আবাসন বিক্রি অর্ধেক, নতুন প্রকল্প তৈরি কমাল ডেভেলপাররা
ক্রেতার অভাবে কলকাতা ও তার সন্নিহিত এলাকায় যে বিপুল সংখ্যক আবাসন ইউনিট তৈরি হয়ে পড়ে রয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে সেগুলি বিক্রি করাতেই বেশি ঝোঁক ডেভেলপারদের। সেই কারণে, চলতি অর্থ বছরে গত বছরের তুলনায় ৬০ শতাংশ কম নতুন আবাসন প্রকল্প শুরু করার পরিকল্পনা করেছে তারা। নতুন যে প্রকল্পগুলি শুরু হবে সেখানে ইউনিট প্রতি দাম ১০-১৫ শতাংশ বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন মার্লিন গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান তথা ক্রেডাই ওয়েস্ট বেঙ্গল চ্যাপ্টারের সভাপতি সুশীল মোহতা।
সোমবার ক্রেডাই বেঙ্গল আয়োজিত এক ওয়েবিনারে তিনি বলেন, ‘সেপ্টেম্বর-অক্টোবর পর্যন্ত কোনও নয়া আবাসন প্রকল্প শুরুর সম্ভাবনা আমি দেখছি না। সে ক্ষেত্রে ২,০০০-এর মতো রেডি-টু-মুভ-ইন ইনভেন্টরি এবং গত বছর নির্মাণ শুরু হওয়া আরও ১০-১২ হাজার আবাসন বিক্রির জন্য থাকবে। বাজারের চাহিদা অনুযায়ী অক্টোবরের মধ্যে সমস্ত ইনভেন্টরি বিক্রি হয়ে যাওয়ার কথা। তার পরই নয়া আবাসন প্রকল্পের নির্মাণ শুরু হবে এবং দাম এখনকার তুলনায় ১০-১৫ শতাংশ বাড়বে।’
গত বছর এপ্রিল-জুন ত্রৈমাসিকে বৃহত্তর কলকাতায় মোট ৪৭টি আবাসন প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছিল। সব মিলিয়ে ইউনিট সংখ্যা ৫,৪০০। তুলনায় কোভিড পরিস্থিতিতে চলতি বছরে এপ্রিল-জুন, এই তিন মাসে মাত্র ১৮টি নয়া প্রকল্পের ঘোষণা হয়েছে, যেগুলিতে সম্মিলিত ইউনিট সংখ্যা ৪১৩।
নয়া প্রকল্প ঘোষণার সংখ্যা ৯০ শতাংশের বেশি কমে গেলেও বিক্রি কিন্তু ৫০ শতাংশের বেশি কমেনি। এনকে রিয়েলটর্স-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও পবন আগরওয়ালের মন্তব্য, ‘আমরা ভেবেছিলাম বিক্রি বিরাট কমবে। কিন্তু, গত বছর এপ্রিলে যেখানে আমরা ২২৫টির মতো ইউনিট বিক্রি করেছিলাম, সেখানে এ বছর এপ্রিলে বিক্রি করেছি ১২০টি। অর্থাৎ, ৫০ শতাংশের মতো বিক্রি কমেছে। মে ও জুন মাসে গত বছরের তুলনায় বিক্রি কমেছে ৪০ ও ৩৫ শতাংশ। আমরা অবাক হলেও এটাই সত্যি। ফলে, করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও বিক্রি প্রতি মাসেই বাড়ছে।’ তাঁর মতে, দাম না বাড়ানো এবং ক্রেতাদের সহজে দাম মেটানোর যে সুবিধা ডেভেলপাররা দিচ্ছে, তার ফলেই এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও কলকাতাতে ফ্ল্যাট বিক্রি হচ্ছে।
প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট, ক্রেডাই ন্যাশনাল হর্ষ পাতোদিয়ার ব্যাখ্যা, ‘কলকাতার রিয়েল এস্টেট বাজার খুবই স্থিতিশীল। গত ২০-২৫ বছর ধরে শহরের বাজার একেবারে ক্রেতা নির্ভর। তবে এখন ডলার, পাউন্ডের তুলনায় ভারতীয় টাকার দাম কম থাকায় অনাবাসী ভারতীয়দের পক্ষেও কলকাতার রিয়েল এস্টেট খুবই আকর্ষণীয়।’
অন্য দিকে, অম্বুজা রিয়েলটি চেয়ারম্যান হর্ষ নেওটিয়া জানিয়েছেন, স্বাধীনতার পর থেকে প্রতি ৫-৬ বছর অন্তর ভারতে রিয়েল এস্টেটের দাম ৩০-৫০ শতাংশ বেড়েছে। সেখানে ২০১৫ সাল থেকে দাম এক জায়গাতেই দাঁড়িয়ে রয়েছে। তাঁর পূর্বাভাস, ‘দাম একেবারে থমকে যাওয়া কখনও ঘটেনি। তাই কোভিড মহামারী অতিক্রান্ত হলেই রিয়েল এস্টেটের দাম এক ধাক্কায় অনেকটা বেড়ে যাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘ওয়ার্ক-ফ্রম-হোম বেড়ে যাওয়ায় অফিস ও রিটেল স্পেসের চাহিদা যে একেবারে শূন্য হয়ে যাবে, তা আমি মনে করি না। করোনা পরবর্তী পরিস্থিতিতে ৬-৮ মাস বাদে চাহিদা ফের ধীরে ধীরে বাড়বে।’
বিশেষজ্ঞদের মতে, গৃহঋণে সুদের হার একেবারে তলানিতে নেমে যাওয়া এবং সস্তার আবাসন কেনার ক্ষেত্রে গৃহঋণে সুদের উপর ভর্তুকি পাওয়ার সুবিধা সংক্রান্ত পিএমএওয়াই প্রকল্পের মেয়াদ কেন্দ্র আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানোয় আবাসন কেনার জন্য এটাই সঠিক সময়। ক্রেডাই বেঙ্গল সভাপতি নন্দু বেলানির মন্তব্য, ‘বাড়ি কেনার এটাই সেরা সময়। অর্থনীতি স্থিতিশীল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আবাসনের চাহিদাও উত্তরোত্তর বাড়বে। আর বর্তমান যুগে বাড়িই সেরা সম্পত্তি, কারণ এর মূল্য বাড়ে। সেই কারণে ক্রেতারা দামের বদলে ডেভেলপার সংস্থার ক্রেডিবিলিটি-র উপর এখন বেশি অগ্রাধিকার দিচ্ছেন।’