ত্রাণ বিলিতে অনিয়ম, রণক্ষেত্র পটাশপুর
রাস্তা অবরোধ তুলতে গিয়ে পুলিশ-জনতা খণ্ডযুদ্ধে রণক্ষেত্র হয়ে উঠল পটাশপুর। পুলিশকে লক্ষ করে ইটবৃষ্টি, গাড়ি ও দোকান ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে। পাল্টা লাঠিচার্জ ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটানোর অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। শূন্যে গুলি চালানোর অভিযোগ উঠলেও তা অস্বীকার করেছে পুলিশ।
শুক্রবার দুপুরে পটাশপুরের মোতিরামপুরের এই গোলমালের ঘটনায় আহত হয়েছেন উভয়পক্ষের বেশ কয়েকজন। তবে রাত পর্যন্ত সেই সংখ্যাটা পরিষ্কার নয়। এগরার এসডিপিও আকতার আলি বলেন, ‘বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। অভিযুক্তদের চিহ্নিত করার পর গ্রেপ্তার করা হবে।’
উম্পুনের ক্ষতিপূরণ বিলিতে দুর্নীতি ও স্বজনপোষণের অভিযোগে খেজুরি ,নন্দীগ্রাম, তমলুক,পটাশপুর-সহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় ক্ষোভ-বিক্ষোভ চলছিল কিছুদিন ধরেই। কয়েকদিন আগে খেজুরিতে উম্পুনে অনিয়মের অভিযোগে শাসক ও বিরোধী সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। আহত হয়েছিলেন উভয় পক্ষের কয়েকজন। বৃহস্পতিবার পটাশপুরের প্রতাপদিঘিতে স্থানীয় বিডিও অফিসে গোলমালের ঘটনা ঘটে। শুক্রবার ফের মোতিরামপুর বাজারে এগরা-বাজকুল রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন স্থানীয়রা। তাঁদের দাবি, যাদের পাকাবাড়ি, মোটা মাইনের চাকরি সেই সব শাসকদলের লোকজন ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে। স্থানীয় পটাশপুর ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি চন্দন সাউ-এর মদতে এই দুর্নীতি চলছে।
এ দিন মোতিরামপুর বাজারে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির দোকানের সামনে বিক্ষোভে বসেন এলাকার মানুষরা। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন কোনও রাজনৈতিক দলের পতাকা নিয়ে বিক্ষোভ না হলেও এই বিক্ষোভে বিজেপি, সিপিএম ও শাসকদলের একটি অংশের লোকজন সামিল হয়। যদিও তৃণমূলের অভিযোগ, বিজেপি ও সিপিএমের উস্কানিতেই স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ এ দিন পথ অবরোধ করে। অবরোধের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এলে চন্দন সাউকে ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন বিক্ষোভকারীরা। পুলিশ এসে পথ অবরোধ সরানোর চেষ্টা করলে শুরু হয় পুলিশ-জনতা খণ্ডযুদ্ধ। ভাঙচুর করা হয় কয়েকটি দোকান ও রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ি। এরপর পুলিশ লাঠিচার্জ করে অবরোধ সরানোর চেষ্টা করে সফল না হওয়ায় কাঁদানে গ্যাসের সেল ফাটায় বলে অভিযোগ। বেশ কিছুটা সময় গোলমাল চলার পর দুপুর নাগাদ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি চন্দন সাউ এ দিনের ঘটনা নিয়ে কোন মন্তব্য করেননি। তবে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘রাজনৈতিক কারণে এমন অভিযোগ করা হচ্ছে।’ জেলা তৃণমূল সভাপতি শিশির অধিকারী বলেন, ‘কয়েকজন লোক রাস্তা অবরোধ করেছিল। পুলিশ অবরোধ সরাতে গেলে তাদের উপর হামলা করেছে বিক্ষোভকারীরা। এই গোলমালের পেছনে বিজেপি-সিপিএমের মদত রয়েছে। উম্পুনের ত্রাণ নিয়ে কোনও দুর্নীতি হয়নি। প্রকৃত মানুষ যাতে ক্ষতিপুরণ পায় সেদিকে লক্ষ্য রাখা হচ্ছে।’ বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অনুপ চক্রবর্তী বলেন, ‘শাসকদলের দুর্নীতির বিরুদ্ধে মানুষ পথে নেমে বিক্ষোভ দেখিয়েছে। রাজনৈতিক রং ছাড়া এই বিক্ষোভ করেছে সাধারণ মানুষ। মিথ্যা করে আমাদের ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছে।’