দেশ বিভাগে ফিরে যান

কোভ্যাক্সিনের ব্যবহার ২০২১-এর আগে অসম্ভব, পিছু হঠল কেন্দ্র

July 6, 2020 | 2 min read

করোনার প্রতিষেধক ১৫ অগস্টের মধ্যে বাজারে আনা যে একপ্রকার অসম্ভব তা মেনে নিয়েও ঢোঁক গিলল কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রক। রবিবার প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরোর ওয়েবসাইটে তাদের বিবৃতিতে লেখা হয়েছিল, ‘২০২১ সালের আগে করোনার প্রতিষেধক জনসাধারণের ব্যবহারযোগ্য করে তোলা কঠিন।’ কিন্তু কিছু ক্ষণের মধ্যেই সেখান থেকে উধাও হয়ে যায় লাইনটি। পরিবর্তিত বিবৃতিতে লেখা হয়, ‘ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল অফ ইন্ডিয়া, সিডিএসসিও এই প্রতিষেধকগুলির হিউম্যান ট্রায়ালের অনুমতি দেওয়ার মুহূর্তেই বিশ্বব্যাপী করোনা সংক্রমণের শেষের সূচনা হয়ে গিয়েছে।’

অর্থাৎ পূর্ব প্রতিশ্রুতি মতো চলতি বছরের স্বাধীনতা দিবসেই যে দেশীয় প্রতিষেধকের দেখা মিলবে, সে কথা আর জোর দিয়ে বলছে না মন্ত্রক। বরং তাদের এ দিনের এই ‘ধরি মাছ, না ছুঁই পানি’ জাতীয় মন্তব্য থেকে অনেকেরই ধারণা, ভ্যাকসিন বাজারে আনার দিনক্ষণ ঠিক করার ব্যাপারে অবস্থান বদলেছে কেন্দ্র। অন্তত বিশিষ্ট বিজ্ঞানী টি ভি বেঙ্কটেশ্বরনের লেখা এ দিনের প্রথম বিবৃতিতে তেমনটাই ফুটে ওঠে। তাতে লেখা হয়েছিল, ‘কোভিড-১৯ প্রতিষেধক তৈরিতে ছ’টি সংস্থা কাজ করছে। কোভ্যাক্সিন ও জাইকভ-ডি নামে দুটি দেশীয় প্রতিষেধক-সহ গোটা বিশ্বে ১৪০টির মধ্যে ১১টি সম্ভাব্য প্রতিষেধক এ মুহূর্তে হিউম্যান ট্রায়াল পর্যায়ে রয়েছে।’ সে সঙ্গেই ছিল পূর্বাভাস — এগুলির কোনওটিরই ২০২১ সালের আগে জনগণের ব্যবহারযোগ্য হয়ে ওঠা কঠিন। তবে কয়েক মুহূর্ত পরেই সংশোধিত হয় বিবৃতি। তাতে দেখা যায়, ওই লাইনটিই নেই আর। গত কয়েক দিন ধরে যে অবস্থান নিয়ে জোরালো সওয়াল করেছে কেন্দ্র, তা বাঁচাতেই যে এমন ভাষার ম্যারপ্যাঁচ,তা মোটামুটি স্পষ্ট হয়ে যায়।

কিন্তু প্রশ্ন একটাই। হিউম্যান ট্রায়ালের ফল না পাওয়া পর্যন্ত কোন যুক্তিতে সেটিকে বাজারে আনার দিনক্ষণ স্থির করেছিল ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)? এতেই শেষ নয়। বিশেষজ্ঞদের বিভিন্ন স্তর থেকে বিষয়টির বৈজ্ঞানিক সম্ভাব্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হলে কোভ্যাক্সিন তৈরির সঙ্গে জড়িত ওই কেন্দ্রীয় সংস্থা আবার দাবি করে, তারা শুধু সরকারি লালফিতের ফাঁস থেকে গোটা প্রক্রিয়াটিকে মুক্ত করে কাজে গতি আনতেই ১৫ অগস্ট তারিখটি স্থির করেছিল। শুক্রবার আইসিএমআরের বিতর্কিত দাবিটি প্রকাশ্যে আসতেই অবশ্য ‘এই সময়’-র তরফে স্পষ্টই তুলে ধরা হয়েছিল যে, নিয়ম মেনে চললে সে প্রতিষেধকের এখনই বাজারে আসার সম্ভাবনা প্রায় নেই। ১৫ অগাস্ট কেন, আগামী কয়েক মাসের মধ্যেও তা সম্ভব নয়। কেননা, যে প্রটোকল মেনে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হওয়ার কথা, তাতে অন্তত ১০-১১ মাস লাগার কথা। এ দিন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রকের বক্তব্যেও কার্যত সেই কথাটিই কায়দা করে বলা হয়েছে।

যদিও ওয়াকিবহাল মহলের বক্তব্য, এর পিছনে সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক অঙ্ক রয়েছে। গত সপ্তাহেই হিউম্যান ট্রায়ালের জন্য ছাড় পেয়েছিল কোভ্যাক্সিন ও জাইকভ-ডি। তা দেখেই বিজ্ঞানীদের বক্তব্য ছিল, এত অল্প সময়ে প্রতিষেধক বাজারে আনার কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা অবাস্তব। এ দিন সংশোধিত বিবৃতিতে সরাসরি সে বক্তব্য না মানলেও পুরোনো অবস্থান যে আঁকড়ে রাখছে না কেন্দ্র, তা মোটামুটি স্পষ্ট।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#covid 19 vaccine

আরো দেখুন