রাজ্য বিভাগে ফিরে যান

জাতীয় প্রতীক নির্মাণে শিল্পীর নিজস্বতার তত্ত্ব চলে না, সিংহ বিতর্কে মত বিশ্বভারতীর

July 15, 2022 | 2 min read

জাতীয় প্রতীকের সিংহে মুখের আদল নিয়ে দেশজুড়ে বিতর্ক চলছে। তরজায় জড়িয়েছে শাসক বিরোধী দুই শিবির। নয়া সংসদ ভবনের জন্যে মোদী যে অশোকস্তম্ভ উদ্বোধন করেছেন তা নিয়েই চলছে বিতর্ক। এবার সিংহ বিতর্কে যোগ দিল বিশ্বভারতী। বিশ্বভারতীর অধ্যাপক, শিল্পীরা স্পষ্ট জানাচ্ছেন, জাতীয় প্রতীক নির্মাণের ক্ষেত্রে শিল্পীর নিজস্বতা বা স্বাধীনতা দেখানোর কোন অধিকার থাকে না। নিয়ম ও চিরাচরিত প্রথা মেনে নির্মাণই সেখানে অগ্রাধিকার পায়।

অশোকস্তম্ভের সৃষ্টি কিন্তু বাংলার মাটি থেকে, ভারতের জাতীয় প্রতীক রূপে অশোকস্তম্ভ বিদ্যমান। যার নকশা করেছিলেন প্রখ্যাত শিল্পী নন্দলাল বসু। বিশ্বভারতীর নন্দন আর্ট গ্যালারির প্রাক্তন কিউরেটার ও শিল্পী সুশোভন অধিকারীর কথায়, জাতীয় প্রতীকের সিংহকে নন্দলাল বসু শক্তি এবং শৌর্য-বীর্যের প্রতীক হিসেবে উপস্থাপিত করেছিলেন৷ কিন্তু মোদীর অশোকস্তম্ভ সম্পর্কে তার মত, সেখানে সিংহের রূপ হিংসাত্মক৷ নন্দলালের অশোকস্তম্ভে দেশের প্রাচীন ঐতিহ্যে ছোঁয়া ছিল। কিন্তু হালেরটি নীচের দিকের কারুকার্যগুলিও একেবারেই আধুনিক রূপের। বিশ্বভারতীর মতে এটা অসমীচিন।

কলাভবনের এক অধ্যাপকের কথায় নতুন অশোকস্তম্ভে সিংহের অভিব্যক্তির পরিবর্তন হয়েছে। আগের মতো হয়নি। রেপ্লিকা তৈরিতে শিল্পীর নিজস্ব সৃজনশীলতা যে দেখানোর জায়গা থাকে তাও মনে করিয়েছেন অধ্যাপক।

প্রসঙ্গত, স্বাধীনতা লাভের পরে প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত নেহরু, তদানিন্তন কলাভবনের অধ্যক্ষ নন্দলাল বসুকে ভারতের সংবিধানের নকশা নির্মাণের দায়িত্ব দিয়েছিলেন৷ জাতীয় প্রতীক অশোকস্তম্ভ নির্মাণের জন্য তিনি সিংহের স্বাভাবিক অভিব্যক্তিকে বেছে নিয়েছিলেন৷ অশোকস্তম্ভের চার সিংহের মূর্তি দেশের শৌর্যবীর্য, শক্তি, দৃঢ়তা, পরাক্রমের প্রতীক রূপে গড়ে তোলেন তিনি। কলাভবনের দীননাথ ভার্গব, কৃপাল সিং শেখাওয়াত, জগদীশ মিত্তল ও গৌরী ভঞ্জদের নিয়েই কাজ শুরু করেন তাঁদের মাস্টারমশাই নন্দলাল বসু।

নন্দলালের ছাত্র দীননাথ বাবুর ক’বছর আগে মারা গিয়েছেন। সিংহ বিতর্কে তাঁর স্ত্রীর জানান, ওই সময়ে তাঁর স্বামী কলাভবনের ছাত্র ছিলেন। গুরু নন্দলাল বসু দীননাথ সিংহ দেখতে আলিপুর চিড়িয়াখানায় পাঠিয়েছিলেন। সিংহের আচার, আচরণ, অভিব্যক্তি, ব্যবহার ইত্যাদি পর্যবেক্ষণ দায়িত্ব পড়েছিল দীননাথের উপর, প্রায় তিন মাস যাবৎ নিয়মিত সেখানে গিয়ে পর্যবেক্ষণ চালান দীননাথ। তারপর স্কেচ করেন। দীননাথ বাবুর আরও জানিয়েছেন, শিল্পীর নিশ্চয়ই স্বাধীনতা থাকা উচিত। কিন্তু স্বাধীনতার অর্থ এই নয় যে, স্বাধীনতার নামে শিল্পী নিজের ইচ্ছেমতো জাতীয় প্রতীক গড়বেন।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#National Emblem, #Visva-Bharati University, #Modi Government

আরো দেখুন