দেশ বিভাগে ফিরে যান

মোদী-শাহের ডিপি তেরঙ্গা, দেশভক্তি নাকি আত্মসমীক্ষা?

August 2, 2022 | 3 min read

সৌভিক রাজ

৭৫ বছরে পা দিচ্ছে ভারতের স্বাধীনতা। দেশজুড়ে পালিত হচ্ছে ‘আজাদি কা অমৃত মহোৎসব’। কয়েক দিন আগেই, দেশবাসীর উদ্দেশ্যে ২ আগস্ট থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টের প্রোফাইল ফটো বদলের আবেদন করেছিলেন মোদী। নিজেও তার প্রোফাইল ফটো পাল্টেছেন মোদী। এমন সিদ্ধান্তকে অনেকেই স্বাগত জানাচ্ছেন, দেশের পতাকাকে সম্মান জানানোর প্রশ্নে ভারতবাসী হিসেবে আমরাও সাধুবাদ জানাই। কিন্তু এটা স্বতঃস্ফূর্তভাবে হচ্ছে তো? হার ঘর তেরঙ্গা প্রকল্পকে সার্থক করতে গিয়ে কাশ্মীরে নতুন বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। পড়ুয়াদের ২০ টাকা দিয়ে জোর করে পতাকা লাগানোর অভিযোগ উঠছে বিজেপির বিরুদ্ধে। এখানেই সন্দেহের উদ্রেক হচ্ছে। এই তেরঙ্গা ডিপির নেপথ্যে কি শুধুই দেশভক্তি? নাকি ২৪-এর আগে নিজেই নিজের জমির কাঠিন্য পরখ করে নিতে চাইছেন মোদী?

নানান ধরণের জল্পনা চলছে, তবে এই জল্পনাকে একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া যায় না। ২০১৪ সালে কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী অবধি, যে মোদী ঝড় চোখে পড়েছিল তা অনেকাংশেই স্তিমিত। সঙ্ঘের অন্দরের সমীক্ষাতেও এমনই ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে। নোটবন্দি থেকে শুরু করে জিএসটি, সাম্প্রতিক সময়ে অগ্নিপথ, আস্তে আস্তে দেশবাসী মোদী জমানার মাশুল গুনতে শুরু করেছেন। আমজনতা উপলব্ধি করতে শুরু করেছে। ‘মোদী হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়’ মিথ কার্যত ভেঙে খান খান হয়ে গিয়েছে। চোরাস্রোত যে কাজ করছে তা আর উপেক্ষা করছে না গেরুয়া শিবির। সঙ্ঘও দোটানায় পড়েছে মোদীকে নিয়ে। অন্যদিকে প্রতিষ্ঠান বিরোধী মানসিকতা দিন দিন বাড়ছে। মোদী ঝুলিতে উরি, বালাকোটের মতো কোন অস্ত্রও আপাতত নেই, কোন কৌশল কাজ করছে না। সত্যি বলতে মোদীর প্রত্যাবর্তনের জন্যে সামনে কোন বড় ইস্যুও মিলছে না। মনোবিজ্ঞান বলে, যখনই ভোটদাতারা এমন বৈচিত্রহীন অবস্থার মধ্যে দিয়ে এগোতে থাকেন, তখন পরিবর্তন আসা আবশ্যক হয়ে পড়ে। সে ভয়ও থাকে। সেটাও বিজেপির মাথা ব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে।

আরএসএস ক্রমশই জনদরদী ভাবমূর্তি তুলে ধরতে চাইছে। তাই বিজেপি ও মোদী সরকারের জনবিরোধী নীতির সমালোচনায় সরব হতে, দেখা যাচ্ছে সঙ্ঘের নেতাদের। এতেই বিজেপি ও সঙ্ঘের ফাটল ক্রমশ চওড়া হচ্ছে। মূল্যবৃদ্ধি থেকে শুরু করে দেশে কৃষকদের সমস্যা, ইত্যাদি নিয়ে সঙ্ঘ পরিবারকে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে সরব হতে দেখা গিয়েছে। হয়ত শাহ-মোদী শিবিরের সঙ্গে, সঙ্ঘের মতোই বিজেপির অন্দরের সমীকরণ বদলেছে। শাহের ঘোষণার পরেও, ২৪-এ মোদীর প্রধানমন্ত্রী পদপার্থী হাওয়ার প্রশ্নেও সন্ধিহান সঙ্ঘ ও গেরুয়া শিবিরের একাংশের নেতারা। এই পরিস্থিতিতে পায়ের তলার জমি কতটা মজবুত তা দেখে নিতে চাইছেন মোদী? আর তাতেই কি এই পদক্ষেপ?

হয়ত এই ডিপি বদল দলের অন্দরের ফ্লোর টেস্ট। দলের অন্দরে কোন কোন সাংসদ-নেতা-মন্ত্রীরা মোদীর পক্ষে তা দেখে নিতেই মোদী -শাহেরা নিজেই এই ফন্দি এঁটেছেন। ডিপি বদলালে সে মোদীর পক্ষে, আর ডিপি না বদলালে সে মোদী বিরোধী। তবে আরও একভাবে মাটি পরীক্ষা করতে পারে মোদী শিবির। যদিও তা কেবল জনসমর্থন মাপা। ঠিক যেমন করোনার সময় থালা বাজানোর, প্রদীপ জ্বালানোর নিদান দেওয়া হয়েছিল, তেমনই ডিপি বদলানো দেখে নেওয়া হবে। আর আজকের দিনে যেভাবে ফোন নম্বরের সঙ্গে আধারসহ নানা ধরণের পরিচয় পত্রের সংযুক্তিকরণ করা হয়েছে, তাতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্র্যাক রাখা কোন সমস্যাই নয়। আর টেকফগ, পেগাসাসের মতো হাতিয়ার তো অমিত মালব্যদের কাছে রয়েইছে।

তবে আরও এক সম্ভাবনার কথা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। হয়ত মোদীর মুখ ২৪ সালে কতটা জনপ্রিয় থাকবে তা একবার পরীক্ষা করতে চাইছে বিজেপি। মোদীর কথায় দেশবাসীর ডিপি বদলের অর্থ মোদী এখনও গ্রহণযোগ্য। আর তা না হলে, স্পষ্ট হবে মোদীর গ্রহণযোগ্যতায় ভাটার টান পড়েছে। সেই অনুযায়ী, মোদীর মুখ মেরামতে নামবে বিজেপি। হাতে সময় আঠারো মাস, আর তার আগেই এ কাজ সারতে হবে বিজেপিকে; নয়ত ২৪-এর জন্য গেরুয়া শিবিরকে অন্য মুখের সন্ধানে বেরোতে হবে।

তবে এই তেরঙ্গা অভিযানে, মোদী এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চাইছেন। ক্ষমতা ধরে রাখতে বিজেপির অন্যতম স্তম্ভ হল জাতীয়তাবাদী আবেগ। এই হর ঘর তেরঙ্গা অভিযানে ভারত আবেগ কাজ করছে, ফলে কেউ এর বিরোধীতা করলেই অ্যান্টিন্যাশনাল অস্ত্র দেগে দেবে বিজেপি। অন্যদিকে ফের একবার জাতীয়বাদের ধারক ও বাহক হিসেবে উঠে আসবে মোদী ও তার দল। এতেও বিজেপির ভাবমূর্তি খানিক মেরামত হবে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#India, #Narendra Modi, #politics, #Independence Day, #patriotism, #Tiranga DP

আরো দেখুন