পেগাসাস বিতর্কের মাঝে টুইটার নিয়ে বিস্ফোরক অভিযোগ মোদী সরকারের বিরুদ্ধে
বিরোধী দলের নেতা-নেত্রীদের ফোনে আড়ি পাতছে বিজেপি। ইজরায়েলে তৈরি পেগাসাস স্পাইওয়্যার ভারতে ব্যবহার করা হয়েছিল বলে নির্দিষ্ট অভিযোগ উঠেছিল। এই অভিযোগে তোলপাড় হয়েছে জাতীয় রাজনীতি। বৃহস্পতিবার পেগাসাস-কাণ্ডে গঠিত বিশেষ তদন্তকারী দলের (সিট) পেশ করা রিপোর্টের বক্তব্য প্রকাশ করল সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি এনভি রমণার বেঞ্চ বুধবার তদন্ত কমিটির পেশ করা সেই রিপোর্ট উদ্ধৃত করে বলেছে, ২৯টি ফোন পরীক্ষার পরে ৫টিতে ‘ম্যালওয়্যার’ সংক্রমণের ঘটনা চিহ্নিত করা গিয়েছে। তবে সেগুলি আড়ি পাতার জন্য ব্যবহৃত হয়েছে কি না, সে বিষয়ে নিশ্চিত ভাবে রিপোর্টে কিছু বলা হয়নি বলে জানিয়েছে প্রধান বিচারপতি বেঞ্চ। সেই সঙ্গে শীর্ষ আদালত নিযুক্ত কমিটির রিপোর্টে স্পষ্ট ভাষায় জানানো হয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকারের তরফে তদন্তে কোনও সহযোগিতা করা হয়নি।
এর পাশাপাশি আরেকটি খবর চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। অতি সম্প্রতি ওয়াশিংটন পোস্টের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারত সরকার টুইটারকে বাধ্য করেছে নিজেদের এজেন্ট নিয়োগ করতে। এর ফলে টুইটার ব্যবহারকারীদের বিপুল পরিমাণ তথ্য ভারত সরকারের কাছে চলে যেতে পারে।
দেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ করে আসছে, মোদী সরকার নজরদারি ও তথ্য চুরির কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। যার ফলে নাগরিকদের অধিকার বিপন্ন হচ্ছে। এবার ওয়াশিংটন পোস্ট টুইটারের নিরাপত্তার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রাক্তন প্রধান পিটার জাটকোর গুরুতর অভিযোগ প্রকাশ্যে এনেছে।
পিটার জাটকো টুইটারের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা সম্পর্কে বেশ কিছু গুরুতর অভিযোগ জানিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিকিউরিটিস অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছেন। তাঁর ৮৪ পাতার অভিযোগে রয়েছে ভারতের প্রসঙ্গও। তাঁর অভিযোগ, ভারত সরকার নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের নিজেদের এজেন্ট হিসেবে টুইটারে নিয়োগ করতে বাধ্য করেছিলেন। টুইটারে নিরাপত্তা সুরক্ষা সংক্রান্ত ত্রুটির সুযোগেই এরা বিপুল পরিমাণ স্পর্শকাতর তথ্য দেখার সুযোগ পেয়ছেন। ভারত সরকার কী পরিমাণ তথ্য সংস্থার কাছে চেয়েছিলেন তা জানানো হয়েছে বলে সংস্থা রিপোর্ট করলেও কোম্পানির বেতনভুক এজেন্টদের কথা জানানো হয়নি। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তা জানতেন। ভারত সরকারের এজেন্টদের কাছে সংস্থার ব্যবহারকারীদের তথ্য ও পূর্ণ ব্যবস্থা খুলে দিয়ে ব্যবহারকারীদের প্রতি দায়বদ্ধতা লঙ্ঘন করা হয়েছে। জাটকোর মতে ‘এই ভাবে বিদেশি গোয়েন্দাদের অনুপ্রবেশ গণতন্ত্রের জন্য বিপদ’। জাটকো আরও জানিয়েছেন, স্থানীয় স্তরে নির্দিষ্ট কর্মী নিয়োগেও ভারত সরকার সংস্থাকে বাধ্য করেছে। যাঁরা সরকারের হয়ে কাজ করতে পারবেন। আরও কয়েকটি দেশ এই কাজ করেছে বলে অভিযোগ।
ওয়াশিংটন পোস্টে জানানো হয়েছে, জাটকোর অভিযোগে রয়েছে ভারত সরকার এই এজেন্ট নিয়োগ করতে বাধ্য করেছিল এমন এক সময়ে যখন দেশব্যাপী সরকার বিরোধী প্রতিবাদ চলছে। কোনও সময় উল্লেখ না থাকলেও এই অভিযোগে স্পষ্ট যে ‘প্রতিবাদকারীদের’ ওপরে নজরদারির জন্যই টুইটারে লোক নিয়োগ করা হয়েছিল।
অতীতে ফেসবুক নিয়েও মোদী সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল। ফেসবুক বিজেপি ও মোদী সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছিল। ফেসবুকের ভারতের দায়িত্বপ্রাপ্ত শীর্ষ কর্ত্রী হিন্দুত্ববাদীদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে সাম্প্রদায়িক প্রচার চালাতে দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছিল।