বুথ কমিটি নেই? সংগঠন মৃতপ্রায়, পঞ্চায়েতের প্রস্তুতিতে বেসামাল বঙ্গ BJP?
বছর ঘুরলেই বাংলায় পঞ্চায়েত ভোট, ইতিমধ্যেই ভোটের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে রাজনৈতিক দলগুলো। কিন্তু বিপদে পড়েছে গেরুয়া শিবির। দলের নিচু তলার কর্মীদের হদিশ পাওয়া যাচ্ছে না, কোথাও বুথ কমিটি তৈরি হচ্ছে না, পঞ্চায়েত ভোটের প্রস্তুতিতে খামতি দেখে বেজায় চোটেছেন বঙ্গ বিজেপির দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতারা।
বুথে বুথে গিয়ে দলের বিধায়ক, সাংসদদের জনসংযোগ গড়ে তোলার নিদান দিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। দিল্লির নেতাদের সাফ কথা, জনসংযোগ না বাড়ালে পঞ্চায়েত ভোটে ভাল ফল হবে না। শীর্ষ নেতাদের মত, বুথ কমিটি না থাকলে, প্রার্থী দেওয়াও সম্ভব হবে না। যত বেশি বুথে কমিটি থাকবে, তত বেশি মনোনয়ন দেওয়া যাবে। বঙ্গ বিজেপির অন্দরের খবর, পঞ্চায়েত ভোটে বাইক বাহিনী প্রস্তুত রাখার কৌশল নেওয়া হয়েছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতাদের বাছাই করা ২৪টি লোকসভা আসন ও তার অন্তর্গত বিধানসভাকেন্দ্রগুলিতে এখনও বুথ কমিটিই তৈরি হয়নি।
রবিবার কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক সুনীল বনসল বঙ্গ বিজেপির নেতাদের জানিয়ে দিয়েছেন, হচ্ছে না বলে অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপালে চলবে না। অজুহাত নয়। দুই দিনের বৈঠকে, আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটে দলের রণকৌশল চূড়ান্ত করে ফেলতে চাইছেন সুনীল। আগামী ১৫ দিনে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা বাংলায় আসবেন। বেছে নেওয়া লোকসভা কেন্দ্রগুলিতে রাত্রিবাস করবেন তারা। আরও জানা যাচ্ছে, ধর্মেন্দ্র প্রধান ও স্মৃতি ইরানিরা ২০২৪-এর লোকসভার আগে পর্যন্ত বাংলায় নিয়মিত আসবেন। এদিন বিজেপির একাংশের নেতারা সুনীল বনশলের কাছে অভিযোগ করেন, লোকসভার আহ্বায়করা দলের জেলা সভাপতিদের সঙ্গে সমন্বয় রেখে চলছেন না।
কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকরা বাংলার নেতাদের ভাল প্রার্থী খোঁজার নির্দেশ দিয়েছেন। স্বচ্ছ ভাবমূর্তি রয়েছে এমন প্রার্থী খোঁজার নিদান দেওয়া হয়েছে। দলের পঞ্চায়েত নির্বাচন কমিটির আহবায়ক জগন্নাথ সরকার জানান, তারা বুথ কমিটি এবং পরিচ্ছন্ন প্রার্থীর ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন। তবে এ রাজ্যের বিজেপি নেতাদের বক্তব্য, অধিকাংশ বুথে সংগঠন নেই। সেই কারণে গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে আদৌ কত আসনে প্রার্থী দেওয়া যাবে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। হেস্টিংস কার্যালয়ের বৈঠক থেকে দলের কোন্দল সামলে দলকে সংগঠিত করে এগোতে চাইছে বঙ্গ বিজেপি। একুশের বিধানসভা ভোটে স্বপ্ন ভঙ্গের পর থেকেই বঙ্গের গেরুয়া শিবির গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জর্জরিত। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা আর মোদী সরকারের ভরসায় ভোট বৈতরণী পেরোতে চাইছে বঙ্গ বিজেপি। কিন্তু বুথে সংগঠনের বাস্তবে যে অবস্থা তাতে জয় অধরাই থেকে যাবে, খাতায়-কলমে সংগঠন এসে ঠেকেছে। সুনীল বনসল, মঙ্গল পাণ্ডেরা একাধিক দাওয়াই দিচ্ছেন কিন্তু কাজ কতটা কি হচ্ছে, তা নিয়ে সকলেই সন্ধিহান।
অন্যদিকে, এই বৈঠকেও পিছু ছাড়ল না গোষ্ঠী কোন্দল। দিলীপ ঘোষ, লকেট চট্টোপাধ্যায়, দেবশ্রী চৌধুরী, সৌমিত্র খাঁ, জগন্নাথ সরকার, অমিতাভ চক্রবর্তী থাকলেও, রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ও বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বৈঠকে ছিলেন না। দ্বন্দ্বের কারণে রাজ্য বিজেপির সহসভাপতি রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়কে বৈঠকে আমন্ত্রণই করা হয়নি।