্স ফোর্সের। জানা গিয়েছে, সম্প্রতি মস্কোয় গিয়ে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং রাশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে সুখোই এবং মিগ এয়ারক্র্যাফ্টের চুক্তি করেছেন। এছাড়াও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে,অ্যান্টি ট্যাঙ্ক মিসাইল এবং ম্যান পোর্টেবল এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম নিয়ে। ওই অস্ত্র আসার আগেই ইজরায়েল থেকে আসবে এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম।
ফ্রান্সের ইস্ট্রাস থেকে রাফাল উড়বে। একটানা ১০ ঘণ্টার উড়ানের পর রাফাল ল্যান্ড করবে ফ্রান্সের এয়ারবেস আবু ধাবির কাছে আল দারিফায়। সেখানে একরাত বিরতি। পরদিন ২৭ জুলাই ভোরে ভারতের উদ্দেশে ফ্লাই করবে আটটি রাফাল। আম্বালা এয়ারফোর্স বেসস্টেশনে নামবে। ফ্রান্স থেকে ভারতে রাফাল উড়িয়ে নিয়ে আসবেন ভারতীয় বায়ুসেনার পাইলটরা। ভারত ও ফ্রান্সের মধ্যে চুক্তি অনুযায়ী মোট ৩৬টি রাফাল যুদ্ধবিমান কিনছে ভারত। এই রাফাল ডিল নিয়ে অভ্যন্তরীণ রাজনীতি উত্তাল হয়ে উঠেছিল গত বছর।
কেন রাফাল এতটা গুরুত্বপূর্ণ? কারণ, রাফাল যে দুই মিসাইল বহন করতে সক্ষম, সেই এয়ার টু এয়ার বিয়ন্ড ভিজুয়াল রেঞ্জ মেটিওর মিসাইল ১২০ কিলোমিটার এবং এয়ার টু গ্রাউন্ড ক্রুজ মিসাইল স্কাল্প ৬০০ কিলোমিটার দূরের টার্গেটকে আঘাত করতে সক্ষম। এই ক্ষমতার তাৎপর্য হল, লং রেঞ্জ টার্গেট সফল করতে বহু ক্ষেত্রে রাফাল জেটকে ভারতীয় বায়ুসীমা অতিক্রম করারই দরকার পড়বে না।