বিনোদন বিভাগে ফিরে যান

২০১৯ – বাংলা ছবির সালতামামি

December 31, 2019 | 3 min read

দেখতে দেখতে শেষ হয়ে গেল ২০১৯ সাল। প্রতি বছরের মত এবছরেও প্রত্যাশার পারদ পূর্ণ করেছে বহু বাংলা চলচ্চিত্র। ছকবাঁধা কমার্শিয়াল সিনেমা থেকে ভিন্নধর্মী ছবি, সামাজিক বার্তা থেকে নিখাদ আনন্দ – এবছর বাংলা সিনেমার ঝুলিতে ছিল নানারকম পসরা।

২০১৯ এর কিছু উল্লেখযোগ্য বাংলা সিনেমাঃ-

নগরকীর্তন – কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের এই ছবি জাতীয় পুরস্কার পেয়েছে। বছরের প্রথম দিকে সিনেমাহলে মুক্তি পায় ‘নগরকীর্তন’। মধু ও পুটির প্রেমের গল্প। মানুষের ব্যক্তিগত পছন্দকে সবসময়ই সমাজ তার মাপকাঠিতে তুল্যমূল্য বিচার করে এসেছে। ‘নগরকীর্তন’ সেই বদ্ধমূল ধারণা থেকে সরে গিয়ে পরিবর্তনের দিশারী। মুক্তির পর বহুল প্রশংসিত হয়েছিল ঋদ্ধি সেন ও ঋত্বিক চক্রবর্তী অভিনীত এই ছবি। বক্সঅফিসেও সাফল্য পায় অ্যাক্রোপলিস এন্টারটেনমেন্ট প্রযোজিত ‘নগরকীর্তন’।

রাজলক্ষী ও শ্রীকান্ত – প্রদীপ্ত ভট্টাচার্যের এই ছবি এ বছরের উল্লেখযোগ্য ইভেন্ট বলা চলে। হল না পাওয়া, পরে তা পেলেও শর্তসাপেক্ষে, কার্যত হাতে গোনা ছিল সিনেমা হলের সংখ্যা। সাতদিনের ব্যবধানে মোটামুটি মুখের কথাতেই হলে পৌঁছে যান দর্শক। সমালোচনার নিরিখে প্রথম সারিতে জায়গা করে নেয় ঋত্বিক-জ্যোতিকার ‘রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত’। শরৎসাহিত্যের মায়াজাল ছিঁড়ে এ ছবি অসহিষ্ণু সময়ের কথা বলে। শুধুমাত্র রাজলক্ষ্মী, শ্রীকান্ত, ইন্দ্রনাথ ও অন্নদা চরিত্রের নির্যাসটুকু মাথায় রেখে বড়পর্দায় স্বতন্ত্র কাহিনি বুনেছেন পরিচালক।

জ্যেষ্ঠপুত্র – ছবিটিকে খুব গুছিয়ে বানিয়েছেন কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় ৷ গল্পের মধ্যের আরেক গল্পকেই খুব সুক্ষ্নভাবে তুলে এনেছেন প্রতিটি দৃশ্যে৷ তাই তো আপতদৃষ্টিতে দুই ভাইয়ের টানাপোড়েনের মধ্যে দিয়ে প্রছন্নভাবে ঢুকে পড়ে এক সুপারস্টার ও আরেক ছাপোষা নাটকের অভিনেতার ‘ইগো’র সংঘর্ষ ৷ যা কিনা সংলাপের প্রতিটি লাইনে লাইনে ধরিয়ে দেন কৌশিক ৷

তারিখ – চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায় পরিচালিত দ্বিতীয় ছবি সমালোচকদের নিরিখে তৃতীয় নম্বরে। সেরা সংলাপের জন্য জাতীয় পুরস্কার পায় ‘তারিখ’। ১ ঘণ্টা ৫৭ মিনিটের এই ছবির মেরুদণ্ড তৈরি করে দেয় ফেসবুক স্মৃতির ঝাঁপি। মূল চরিত্র তিনটি – অনির্বাণ (শাশ্বত), স্ত্রী ইরা (রাইমা) এবং অনির্বাণের ছোটবেলার বন্ধু রুদ্রাংশু (ঋত্বিক)। স্মৃতির পিঠে স্মৃতি এঁকে এগিয়ে চলে ছবির গল্প। সমালোচকদের নিরিখে এই ছবি ভাল হলেও বক্সঅফিসে ব্যবসা করতে পারেনি তেমন।

কেদারা – ‘কেদারা’ দিয়েই ছবি পরিচালনায় হাতেখড়ি সঙ্গীত পরিচালক ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্তর। পরিত্যক্ত এক মানুষের জীবনকাহিনি। একাকীত্ব কাটাতে প্রিয়জনদের গলা নকল করে নিজের সঙ্গে কথোপকথন চালিয়ে যান তিনি। এক প্রান্তিক মানুষের নিজেকে ভাল রাখার আশ্চর্য এক চিত্রনাট্য। এই মানুষটির জার্নির সঙ্গেই অদ্ভুতভাবে জুড়ে যায় কেদারা। জাতীয় পুরস্কারের মঞ্চে বিশেষ জ্যুরির সম্মান পায় এই ছবি। বক্সঅফিস মুখ ঘুরিয়ে নিলেও সমালোচক মহলে বহুল প্রশংসতি ছবি ‘কেদারা’।

গুমনামী – পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ‘গুমনামী’ রিলিজ এ বছরের মেগা ইভেন্ট। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোসের অন্তর্ধান রহস্য নিয়ে তৈরি এই ছবি ঘিরে বিতর্ক কম হয়নি। নানা আইনি জটিলতা পেরিয়ে বক্সঅফিসে অবশেষে মুক্তি পায় গুমনামী। প্রথমদিন থেকেই ছক্কা হাঁকায় প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় অভিনীত ছবিটি। সৃজিতের ছবিতে অভিনয়ের মান, বা শিল্পভাবনা, বা ডিটেলিং নিয়ে নতুন করে কিছু বলার থাকে না। ছবি মুক্তির আগে নেতাজীর ভূমিকায় প্রসেনজিতের ‘লুক’ নিয়ে কৌতূহল ছিল তুঙ্গস্পর্শী। সেই নিরিখে নিরাশ হননি দর্শক, সত্যিই আশ্চর্যরকম মানিয়েছিল তাঁকে, সঙ্গে ছিল অত্যন্ত স্বচ্ছন্দ অভিনয় এবং শরীরী ভাষা।

কিয়া ও কসমস – অটিজিমে আক্রান্ত এক মেয়ে বদ্ধপরিকর, বন্ধু বিড়ালের মৃত্যু রহস্য উদঘাটন করবে সে। সেই সন্ধানের রাস্তাতেই জানতে পারে তার বাবা মৃত নয়, জীবিত। সুতরাং, শুরু হয় বাবাকে খোঁজার অভিযান। সেই কিয়া আর তার কসমসকে (বিড়াল) নিয়ে তৈরি ছবি।

মহালয়া – মহালয়ার সকালে আকাশবাণীর পৌঁছে দেওয়া বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রর স্তোত্রপাঠ না শুনলে আজও বাঙালির মনে হয় না পুজো এল। কিন্তু বহু বছর আগে এক পুজোয় মহালয়ার সকালের অনুষ্ঠানে তার জায়গায় আনা হয়েছিল, বাঙালির একমাত্র মহানায়ককে। উত্তমকুমারকে। কার মাথায় এমন ভাবনা উদয় হল, উত্তমকুমার কেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণর জুতোয় পা গলালেন, ফলটাই বা কী হল, তা নিয়ে সৌমিক সেনের ছবি ‘মহালয়া’।

রবিবার – ‘রবিবার’ ছবিতে সংসার এবং সম্পর্ক হারিয়ে ফেলা দু’জন মানুষ, একটা রবিবারের বারো কিংবা ষোলো ঘণ্টা আবার একসঙ্গে থাকার ভিতর দিয়ে অনুভব করে, ‘হারায় যা তা হারায় শুধু চোখে’, জীবন, সমুদ্রের মতোই যা নেয় তার অনেকটাই ফিরিয়ে দিয়ে যায়, ঢেউয়ে ঢেউয়ে, ফেনায় ফেনায়। যে ঝিনুকগুলো কুড়িয়ে এনে ফেলা দেওয়া হয়েছিল ভিতরে মুক্তো নেই বলে, সেই ঝিনুকগুলো এত সুন্দর যে দ্বিতীয়বার কুড়িয়ে নেওয়ার সময় তাদের ‘মুহূর্ত’ নাম রাখতে ইচ্ছে করে।

ভিঞ্চিদা – গল্পের কথক ভিঞ্চিদা নিখুঁত প্রস্থেটিক মেকআপ আর্টিস্ট হয়েও বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করার সুযোগ পায় না। বিতাড়িত হতে হতে হয়ে পড়ে কোণঠাসা। পাড়ার নাটকের দল আর বিয়ের কনের মেকআপ করে সন্তুষ্ট হতে হয় তাকে। ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির প্রতি জমা হয় ক্ষোভ। স্বপ্ন দেখে ইতালীয় রেনেসাঁ যুগের লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির মতো সে-ও আঁকবে মোনালিসা। প্রেমিকা তার মোনালিসার মডেল। ঠিক এ রকম এক অবস্থায় আদি বোস খুঁজে বের করে ভিঞ্চিদাকে। প্রস্তাব দেয় ফিল্মের জন্য প্রস্থেটিক মেকআপ করার। ভিঞ্চিদা খুশিতে ডগমগ। রাজি হতে দেরি হয় না তার। কিন্তু একি! একটা ফাঁদে জড়িয়ে পড়ে সে। একটার পর একটা ‘ক্রাইম’ সংঘটিত হতে থাকে। শুধু শিল্পী হয়ে বেঁচে থাকা আর সম্ভব নয়। ফেরার পথ নেই। চুরমার হয় তার সত্তা।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Bengali Cinema, #2019

আরো দেখুন