বাংলার ঐতিহ্যময় ইতিহাসের খোঁজে
কথায় বলে, বাঙালির পায়ে সর্ষে। ঘুড়তে যাওয়ার কোনও কারণ লাগে না বাঙালির। উঠল বাই, তো ঘুড়তে যাই। আর শীতকাল ঘোরাফেরার আদর্শ সময়।
কি নেই এই বাংলায়? সমুদ্র, পাহাড়, জঙ্গল – এমনকি ঐতিহাসিক পর্যটন স্থলেরও অভাব নেই। ঐতিহাসিক পর্যটনের যা রোমাঞ্চ, তা তুলনারহিত। বাংলার আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে রাজা রাজরার ইতিহাস। সেই দিনগুলি আজ অতীত, কিন্তু রয়ে গেছে তাদের নিদর্শন। একবার ঘুরে দেখতেই পারেন। আজকের জেলা বর্ধমান।
দেবীপুর
হাওড়া-বর্ধমান মেইন লাইনেই পড়ে দেবীপুর। এখানে টেরাকোটার কাজ করা লক্ষ্মী জনার্দন মন্দির সবচেয়ে বিখ্যাত। ১৮৩৬ সালে নরোত্তম সিংহ এটি নির্মাণ করেন। পরবর্তী কালে তাঁর দেওয়ান এই মন্দিরের দেখাশোনা করেন।
মন্দিরের দেওয়ালে টেরাকোটার অনবদ্য কাজ বাংলার আটচালা এবং ওড়িশার রেখদেউল শিল্পশৈলীকে ফুটিয়ে তুলেছে। মন্দিরের দেওয়ালে রয়েছে কৃষ্ণ লীলার বিভিন্ন ছবি।
হাওড়া-বর্ধমান লাইনে দেবীপুর স্টেশনে নেমে বাস বা ট্রেকারে চলে যান শিবতলা।
আমাদপুর
কলকাতা থেকে মাত্র ৮৯ কিলোমিটার দূরে ১ ঘন্টা ৪৫ মিনিট ড্রাইভে পৌঁছে যান এক জমিদারী ঘরানায়। দেখতে পাবেন চৌধুরীদের জমিদার বাড়ি। বর্ধমানের মেমারী থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার।
৩৫০ বছরের পুরনো ইতিহাসের সাক্ষী এই রাজবাড়ী। এই রাজবাড়িতে নিশিযাপন হয়ে যাবে আপনার জীবনের এক অনন্য অভিজ্ঞতা। এখানের হাজার বছরের পুরনো আশ্রম, বটতলা, বাঘবাড়ি, আদিবাসী গ্রাম আকর্ষণীয় দ্রষ্টব্য।
কালনা ও অম্বিকা কালনা
ভাগীরথীর পাড়ে অবস্থিত এই জায়গা। একে মন্দির নগরী বললেও ভুল হবে না। এক সময়ের অম্বুয়া নগরীই অম্বিকা কালনা বলে পরিচিত হয়।
১৫০০ সালে মহাপ্রভু শ্রী চৈতন্য শান্তিপুর থেকে এখানে আসেন গৌরী দাস পন্ডিতের বাড়িতে। সেই বাড়িতে এখনো তাঁর পদ চিহ্ন সংরক্ষিত রয়েছে।
১৭৩৯ সালে মহারানী বিষণ কুমারি এখানে মন্দির নির্মাণ করেন। এখানে গিরী গোবর্ধন মন্দিরের টেরাকোটার কাজ আপনাকে মুগ্ধ করবে। পঞ্চরত্ন শৈলির মন্দির, অনন্ত বাসুদেব মন্দির মনে করিয়ে দেবে বাংলার শিল্পকলা।
১৭৫৪ সালে বর্ধমানের মহারাজ ৫০ ফুটের চার চালা এই মন্দিরটি তৈরী করেন। ২০০ বছর পুরনো জামি মসজিত, কমলাকান্তের বাড়ি, বৌদ্ধ মন্দির এখানকার দ্রষ্টব্য।
কলকাতা থেকে ট্রেনে চেপে পৌঁছে যেতে পারেন ৮২ কিলোমিটার দূরের এই কালনায়।
পূর্বস্থলী
কলকাতা থেকে মাত্র ১২০ কিলোমিটার দূরেই রয়েছে ১১ কিলোমিটার দীর্ঘ এক জলাশয়। নাম ‘চুপি চর’। দেখতে পাওয়া যায় অসংখ্য পরিযায়ী পাখি। প্রায় ১০০ প্রজাতির পাখির দেখা মেলে এখানে। এখানকার কাঠের তৈরী পুতুলের গ্রাম ও জমিদার বাড়ি অনন্য দ্রষ্টব্য।
হাওড়া থেকে কাটোয়া লোকালে পূর্বস্থলী স্টেশনে নেমে টোটোতে চেপে যাওয়া যায় ‘চুপি চর’।
আঁটপুর
টেরাকোটার মন্দির নগরী। দেওয়ান আঁটর খাঁ –এর নামে নাম এই জায়গাটির। ১৭৮৬ সালে রাজা কৃষ্ণ চন্দ্রের দেওয়ান গঙ্গামাটি আর পোড়ামাটির ১০০ ফুট উঁচু রাধাগোবিন্দ মন্দির তৈরী করেন। চার চালার ছাদ, খিলানের স্তম্ভ এবং টেরাকটার অসাধারণ কাজ নজর কাড়ার মতো।
গম্বুজ আকৃতির লোকমঞ্চ, চন্ডী মন্ডপ, কাঠের ফ্রেমে বাঁধানো রাধা কৃষ্ণের মূর্তি দেখার মতো।
এখানে বাবুরাম ঘোষের দুর্গা বাড়ীতে রামকৃষ্ণের কাছে দীক্ষা নেন নরেন্দ্র নাথ দত্ত। সেই দিনকে স্মরণে রেখে এখানে পুতাগ্নি উৎসব পালন করা হয়। এখানেই রয়েছে হেমচন্দ্র বন্দোপাধ্যায়ের জন্ম ভিটে।
হাওড়া স্টেশন থেকে তারকেশ্বর লোকালে হরিপাল স্টেশনে নেমে বাসে করে আঁটপুর যাওয়া যায়।