বাংলাকে দ্বিখণ্ডিত করার নায়ক শ্যামাপ্রসাদ – তাঁর এই কীর্তিগুলোর কথা জানেন?
আজ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের জন্মবার্ষিকী। হালে বিজেপির শাসনকালে শ্যামাপ্রসাদকে এক ভিন্ন রূপে উপস্থান করার চেষ্টা চলছে। নতুন করে ইতিহাস লেখা হচ্ছে। বিজেপি প্রনোদিত সেই ইতিহাসে সত্যকে মিথ্যাচারের চাদরে মুড়ে ফেলা হচ্ছে। বিজেপির লেখা ইতিহাসে কখনই বলা হবে না যে শ্যামাপ্রসাদই ছিলেন বাংলা ভাগের মূল ষড়যন্ত্রী।
বাংলা তথা দেশভাগের জন্য জিন্নাহকে পুরোপুরি দোষী সাব্যস্ত করা হয়। কিন্তু কেবল জিন্নাহ নন, শ্যামাপ্রসাদও চেয়েছিলেন দ্বিখণ্ডিত হোক অখণ্ড ভারত। কেন বাংলা ভাগের প্রশ্নে সরব নন নেহেরু বা বল্লভ ভাই প্যাটেল; সেজন্য তাদের বিরুদ্ধে সওয়াল করেন শ্যামাপ্রসাদ। অবিলম্বে বাংলাকে ভাগ করার জন্য লড়তে থাকেন। ব্রিটিশদের কাছে অনুরোধ করেন ধর্মের ভিত্তিতে বাংলাকে দ্বিখণ্ডিত করা হোক।
জিন্নাহের মতো শ্যামাপ্রসাদও দেশের বিভাজন চেয়েছিলেন। ২৩ এপ্রিল ১৯৪৭ সালে মাউন্টব্যাটেনের সঙ্গে গোপেন রুদ্ধদ্বার বৈঠক সেরেছিলেন শ্যামাপ্রসাদ। অমরিক সিংহের লেখা জানাচ্ছে, শ্যামাপ্রসাদ ভাইসরয় মাউন্টব্যাটেনকে লিখিতভাবে অনুরোধ করেছিলেন, দেশ ভাগ না হলেও বাংলাকে যেন দু-টুকরো করা হয়।
অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী এ কে ফজলুল হকের মন্ত্রীসভার সদস্য ছিলেন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। ১৯৪১-১৯৪২ পর্যন্ত মুসলিম লীগ সরকারের হয়ে বাংলার অর্থ মন্ত্রকের দায়িত্ব সামলেছিলেন শ্যামাপ্রসাদ। এই ফজলুল হকই ছিলেন দেশভাগের অন্যতম প্রধান কারিগর। ১৯৪০-এর মার্চে লাহোরে পাকিস্তান প্রস্তাবের ডাক দিয়েছিলেন ফজলুল হক। দেশভাগের চক্রান্ত জাল বুনে চলে সেই ফজলুল হকের মন্ত্রীসভা আলো করে ছিলেন শ্যামাপ্রসাদ।
বিভাজনের বেসাতি করা শ্যামাপ্রসাদের বিরুদ্ধে নেতাজি প্রথম থেকে আক্রমণাত্নক ছিলেন। ১৯৫১ সালে জন সঙ্ঘ তৈরি হওয়ার আগে পর্যন্ত, হিন্দু মহাসভার নেতা ছিলেন শ্যামাপ্রসাদ। সভারকারদের সঙ্গে তিনিও এই সংগঠন সামলাতেন। এই হিন্দু মহাসভার লোকেদের বিশ্বাসঘাতক বলতেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। ১২ মে, ১৯৪০ তারিখে ঝাড়গ্রামের এক জনসভা থেকে হিন্দু মহাসভার বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। বাংলা তথা দেশের মানুষের কাছে নেতাজি আহ্বান করেন, হিন্দু মহাসভার বিশ্বাসঘাতক। সামাজিক জীবন থেকে এদের বয়কট করা উচিত।
দেশবাসীকে হিন্দু মহাসভার কথা না শোনার আবেদন করেছিলেন দেশনায়ক। তিনি আরও জানিয়েছিলেন হিন্দু মহাসভা সন্ন্যাসীদের রাজনীতিতে নমিয়েছে। সাধু সন্তরা ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে ভোট ভিক্ষা চাইছেন। এই গেরুয়াধারী ভণ্ডদের সামনে দেশবাসীকে বিশেষত হিন্দুদের মাথা নোয়াতে নিষেধ করেগিয়েছেন নেতাজি। তিনি আরও বলেছিলেন, ধর্মের সুযোগ নিয়ে রাজনীতিতে এসেছে হিন্দু মহাসভা। প্রত্যেক হিন্দুর দায়িত্ব হিন্দু মহাসভাকে বয়কট করা। নেতাজির এই বক্তব্য ১৯৪০ সালের ১৪মে একাধিক সংবাদপত্রে প্রকাশিতও হয়েছিল।
বাংলাকে যেন বিভাজন ও বিদ্বেষের আঁতুরঘরে পরিণত না করা হয়, সেই বিষয়ে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে হুঁশিয়ারিও দিয়েছিলেন সুভাষচন্দ্র বসু। বাংলায় যেন কোনভাবেই হিন্দু মহাসভা গড়ে না তোলা হয়, অন্যথায় শক্ত হাতে তা দমন করার ইঙ্গিতও দেন নেতাজি। প্রয়োজনে বিভেদকামী কোন শক্তি বাংলার বুকে তৈরি হওয়ার আগেই তা গুঁড়িয়ে দেওয়ার কথাও বলেন নেতাজি।