রাজ্য বিভাগে ফিরে যান

রসগোল্লা ওড়িশার বলছে কেন্দ্রের পোর্টাল, ‘অজ্ঞতা’ বলল কে সি দাশ কর্তৃপক্ষ

August 1, 2022 | 2 min read

এবার বাঙালির গর্বেও কোপ? পাঁচ বছর আগে রসগোল্লার জিআই স্বীকৃতি পেয়েছে বাংলা। বাংলা ও বাঙালির ঐতিহ্যের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে রসগোল্লা। কিন্তু বাঙালির গর্বের রসগোল্লাকে বাংলার মানতে নারাজ মোদী সরকার। বিজেপি সরকারের পর্যটন মন্ত্রকের ওয়েবসাইট রসগোল্লার জন্মদাতা হিসেবে পুরীকেই স্বীকৃতি দিচ্ছে। আম বাঙালির মতো এই বিষয়ে ক্ষুব্ধ বাংলার মিষ্টি ব্যবসায়ীরাও। মোদী সরকারের কাছে তারা ভুল সংশোধনের জন্য আবেদন করছেন। রাজ্যও এই বিষয়ে উদ্যোগ নিতে চলেছে।

বাংলা যখন রসগোল্লার জিআই স্বীকৃতির জন্য আবেদন করেছিল, তখন গোল বাধিয়েছিল ওড়িশা। ওড়িশার দাবি, তারা প্রাচীনকাল থেকে জগন্নাথদেবকে রসগোল্লা নিবেদন করে আসছেন, তাই সেই মিষ্টি কোনভাবেই বাংলার মিষ্টি হতে পারে না। ওড়িশার সঙ্গে বাংলার এই কাজিয়া গড়িয়েছিল আদালত পর্যন্ত। তবে জয় এসেছিল বাংলায়। ছানা রসে ফেলে নরম মিষ্টি তৈরির ইতিহাস-ঐতিহ্য বহন করে চলেছে বাংলা, কিন্তু ওড়িশা তেমনভাবে মিষ্টি বানায় না। তাই বাংলাই জয় করে রসগোল্লার ভৌগোলিক সত্ত্ব।

যদিও আদালতের স্বীকৃতকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে অন্য দাবি খাড়া করেছে মোদীর পর্যটন মন্ত্রক। পর্যটন দপ্তরের ওয়েবসাইটে দেশের নানান প্রান্তের আঞ্চলিক খাবারের বিবরণ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু রসগোল্লাকে বাংলার বদলে পুরীর মিষ্টি হিসেবে দেখানো হয়েছে। বলা হয়েছে, ছানার সঙ্গে সুজি মিশিয়ে রসে ফেলে তৈরি রসগোল্লা পুরীর মিষ্টি। রথযাত্রায় লক্ষ্মীকে সঙ্গে না নেওয়ায়, দেবী রাগ করেছিলেন। তাই রসগোল্লা খাইয়েই জগন্নাথদেব স্ত্রীয়ের মান ভঞ্জন করেছিলেন। প্রসঙ্গত, গত শতকে বাংলার রসগোলার জনপ্রিয়তার কথা মাথায় রেখে, ওড়িশার পহলা গ্রামে ক্ষীরমোহনে ছানা মিশিয়ে রসগোল্লার মতো করে তৈরির করা শুরু হয়। ওড়িশা ক্ষীরমোহনে জিআই পেয়েছে। কিন্তু ক্ষীরমোহন কখনই রসগোল্লা নয়।​

বিশেষজ্ঞদের মত, রসগোল্লা নিয়ে মিথ থাকতেই পারে, কিন্তু তা কখনই ওড়িশার নয় বলেই মত বাংলা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দপ্তরের কর্মকর্তাদের। জগন্নাথদেব ও লক্ষ্মীদেবীর কিংবদন্তির সঙ্গে ক্ষীরমোহনের নাম শোনা যায়। আর রসগোল্লা হল ছানা ও চিনির কেরামতি; এতে কখনওই সুজি থাকে না। বাংলার মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, রসগোল্লার জিআই ব্যবহার করার অধিকার রয়েছে কেবল তাদের। তাই আপাতত তারা প্রতিবাদ করছেন। মোদী সরকারের এই দাবি ফের প্রকাশ্যে আসতেই, বাংলার মিষ্টি ব্যবসায়ীরা রসগোল্লার উৎস নিয়ে আবার প্রচার করতে শুরু করেছেন।

এই প্রসঙ্গে দৃষ্টিভঙ্গি যোগাযোগ করেছিল বাংলার অন্যতম প্রধান মিষ্টান্ন প্রতিষ্ঠান কে সি দাশ-এর কর্ণধার ধীমান দাশের সঙ্গে। তিনি জানান, “এই ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং লজ্জার। কেন্দ্র সরকারের পর্যটন দপ্তর এতটাই অজ্ঞ, যে কিছুই বলার নেই। রসগোল্লা নিয়ে সারা দেশে তোলপাড় হয়ে গিয়েছে, এতকিছু হয়ে গিয়েছে। প্রমাণ হয়ে গিয়েছে রসগোল্লা বাংলার। নবীন দাশের রসগোল্লা আবিষ্কারের বয়স ১৫০ বছরের উপরে হয়ে গেছে। ১৫৫-১৫৬ বছর পেরিয়ে গেছে। ওদের ক্ষীরমোহন যেটা, সেটাই লক্ষ্মীদেবীকে দেওয়া হত। পরে ওরা ছানা মিশিয়ে রসগোল্লা তৈরি করেছিল। সারা পৃথিবী যেটাকে রসগোল্লা বলে চেনে, তার সঙ্গে এর আকাশ পাতাল তফাৎ। কারণ তাতে সুজি ময়দা আছে, বাদামি রঙের দেখতে। উইকিপিডিয়াতে ওড়িশা নিজেরাই যে ছবি দিয়েছে ওটা বাদামি রঙের। ওটাকে কেউ রসগোল্লা বলবে বলে আমার মনে হয় না।”

তিনি আরও বলেন, “এটি মিস ইনফরমেশন ছাড়া আর কিছুই নয়। উইকিপিডিয়াতে দেখেই পর্যটন মন্ত্রক এমনটা করেছে। এদিকে কেন্দ্র নিজেরাই আমাদের রসগোল্লার ভৌগোলিক সত্ত্ব দিয়েছে। এরা নিজেরাই নিজেদের কথার কন্ট্রাডিকটারী করল।”

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#West Bengal, #Odisha, #Rasgulla, #GITAG, #K C Das

আরো দেখুন